সূর্যের গন্তব্য destination of the Sun

সূর্যের পরিচয় আমাদের কাছে অবিধিত নয়। ঊষার অরুনীমায় দেখা দেয় আর গোধূলিতে বিদায় হয় আবার প্রভাতে ফিরে আসে, এমনি করে যার সাথে আমাদের জীবন কাটে,তাকে চেনেনা এমন কে আছে? বলতে গেলে এরই জন্য আমরা এই মাটির পৃথিবীতে জীবন পেয়েছি,সে আমাদের সকল শক্তির উৎস। যাকে বাদ দিয়ে একমুহুর্তের জীবনও আশা করা যায়ন। তাকে কেন চিনবনা। সেই যে আমাদের পরমাত্মীয়।

একসময় মানুষ তাকে দেবতা বলে পূঁজা করত। মনে করত অসূরীয় শক্তি বলে আলো ও উত্তাপ দিয়ে আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখছে। সম্ভবত স্রষ্টার শক্তিতে বলিয়ান মহাদেবতা। তার আলোর ছটায় দিনের বেলা আকাশের সকল তারা হারিয়ে যায় অন্ধকারে; কিন্তু রাতে যারা আকাশের বুকে ভেসে বেড়ায় মনে হয় তারা যেন সূর্যের কাছে নস্যি। সূর্যি মামাকে নিয়ে কত গল্পইনা মানুষ বেঁধেছে; কিন্তু তখন কি মানুষ জানতো যে,যাকে জেনেছে বহু যুগ-শতাব্দীর পরিক্রমায় বীর বিক্রম হিসেবে,-সেই বিক্রম আজকের যুগে পড়ে আছে মহাবিশ্বের এক নিভৃত কোণে নিতান্ত অবহেলিত হয়ে। নক্ষত্র রাজির মেলায় সূর্য প্রকৃতই অযোগ্য। এই মহাবিশ্বের চৌহদ্দিতে সূর্য তার পরিবার নিয়ে যেন এক গৃহকোণে কোণঠাসা হয়ে আছে। যা আছে তাই আমাদের কাছে গর্ব,কারণ এই অবহেলিত নক্ষত্রটিই যে আমাদের বেঁচে থাকার উছিলা।

প্রাচীনকাল থেকেই মহাবিশ্ব নিয়ে মানুষ নানা জল্পনা কল্পনা করে আসছে। তখন থেকেই মানুষের মনে পৃথিবী কেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থাই দানা বেঁধে আছে। খ্রীষ্টধর্মে ধর্মান্ধতার মহা সুযোগে এই চিন্তাধারা চলতে চলতে আমাদের পৃথিবী প্রায় দেড় হাজার বছর পার করে দিয়ে পৌঁছে গেল ষোল শতকের মাঝামাঝিতে। মানুষের চিন্তাধারা ক্রম বিবর্তন হতে লাগল,সন্দেহ যেন দোলা দিতে লাগলো। ঊষাকালে পূবাকাশে সূর্য উঠে সন্ধ্যায় অস্তাচলে যেতে দেখে তারা স্থির করল এই মহাবিশ্বের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই সূর্যই এক অনড় দেবতা, আকাশের বক্রতল প্রতিদিন তাকে নিয়ে একবার করে ঘুরে আসে,আর সারা আকাশ জুড়ে স্বর্গীয় প্রদীপমালা মিটি মিটি করে আলো ছড়ায়,এভাবেই দিন যায় আর রাত আসে। পুরাণো কথার মাঝে কেউ কেউ নতুন সুর তুলতে লাগল- টলেমীর পৃথিবীকেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়ে কোপার্নিকাস প্রস্তাব করলেন,পৃথিবী নয়,মহাদেবতা সূর্যই বিশ্বকেন্দ্রে সিংহাসনে আসিন হয়ে অমিয় ত্যজে রাজ্য শাসন করছেন। তিনি জ্যোতির্বিদ্যাকে নতুন করে পথ দেখালেন। সেই পথে হাটতে গিয়ে টাইকো ব্রাহের মনে সন্দেহ দেখা দিল,১৫৭২ সালে সিদ্ধান্ত দিলেন, আমাদের দৃষ্টিভূত এই চেনা মহাবিশ্ব সুন্দর করে সাজানো গুছানো নয়। মহাজাগতিক বস্তুগুলি পরস্পরের চারিদিকে ঘুরাগুরি করছে,সূর্যও ঘুরছে। কিন্তু জোহান্স কেপলার দোদল্যমান হয়ে পড়লেন। একদিন হঠাৎ করে সেই বৃদ্ধ পাগল বৈজ্ঞানিক গ্যালিলিও তার দূরবীণ নিয়ে হাজির হলেন বিশ্ব সমাজে। নতুন এই যন্ত্রটিতে চোখ রেখে অবাক বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন,বললেন এই মহাবিশ্বের কোন বস্তুই স্থির নহে। আমাদের পৃথিবী বিশ্ব সংসারে অতি ণগন্য বস্তু; অবশ্য এ কথার জন্যে তাকে অনেক যন্ত্রনা পোহাতে হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও তিনি মহাকাশের দ্বার খুলে দিলেন, ধীরে ধীরে পরিস্ফূটিত হতে লাগল কোরানের সেই মহা বাণী,

১৫:১৪,১৫‘যদি আমরা আসমানের কোন দরজা খুলিয়া ধরিতাম এবং তাহারা উহাতে আরোহণ করিত তাহা হইলে তাহারা বলিত,আমাদের চক্ষু বিভ্রান্ত হইয়াছে মোহাচ্ছন্নতায়। বরং আমরা সকলে যাদুগ্রস্ত হইয়াছি।’

তারপর বিজ্ঞানী নিউটন এসে সতের শতকের শেষের দিকে সমগ্র দোদুল্যমানতা কাটিয়ে পৃথিবীর মানুষকে জানালেন পৃথিবী ও সূর্য দুই ঘুরছে,তবে যার যার মত। আরো জানালেন তার পৃথিবী বিখ্যাত মহাকর্ষ সূত্র।

সময়ের পরিক্রমায় তৈরী হল হাবল টেলিস্কোপ, যেন আকাশের সব দরজাই খুলে গেল; মানুষ অবাক হয়ে দেখল মহাশূণ্যের সৌন্দর্যতা আর হিসেব করতে শুরু করল তার ব্যাপ্তি। মানুষ প্রকৃতই মোহগ্রস্ত হয়ে পড়ল, মহাকাশকে জানার জন্যে পাগল হয়ে উঠল। একটির পর একটি সত্য যেন মহাসত্য হয়ে ধরা পড়তে লাগল- আর পবিত্র কোরআন পাতা উল্টিয়ে উল্টিয়ে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেখিয়ে বলতে লাগলো,ওরে মূর্খের দল,আকাশের দিকে তাকাবার আগে এই কাগজের পাতা থেকে জেনে নে মহাবিশ্বের কোথায় কি আছে, কে কি করছে। কিন্তু মূর্খেরা তাকালনা,বুঝলনা সেই আকুল আহ্বান। তাকিয়ে রইল সেই কিছু ভাবুক মানুষের দিকে যারা যন্ত্রের মধ্যে চোখ রেখে তাকিয়ে আছে নীল সামীয়ানায় ঢাকা আকশের দিকে। গুমরে কাঁদল সেই মহাবাণী। বেরিয়ে আসতে লাগলো নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক তথ্য। মানুষ অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখল এতো সেই বাণী যা মুদ্রিত হয়ে আছে কোরআনের পাতায় দেড় হাজার বছর আগে।

যে যুগে আল কোরআনের এই শ্বাসত বাণী ধরাধামে অবতীর্ণ হল,তখন পৃথিবীর মানুষ ছিল বিভিন্ন ধর্মীয় অনুশাসনে সীমাবদ্ধ। জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা ছিল সীমিত। মহাকাশের পরিচিতি ছিল নিতান্তই অল্প। ঠিক সেই অন্ধ যুগে কোরআন মানুষকে জানিয়েছে মহাকাশের অনেক নিগূঢ় তথ্য। মানুষের শিক্ষা, ও জ্ঞান চর্চায় বিবর্তন তখনো সেই মাত্রায় পৌছায়নি বলেই তখনকার মানুষ আদৌ বুঝতেই পারেনি সুমধুর বাণীতে কোরআন কি বলে যাচ্ছে। আজকের উন্মুক্ত বিজ্ঞান মানুষকে পলে পলে কোরআনের বাণীকে বুঝতে সাহায্য করছে। দেড় হাজার বছর আগে কোরআন যখন সগৌরবে ঘোষনা করল যে,এই মহাবিশ্বে কোন কিছুই অনড় নয়। তখন বুঝলনা কেউ, আর যারা মহাবিশ্বকে নিয়ে মাথা ঘামাতে ছিল,তাদেরকে বুঝাতে পারলোনা কেউ। তাইতো বিস্ময়কর এই তথ্যগুলো বাণীবদ্ধ হয়ে রইল কোরআনের পাতায়। আমরা উপরের আলোচনায় দেখেছি কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার প্রায় ৯৫০ বছর পরে টাইকো ব্রাহের মনে পথম সন্দেহ দোলা দিল যে মহাকাশীয় বস্তুগুলি ঘুরছে। দেড় হাজার বছর পরে আজ আবার আমাদের মনে দোলা লাগছে দয়াময়ের এই মহাবাণী কি তখন কারও দ্বারা পঠিত হয়নি? নাকি আরবী ভাষাবাসীরা কোরআনের কথা বুঝতে পারেনি? হয়তো তাই, হয়তোবা ধরে নিয়েছিলেন,এগুলো ধর্মীয় বাণী, এগুলো নিয়ে চর্চা করলে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। হয়তোবা ভেবে নিয়ে ছিলেন,মানব কল্যাণের অনুকুলে নয়বলে মহাকাশচর্চা আল্লাহ্‌পাকের পছন্দনীয় নয়। সম্ভবত আজকের এই উন্মুক্ত যুগেও কোরআন চর্চাকারীদের মধ্যে সে চেষ্টা নিতান্তই অপ্রতুল।

তার পরেও চলে গেল দীর্ঘদিন, আমরা কোরআন অনুসারীরা প্রতিদিন প্রাতে ও সন্ধ্যায় বসে সুলতিত ভাষায় পড়লাম,

الشَّمْسُ وَالْقَمَرُ بِحُسْبَانٍ

৫৫:৫ ‘সূর্য ও চন্দ্র আবর্তন করে সুনির্ধারিত সময়ে স্বীয় কক্ষপথে।’

لَا الشَّمْسُ يَنبَغِي لَهَا أَن تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ

৩৬:৪০‘সুর্যের সাধ্যি নাই চন্দ্রকে নাগালে পায় রাত্রির সাধ্য নাই দিবসকে অতিক্রম  করে।’

وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ

৩৬:৩৮ সূর্য তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ভ্রমনে নিরত।

إِنَّ فِي اخْتِلاَفِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَمَا خَلَقَ اللّهُ فِي السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ لآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَّقُونَ

১০:৬‘নিশ্চই রাত দিনের পরিবর্তনের মাঝে এবং যা কিছু তিনি সৃষ্টি করিয়াছেন আসমান ও যমিনে, সবই হইল নিদর্শন সেসব লোকের জন্য যারা ভয় করে।’

خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ يُكَوِّرُ اللَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُسَمًّى أَلَا هُوَ الْعَزِيزُ الْغَفَّرُ

৩৯:৫ তিনি আসমান ও যমিন সৃষ্টি করিয়াছেন যথাযতভাবে,তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিযুক্ত করিয়াছেন,প্রত্যেকে বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত। তিনি পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল।- সূরা আজ জুমার

أَلَمْ تَرَوْا كَيْفَ خَلَقَ اللَّهُ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ طِبَاقًا

৭১:১৫ “তোমরা কি নিদর্শন প্রত্যক্ষ করনা যে আল্ল্‌হ্‌ কেমন করিয়া সপ্ত আকাশকে স্তরে স্তরে সৃষ্টি করিয়াছেন?”

কিন্তু বুঝলামনা,এতকাল ধরে কি পড়লাম! হয়তোবা অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে এসে বুঝলেন উইলিয়াম হার্শেল, তিনি শুধু স্বীকারই করলেননা,সূর্যের কক্ষপথও নিরূপন করতে সমর্থ হলেন। তিনি ছায়াপথে সূর্যের অবস্থান সম্পর্কেও অনেক তথ্য দিলেন। পরবর্তীতে বিজ্ঞান আরো উন্নত পরীক্ষা নীরিক্ষার সাহায্যে স্থির করলো ছায়াপথে সূর্যের অবস্থান; এটি আমাদের ছায়াপথের কেন্দ্র হতে প্রায় ৩০,০০০ আলোক বর্ষ দূরে অবস্থিত। আর এই অবস্থান থেকে প্রতি সেকেণ্ডে প্রায় ১৫৬ মাইল বেগে তার নির্দিষ্ট কক্ষ পথে ছায়াপথের কেন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করছে। সূর্যের এই কক্ষগতির ব্যাপারটা আরো একটু পরিস্কার হওয়া দরকার। আমরা পূর্বেই জেনেছি আজকের বিজ্ঞানের পরিক্ষালব্দ হিসেব নিকেষ অনুযায়ী ছায়াপথের আকৃতি প্রায় থালার মত। আর সকল ছায়া পথই নিজ নিজ কেন্দ্রের চারিদিকে ঠিক রেকর্ডের মত আবর্তন করছে। এইবার আমরা যদি থালাকৃতি ছায়াপথের বিভিন্ন স্থানে মহাজাগতিক বস্তু গুলিকে কল্পনা করি এবং আরো ভাবি যে সমগ্র বস্তুগুলি সমেত থালাটি তার কেন্দ্রের চারিদিকে ঘুরছে,তখন ব্যপারখানা কি দাঁড়ায়! অর্থাৎ বস্তুগুলিকে আপেক্ষিক ভাবে আর কক্ষপথে ছুটতে হচ্ছেনা। সকলেই যার যার অবস্থানে থেকে সম্মিলিতভাবে ছায়াপথের কেন্দ্রকে প্রদাক্ষন করছে ফলে প্রত্যেকটি মহাজাগতিক বস্তুর জন্যেই উৎপন্ন হচ্ছে একটা সুনির্দিষ্ট কক্ষপথ। তাতে একে অপরের সাথে ঠোকা ঠুকির সম্ভবনাও থাকছেনা। আরেকটা ব্যপার লক্ষনীয় যে, অবস্থান বেধে বিভিন্ন বস্তুর কক্ষগতিও বিভিন্ন হয়ে যাচ্ছে; যারা কল্পিত থালার কেন্দ্রের দিকে অবস্থিত তাদের বৃত্তাকার ঘূর্ণিপথের পরিধি হচ্ছে ছোট, ক্রমান্বয়ে থালার প্রান্তদেশের দিকে গেলে বিভিন্ন অবস্থানের বস্তুগুলোর বৃত্তাকার পরিক্রমন পথগুলির পরিধীও হচ্ছে ক্রমান্বয়ে বড়। আবার সকল বস্তু একত্রে একটা সুনির্দিষ্ট সময়ে ছায়পথের কেন্দ্রকে একবার করে প্রদক্ষিণ করে আসছে; ফলে তাদের কক্ষগতি হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন। তাহলে দেখা যাচ্ছে, যে বস্তুটি কেন্দ্রের কাছে অবস্থিত সে পরিক্রমন কালে কম পথ অতিক্রম করছে ফলে তার গতি হচ্ছে কম,তদণুযায়ী পরবর্তী বস্তুর গতি হচ্ছে পূর্বেরটির চেয়ে বেশী। পরিস্কার হয়ে গেল কেন্দ্র থেকে যে যত দূরে অবস্থিত তার কক্ষপথের দৈর্ঘ ও পরিক্রমন গতি তত বেশী। এখানে আরেকটা বিষয় প্রণিধানযোগ্য যে কক্ষগতির পাশাপাশি প্রত্যেকটা গ্রহ নক্ষত্রের অক্ষগতিও রয়েছে,অর্থাৎ সামগ্রিক ভাবে কক্ষপথে পরিভ্রমনের পাশাপাশি তারা তাদের নিজেদের অক্ষকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত ঘুরছে এবং প্রত্যেকেই যার যার সুনির্দিষ্ট সময়ে তার নিজের কেন্দ্রের চারিদিকে একবার করে ঘুরে আসছে।এমনি হিসাবে ছায়াপথের কেন্দ্র থেকে প্রান্ত অবদি দূরত্বের মধ্যে সূর্য তার অবস্থানে থেকে প্রাপ্ত কক্ষগতি প্রতি সেকেণ্ডে প্রায় ১৫৬ মাইল। এই গতিতে সূর্য তার কক্ষপথে ছায়াপথের কেন্দ্রকে একবার প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে প্রায় ২৫ কোটি বছর। ভাবুনতো একবার  সূর্যের কক্ষপথটির দৈর্ঘ কত তাছাড়া প্রান্তীয় বস্তুদের গতিই বা কত?

এপর্যন্ত আলোচনায় আমরা বুঝতে পারলাম যে, এই মহাবিশ্বের অসীম কন্দরে আমাদের সূর্য নূন্যতম দুটি গতিতে গতিশীল যা প্রত্যেকটি মহাজাগতিক বস্তুরই রয়েছে। এছাড়াও আজকের বিজ্ঞান সূর্যের আরেকটা গতি আবিস্কার করেছে তা হল ছায়াপথের কেন্দ্র মুখী গতি। বহু পরীক্ষা নীরিক্ষায় দেখা গেছে সূর্য তার কক্ষপথে উপরুক্ত গতিতে চলতে চলতে যেন কোন অজানা টানে প্রতি মুহুর্তে একটু একটু করে ঝুকে পড়ছে ছায়াপথের কেন্দ্রের দিকে-অর্থৎ প্রতি মুহুর্তে ছায়াপথের কেন্দ্রের দিকে তার একটা নির্দিষ্ট পরিমান বিচ্যুতি ঘটছে। এই বিচ্যুতির গতি প্রতি সেকেণ্ডে প্রায় ২০ কিঃ মিঃ।

Capture

Location of the Sun in the Milky Way, Miracles of the Quran

তাহলে দেখা গেল প্রতি সেকেণ্ডে ১৫৬ মাইল বেগে ঘূর্ণন রত অঅবস্থায়  সেকেণ্ডে ২০ কিঃ মিঃ করে কেন্দ্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এই কক্ষবিচ্যুতি তাকে প্রতিনিয়ত একটা নিদিষ্ট লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে আর সেই লক্ষ্যই হল তার অন্তিম পরিণতি। বিজ্ঞানীরা সূর্যের সেই অন্তিম পরিণতি স্থানের নাম দিয়েছেন সোলার এপেক্স। সোলার এপেক্স হল সেই স্থান যেখানে নক্ষত্ররা শেষ নিবাসের জন্যে গমন করে। সহজভাবে বলা যায় এটি হল ছায়াপথে পরিভ্রন করতে করতে সূর্যের গন্তব্য লক্ষ। সোলার এপেক্সের অবস্থান হল কেনস্টেলেশন অব হারকিউলস (আলফালাইরী) এর কাছাকাছি ভেগা নামক নক্ষতের দক্ষিণ পশ্চিমে,যেখানে রয়েছে শূণ্য আয়তনের এক অতি দানব কৃষ্ণগহ্বর। সূর্যের কক্ষ গতিও আবার সরল প্রকৃতির নয়, ছায়াপথের তলে উপরে নীচে দুলতে দুলতে চলে তার পরিক্রমন। তার এই গতি বিধি ইইলিয়াম

Capture2

হার্শেল ১৭৮৩ র্খষ্টব্দে সর্বপ্রথম লক্ষ্যকরেন। কৃষ্ণগহ্বরকে কোন যন্ত্র চোখেও দেখা যায়না,শুধুমাত্র তার কার্যকারিতা বুঝা যায় তখন, যখন নক্ষত্ররা ঘুরতে ঘুরতে কুষ্ণগহ্বরে অন্তিম পরিনতিতে নিপতিত হয়। সময়ের পরিক্রমায় একদিন অন্যান্ন নক্ষত্রের মত আমাদের সূর্যও ছায়াপথের কেন্দ্রের চারিদিকে অতিদ্রুত ঘুরতে ঘুরতে চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে ছায়াপথের কেন্দ্রস্থিত সেই কৃষ্ণগহ্বরের ক্ষুদার্ত থাবায় পড়ে হারিয়ে যাবে চিরতরে। আর এই হল সূর্যের শেষ পরিনতি বা অন্তিম স্থান বা বিশ্রামাঘার। এখানেই শেষ নয় লক্ষ্যের দিকে চলতে চলতে বিবর্তনের ধারায় সূর্যের দেহ কলেবরেও পরিবর্তন আসবে। অর্থাৎ চলতিপথে আলো ও শক্তি বিকিরণ করতে করতে তার জ্বালানীতে ঘাটতি পড়বে। জ্যোতিপদার্থ বিজ্ঞানী

Capture3

গণের বিশুদ্ধ হিসাব থেকে জানা  যায় যে বর্তমান থেকে প্রায় ৫০০ কোটি বছর পরে সূর্য তার অভ্যন্তরস্ত সকল হাইড্রোজেন জ্বালানী শেষ করে নিজে একটি লাল দানবে পরিনত হবে। সাধারনতঃ এই লাল দানবে পরিনত হওয়ার মধ্য দিয়ে একটা নক্ষত্রের স্বাভাবিক জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। তারপর শুরু হয় ধ্বংস প্রক্রিয়া;এ পর্যায়ে তার জ্বালানী প্রায় শেষ হয়ে আসে- অর্থাৎ সমগ্র হাইড্রোজেন প্রক্রিয়াজাত হয়ে ভারী মৌলে রূপন্তরিত হয়ে যায় ফলে শুরু হয় মধ্যাকর্ষণ বলের টান;ফলে সূর্যের কেন্দ্রটি রূপান্তরিত হবে অতিঘণ ক্ষুদ্রাকৃতি এক শীতল ও অনুজ্জ্বল সাদা বামনে। এই সুন্দর মহাবিশ্বে তখন তার আর স্থান হবেনা। বিলয়ের যবনিকায় হারিয়ে যাবে অন্ধকুপে। এই হল বৈজ্ঞানিক মতে সূর্য়ের শেষ পরিণতি। আর এই বিষয়টুকু পরিস্কার করে জেনে নিতে সময় লেগেছে যীশুখৃষের জন্মের পরেও প্রায় দুই হাজার বছর। অথচ পবিত্র কোরআন আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগেই এই মহাসত্যের ঘোষনা দিয়েছে এক অর্বাচীন মরুচারীর মুখ দিয়ে।  সূরা ইয়াসীনে আল্লাহ্‌পাক বলেন,

وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ

And the sun runs to a resting place for it.সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানের আবর্তন করে;এটা পরাক্রমশালী মহাজ্ঞানীর সর্বজ্ঞ আল্লাহ্‌র নিয়ন্ত্রন। -প্রচলিত তরজমা।

৩৬:৩৮‘সূর্য তার নির্ধারিত গন্তব্যের উদ্যেশ্যে গমনে নিরত।ইহা মহাপরাক্রমশালী মহাজ্ঞানীর সুনির্ধারিত ব্যাবস্থা।’ কাজী জাহান মিয়া কর্তৃক গৃহিত।   সূরা রাদ আয়াত (১৩:২)

اللّهُ الَّذِي رَفَعَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لأَجَلٍ مُّسَمًّى يُدَبِّرُ الأَمْرَ يُفَصِّلُ الآيَاتِ لَعَلَّكُم بِلِقَاء رَبِّكُمْ تُوقِنُونَ

প্রচলিত তরজমায় ব্যবহৃত لِمُسْتَقَرٍّ শব্দটির অর্থ করা হয়েছে ,বিশ্রামাঘার, নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে, নির্ধারিত গন্তব্য ইত্যাদি। আবার শব্দটির আভিধানিক অর্থ নিযুক্তি,আবাসস্থল,বিশ্রামের জায়গা, শেষ গন্তব্য ইত্যাদি। এই গন্তব্য কি বা কোথায়, তার বিশদ ব্যাখ্যা না থাকলেও লক্ষ্য যে তার একটা আছে তা পরিস্কার। এই সূত্রে চলুন আরবী ব্যাকরণে খুঁজে দেখি উপরুক্ত শব্দটির আর কি কি অর্থ থাকতে পারে?

শব্দটির অবস্থান গত অনুবাদ হচ্ছে নিযুক্ত হওয়া। বূৎপত্তি অনুযায়ী গাঠনিক দিক থেকে শব্দটিকে দুইটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম অংশে  লাম অব্যয়টি ঊপসর্গরূপে ব্যবহৃত হয়েছে। দ্বিতীয় অংশটি একটি  passive participle.নিঃষ্ক্রিয় ক্রিয়া বিষেশন। অর্থাৎ ক্রিয়া বিশেষণটি passive form এ  বসেছে। যেমন সূর্যকে নিযুক্ত করা হয়েছে ভ্রমনে। আবার লাম অব্যয়টির সাধারন অনুবাদ হল ‘জন্য’। ইহা  পুং জাতীয় অনির্ধারিত সম্মন্ধ পদ । নিস্ক্রিয় ক্রিয়া-বিশেষণটি তিন আক্ষরিক ক্রিয়ামূল থেকে উৎপন্ন।  অক্ষর তিনটি হল কাফ্‌ রা রা  (ق ر ر ) ; এই ক্রিয়া মূলটি কোরআনের বিভিন্ন যায়গায় বিভিন্ন শব্দ গঠনে ব্যাবহৃত হয়েছে, তন্মধ্যে –

আয়াত ১৪:২৯:৪ place to settle নিঃস্পত্তির স্থান الْقَرَارُ

২৩:১৩:৫ a resting place  সংরক্ষিত জায়গা,বিশ্রামের স্থান قَرَارٍ

৩০:৬০:১১ the settlement   আবাস স’ল(মৃত্যুর পর)   الْقَرَارُ

৭৭:২১:৩ an abode    বাসস্থান   مُسْتَقَرّ

২:৩৬:১৬ a dwelling place আবাস স’ল مُسْتَقَرٌّ ।

৬:৬৭:৩  a fixed time   নির্ধারিত সময়  مُسْتَقَرٌّ ।

ر ر ق দ্বারা সংঘটিত উপরে ব্যাবহৃত শব্দ কয়টির একটি ছাড়া প্রত্যেকটির অনুবাদেই দেখা যাচ্ছে আবাস স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে এবং প্রত্যেক ক্ষেত্রেই একটা পরিনতিকে নির্দেশ করেছে। অর্থাৎ চিরস্থায়ী আবাসের কথা বলা হয়েছে যা বিলয় সংশ্লিষ্ট। অতএব আমরা ধরে নিতে পারি আমাদের আলোচিত আয়াতে অর্থাৎ ৩৬:৩৮ ব্যবহৃত শব্দلِمُسْتَقَرّ সূর্যের বেলাও একই অর্থ বহন করে। তাহলে আয়াতের যে ভাব পরিস্ফুট হয়ে উঠে তা হতে পারে সূর্য ভ্রমনে নিরত সেই গন্তব্যে যেখানে তার শেষ পরিনতি বা বিলয় ঘটবে। এখানে আরেকটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য যে, নীচের ১৩:২ আয়াতে ব্যবহৃত শব্দمُّسَمًّى মুসাম্মান শব্দটির বঙ্গানুবাদ হল ‘নিযুক্তি’(appointed)। শব্দটি একটি ক্রিয়া বিশেষ্য, কিন্তু অবস্থানগত কারণে ইহা একটি  passive participle বা পুং জাতীয় নিঃষ্ক্রিয় ক্রিয়া বিষেশণে রূপান্তরিত হয়েছে। অর্থাৎ ক্রিয়া বিশেষনটি passive form এ  বসেছে। যেমন তিঁনি চন্দ্র ও সূর্যকে করিয়াছেন নিয়মাধীন প্রত্যেকেই একটি ব্যপ্তিকাল নিয়োজি অর্থাৎ চন্দ্র সূর্য নির্দিষ্ট কাজে নিযুক্তি লাভ করেছে এবং তাদের কাজটিও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নির্দারিত। ৩৬:৩৮ আয়াতে ব্যবহৃত لِمُسْتَقَرّ শব্দটি লক্ষ্য করুণ সেখানেও একই একই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অবস্থানগত কারণে সেটিও passive participle,কিন্তু উৎপত্তি অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত তার মর্মার্থ দাঁড়িয়েছে শেষ গন্তব্য বা বিশ্রামাঘার। আর مُّسَمًّى শব্দটি ব্যকরণের দিক থেকে একই অবস্থানে থেকেও মর্মার্থে একটি সাধারণ বিশেষ্য বা নামপদ যার অর্থ নিযুক্তি।

لَا الشَّمْسُ يَنبَغِي لَهَا أَن تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ

৩৬:৪০ সূর্য নাগাল পেতে পারেনা চন্দ্রের এবং রাত্রি অগ্রে চলেনা দিনের,প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষ পথে সন্তরণ করে।    -সূরা ইয়াসিন

36:40] “It is not fit and proper for the sun to overtake the moon nor the nighttime one to take the lead over the daytime. They each swim in an orbit.”

আল কোরআন শুধুমাত্র সূর্যের গন্তব্যের কথা বলেই ক্ষান্ত হয়নি তার জীবন চক্রকেও সুনির্দিَ করে দিয়েছে,বলছে,

اللّهُ الَّذِي رَفَعَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لأَجَلٍ مُّسَمًّى يُدَبِّرُ الأَمْرَ يُفَصِّلُ الآيَاتِ لَعَلَّكُم بِلِقَاء رَبِّكُمْ تُوقِنُونَ

১৩:২ দেখ,তিনিই আল্লাহ্‌, যিনি স্থাপন করেছেন আকাশ মণ্ডলী স্তম্ব ব্যতিত,অতঃপর তিনি আরশের উপড় অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি চন্দ্র ও সূর্যকে নিয়োজিত করেছেন নির্দিষ্ট ব্যপ্তিকালের জন্য;তিনি সকল বিষয় পরিচালনা করেন যাতে তোমরা স্বীয় পালন কর্তার সাথে সাক্ষাৎ সম্মন্ধে বিশ্বাসী হও।

সূধী পাঠক,এই যে বলা হল,প্রত্যেকেই একটি ব্যাপ্তিকাল পর্যন্ত নিয়োজিত। ৩৬:৪০ এ বলা হচ্ছে আপন কক্ষপথে সঞ্চরণশীল। তাহলে দু’টি আয়াতের যে মর্মার্থ দাঁড়াল তা হল একটি নির্দিষ্ট ব্যপ্তিকালের জন্য চন্দ্র সূর্য আপন আপন কক্ষপথে সঞ্চরণশীল। সেই সঙ্গে ৩৬:৩৮ আরও বলছে, সূর্য তার শেষ গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই বর্ণনা গুলি যে কতবড় বৈজ্ঞানীক তথ্য তা মানুষ জানতে পেল এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে। সপ্তদশ শতাব্দীতে এসে মানুষ জানতে পেরেছে,মহাজাগতিক সকল বস্তুই সঞ্চরণশীল কিন্তু তাদেরও যে ব্যপ্তিকাল সুনির্দিষ্ট,তাও দিনে দিনে মানুষের কাছে পরিস্কার হয়ে উঠছে। শুধু তাই নয়,সূর্যের মত আমাদের মাতৃ ছায়াপথেরও গন্তব্য সুনির্দিষ হয়ে আছে। নাসা জানাচ্ছে ‘ ÔNASA’s Hubble Shows Milky Way is Destined for Head-On Collision.’ ১.৫.২০১২ তারিখে নাসার বিজ্ঞানীগণ নিশ্চিত  হয়ে জানিয়েছন, সৃষ্টিগত ভাবেই পরবর্তী মহাজাগতিক ঘটনায় আমাদের মিল্কিওয়ে আক্রান্ত হবে এবং সেই সঙ্গে সূর্য ও সৌরমণ্ডল ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তারা বলছেন,মিল্কিওয়ে তার প্রতিবেশী এন্ড্রোমিডার সাথে এক দানবীয় সংঘর্ষে মুখোমুখি হবে। মিল্কিওয়ে ও এন্ড্রোমিডার মুখোমুখি ঐ সংঘর্ষে একটা বড় ধরনের রদবদল পূর্ব থেকেই নির্ধারিত হয়ে আছে । ধারণা করা হচ্ছে যে এখন থেকে প্রায় চার কোটি বছর পরে এ সংঘর্ষ ঘটবে। সূর্য সম্ভবত নিক্ষিপ্ত আমাদের আমাদের ছায়াপথের অন্যকোন স্থানে গিয়ে পড়বে। তবে এই ধ্বংসযজ্ঞে পৃথিবী ও অন্যান্ন গ্রহ গুলি অক্ষত থেকে যাবে। এই ঘটনা থেকে  ইহাই বুঝা যায় যে এটা আমাদের ছায়াপথ ও এন্ড্রোমিডার একটা পূর্ব নির্ধারিত একত্রিকরন ক্রিয়া। বাল্টিমোরে অবস্থিত মহাশূণ্য দূরবীণ বিজ্ঞান শিক্ষাকেন্দ্র জানাছে যে তাদের পর্যবেক্ষন লব্দ তথ্যাবলী দুই ছায়াপথের মুখোমুখি সংঘর্ষের ব্যাপারে পরিসংখ্যানের লব্দ ফলাফলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। M31 নামে খ্যাত এন্ড্রোমিডা ছায়াপথের গতিবিধির উপর নাসা হাবল টেলিস্কোপের মাপজোপ থেকে যে সমাধান বেড়িয়ে এসেছে তা হল এই যে, ঐ ছায়াপথটি এখনো ২.৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে কিন্তু ইহা উভয়ের মিলিত মহাকষীয় টানে এবং তাদের চতুস্পার্শীয় অদৃশ্য কৃষ্ণপদার্থের দরুণ এই পরিণতির দিকে এগুচ্ছে। সোলার এপেক্সের বিপরীত দিকে সোলার এন্টাপেক্স অবস্থিত। এটি Zeta Canis Minoris (সূত্র – ইন্টারনেট)।

উপরের আয়াতাংশে কালের ব্যাপ্তি বুঝানো হয়েছে আর তা বুঝাতে لأَجَلٍ শব্দটি  ব্যবহার করা হয়েছে। শব্দটি বুৎপত্তিগত বিবেচনায় দেখা যায় যে أَجَلٍ  নামপদটির পূর্বে ل অব্যয় যোগে উপরুক্ত ‘লিআজলিন’ শব্দ তৈরী হয়েছে; أَجَلٍ  শব্দ একটি পুরুষ বাচক অর্নিষ্ট নামপদ,অনুবাদ হচ্ছে সময়কাল। এই ل  অব্যয় যোগে অর্থ দাড়িঁয়েছে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অর্থৎ একটা নিদিষ্ট ব্যপ্তি বা আয়ুস্কাল। أَجَلٍ পদটি পবিত্র কোরআনে বহু যায়গায় ব্যবহৃত হয়েছে। সকল ক্ষেত্রেই অনুরূপ অর্থ প্রকাশ করেছে। ফলে এটা পরিস্কার যে সৃষ্টি কর্তা পত্যেকটি মহাজাগতিক বস্তুকেই নির্দিষ্ট কালের জন্য পরিভ্রমনে ব্যপৃত করেছেন, তাহলে কিছু প্রশ্ন জাগে যে,তার এই নির্দিষ্ট কাল অতিবাহিত হওয়ার পর কি হবে? তা হলে কি কালান্তরে একে একে প্রত্যেকের গতি থেমে যাবে? আর যদি থেমে যায় তাহলে কি হবে? সত্যি খুব জটীল প্রশ্ন! এই প্রশ্নগুলির অন্তরালে যে সম্ভাব্য ধারনাটা লুকিয়ে আছে তা হল,ঐ পরিভ্রমন কালীণ নির্দিষ্ট সময়টুকুই যার যার জীবন আয়ু। তাহলে যুক্তির খাতিরে এ কথা মেনে নিতেই হয় যে, এই আজলিন শব্দটি দ্ধারা নির্দিষ্ট কাল বলতে মহাজাগতিক বস্তুদের আয়ুষ্কালকেই বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ সৃষ্টিতে যাহাকিছু আছে প্রত্যেকেই তার নির্ধারিত আয়ুষ্কাল পর্যন্ত জীবনচক্রে ব্যস্ত; তাছাড়া এখানে জীবজগতের দিকে লক্ষ করলেও দেখা যায় প্রত্যেকটি প্রাণের আয়ুস্কাল নির্দিষ্ট। তাছাড়া কোরআনের অনেক জায়গায় বলা হয়েছে,সেই মহা স্বত্তা ব্যতিত সকলকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করিতে হইবে অর্থৎ এ কথা পরিস্কার যে,‘সৃষ্টিতে যাহাকিছু আছে প্রত্যেকেই সময়ের সীমিত গণ্ডিতে যার যার পথে চলনরত।

তাহলে দেখা যাচ্ছে, দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ লব্দ অনুসসন্ধানে আজকের বিজ্ঞান সূর্যের যে গন্তব্য খুঁজে পেয়েছে তা পবিত্র কোরআনেরই নির্দেশিত স্থান বা  مُسْتَقَرّ

আমরা উপরে নাসার বিবরণী থেকে আরও জেনেছি যে, মহাকালের এক সময়ে আমাদের ছায়াপথ তার প্রতীবেশীর সাথে মূখোমুখি সংঘর্ষে পতিত হবে,তাতে কি হবে তার আনুমানিক বিবরণ তারা পেশ করলেও প্রকৃত পক্ষে কি ঘটতে পারে বা ঘটবে তা এ মহাসৃষ্টির স্রষ্টাই বলতে পারবেন ভাল। তবে সংঘর্ষের ফলে যে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে তাতে কিছু গ্রহ নক্ষত্রের বিলয়ের সম্ভাবনাই বেশী। তাছাড়াও আমরা জেনেছি ছায়াপথগুলি দ্রুত গতিতে অজানার পথে ধাবিত হচ্ছে এবং তা প্রতি মুহুর্তে তরান্বিত গতিতে ধাবিত হচ্ছে। তারা এখনো আমাদের যান্ত্রিক দৃষ্টিসীমার মধ্যে থাকলেও কালের পরিক্রমায় তাদের গতি যখন আলোর গতির সমান বা বেশী হয়ে যাবে তখন তারা আমাদের দৃষ্টি থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে,কিন্ত তাদের এই চলন কোথায় গিয়ে শেষ হবে? হয়তবা কোন মহা কৃষ্ণগহ্বরের খোলা মুখে গিয়ে পড়বে। হয়তবা ওটাই হবে তাদের শেষ নিবাস।

সম্ভবত এই লক্ষেই মহাবিক্রম স্রষ্টা সূরা কাসাসে বলেছেন,

وَلَا تَدْعُ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ إِلَّا وَجْهَهُ لَهُ الْحُكْمُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ

And do not invoke with Allah another deity. There is no deity except Him. Everything will be destroyed except His Face. His is the judgement, and to Him you will be returned.

২৮:৮৮‘আপনি আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে আহ্বাণ করিবেননা,তিনি ব্যতিত অন্য কোন উপাস্য নেই। আল্লাহর স্বত্তা ব্যতীত সকল কিছুই ধ্বংসশীল। বিধান তাঁহারই, তাহারই কাছে প্রত্যাবর্তীত হইবে।’

أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي إِلَى أَجَلٍ مُّسَمًّى وَأَنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ

৩১:২৯ তুমি কি দেখনা যে, আল্লাহ্‌ রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করান আর দিবসকে রাত্রিতে। তিঁনি চন্দ্র ও সূর্য প্রত্যেককেপ নিয়োজিত করেছেন পরিভ্রমনে এবং নির্ধারিত করে দিয়েছেন সময় (ভ্রমনকাল),তুমি কি আরও দেখনা যে, তোমরা যা কর আল্লাহ্‌ তার খবর রাখেন।

উপরিউক্ত আয়াতে مُسْتَقَرٌّ শব্দেরর পরিবর্তে مُّسَمًّى  শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। মুসাম্মান শব্দটির বঙ্গানুবাদ হল ‘নিযুক্তি’ (appointed)। يَجْرِي  শব্দটির অর্থ ঘূর্ণন বা পরিভ্রমন,আর أَجَلٍ শব্দটির অর্থ হল সময়ের পরিসর বা a term.শব্দটি একটি অনির্দিষ্ট নাম পদ, কারণ এর পূবে নির্দিষ্ট করণ অব্যয় ل  ব্যবহৃত হয়নি। তাহলে ধরে নেওয়া যায় ‘চন্দ্র ও সূর্য’ পরিভ্রমনে নিরত এবং পরিভ্রমন কাল বা পর্যায় যার যার মত। অবস্থাদৃষ্টে বলা যেতে পারে এই আয়াতটি চন্দ্র-সূর্যের অক্ষ ও কক্ষ গতির ইঙ্গিত বহন করছে।(আল্লাহ্‌ই জানেন ভাল)।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান