কৃষ্ণশক্তি ও কৃষ্ণপদার্থ Dark energy & Dark Matter

১৯৯০ সালের প্রথম দিকে বিজ্ঞান স্থির ভাবে নিশ্চিত হল যে মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে-অর্থাৎ সৃষ্টি থেকে এ পর্যন্ত মহাবিশ্ব দেহকলেবরে বৃদ্ধি পেয়ে বিরাট সাম্রাজ্যের অধিকারী হয়েছে। এই সম্প্রসারন পরিক্ষীতভাবে প্রমাণিত হলেও বিজ্ঞানীরা কিন্তু পড়ে গেলেন মহা ফাপরে; কারণ,এই সম্প্রসারনের জন্যে নিশ্চই প্রচুর শক্তি ঘনত্বের দরকার; বিজ্ঞানীরা এই সত্যকে যখন আর অস্বীকার করতে পারলোনা তখন তাদের সামনে প্রশ্ন এসে দাঁড়াল;মহাবিশ্ব এই শক্তি পাচ্ছে কোথায়? কেউ কেউ সমাধান দিলেন,বিগ ব্যাঙ বা মহাবিস্ফোরণ থেকে প্রাপ্ত শক্তিতেই এই সম্প্রসারন প্রক্রিয়া চলছে। এতেও দেখাদিল বিপত্তি; হিসেব কষে দেখাগেল বিগ ব্যাঙ থেকে প্রাপ্ত শক্তি মহাবিশ্বকে এতটা এগিয়ে নিতে পারেনা কারণ মহাজাগতীক বস্তুনিলয়ের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে এক দানবিক আকর্ষণ যা প্রাপ্ত সম্প্রসারণ গতিকে মন্দীভূত করে। বিজ্ঞান নিঃশর্তে স্বীকার করলো মহাবিশ্বের বস্তুনিলয়ের মধ্যে সৃষ্ট মহাকর্ষ তাদের গতিকে অবশ্যই মন্দীভূত করছে। সময়ের সাথে সাথে গতি মন্থর হতে হতে এক সময় সবকিছু স্থির হয়ে যাওয়ার কথা। তাত্বিকভাবে সকলেরই এ বিশ্বাস। কিন্তু বাস্তব পর্যবেক্ষণে তা দেখা যায়না, বরং সময়ের ব্যবধানে তা ত্বরাণ্বিত হয়ে চলছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সকল বস্তুকে পিছন দিক থেকে কেউ যেন ঠেলে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। সারা বিশ্বে বিরাজমান বস্তুনিলয় প্রচণ্ড শক্তিতে একে অপরকে টানছে,কিন্তু  গতি এতটুকু কমছেনা। বিজ্ঞান পড়ে গেল মহা সমস্যায়; কিভাবে এর সমাধান করবে? ১৯৯৮ সালে হাবল স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যামে বহু দূরবর্তী সুপারনোভার  নিবির পর্যবেক্ষণ থেকে জানা গেল যে,মহাবিশ্ব পূর্বের তুলনায় বর্তমানে অধিকতর গতিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে-সুতরাং সকলের অনুমান সত্যেও মহাকর্ষী টানে সম্প্রসারনের গতি মোটেই কমছেনা বরং ত্বরাণ্বিত হচ্ছে। অথচ কেহই এটা আশা করেনি। নিশ্চই এর পিছনে কোন কারণ রয়েছে। বিজ্ঞানীগন এর বিভিন্ন কারণ তুলে ধরলেন। সম্ভবত কোন অজানা, প্রাকৃতিক শক্তির প্রবাহ মহাশূণ্যকে পূর্ণ করে রেখেছে,আর এই অজানা শক্তিকে কৃষ্ণশক্তি নামে আখ্যায়িত করা হল,অথবা আইষ্টাইনের মহাকর্ষীয় তত্ত্বে কোন ভ্রান্তি রয়েছে এবং সেখানে সংস্কার দরকার এই ভাবে যে কোন এক মহাজাগতিক প্রভাব এই সৃষ্টিগত ত্বরণ তৈরী করছে। বিজ্ঞানীরা আজও জানেনা এই কৃষ্ণশক্তির সঠিক ব্যাখ্যা কি,তবে তারা এই অচেনা শক্তিকে কৃষ্ণশক্তি নামে আখ্যায়িত করে চলেছেন। জন্ম থেকে আমাদের মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হয়ে চলছে। বয়স পরিক্রমায় এ পর্যন্ত প্রায় ১৪.৭ শত কোটি বৎসর অতিক্রম করে আজকের অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। সময়ের সাথে সম্প্রসারনে লেখচিত্র আকলে দেখাযাবে  যে লেখ রেখাটি বক্রতার রূপ নিচ্ছে এবং তা ৭.৫ কোটি বছরের দিকে এসে যথেষ্ট পরিমান বেঁকে যাচ্ছে অর্থাৎ তখন থেকে মহাবিশ্ব দ্রুত থেকে দ্রুততার সাথে সম্প্রসারিত হচ্ছে। এমতাবস্তায় জ্যোতিবিজ্ঞানীরা স্থির করলেন যে,মহাবিশ্বে এক রহস্যময় শক্তি নিরন্তর ছায়াপথ গুলিকে দ্রুতগতিতে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। এ ব্যপারে আমরা যা জানি তার চেয়ে বেশী অজানা রয়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন কি পরিমান কৃষ্ণশক্তি আছে কারণ তারা জানে এই শক্তি মহাবিশ্বের সম্প্রসারণে কি ভাবে ক্রিয়া করে যাচ্ছে। ইহা যদিও রহস্যে ঢাকা তথাপি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কৃষ্ণ শক্তির উপস্থিতির প্রাচুর্যতায় ধরে নেওয়া হয় যে  মহাবিশ্বের প্রায় ৭০ শতাংশই কৃষ্ণ শক্তি আর ২৫ সতাংশ কৃষ্ণ পদার্থ। এই মহাবিশ্বের যাবতীয় দৃশ্য বস্তু যা আমরা এযাবৎকাল খালি চোখে এবং যন্ত্রের সাহায্যে পর্যবেক্ষণ করেছি তা এই মহাবিশ্বের পাঁচ শতাংশেরও কম।-সূত্র ইন্টার্নেট

বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী ষ্টিফেন হকিন্স স্রষ্টর অস্তিত্বকে বাদ দিতে চেয়েছেন এই রসিকতা করে যে,স্রষ্টারতো হাত নেই যে, তিনি মহাবিশ্ব তৈরী করবেন! তিনি বলেছেন বিজ্ঞানের নিয়ম নীতিই ব্যাখ্যা করতে পারে যে,এই মহাবিশ্ব একেবারে শূণ্য থেকে নিজে নিজেই সৃষ্টি হয়েছে। ২০১১ এর এপ্রিল মাসে তিনি  Discovery Channel এর এক সাক্ষাৎকারে  ‘স্রষ্টা আছেন কিনা ’ এমন প্রশ্নের জবাবে প্রস্তাব করেন যে,একেবারে শূণ্য থেকেই এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে। কারণ বিজ্ঞানের নীতি নিয়মেই তা আপনা থেকে তৈরী হতে পারে। হকিন্স সাহেব ‘টাইম ট্রাভেল,সমান্তরাল মহাবিশ্ব সমুহ, ব্লাকহোল’ ইত্যাদি নিয়ে প্রচুর গবেষণা করেছেন,সেই প্রেক্ষিতে তিনি বলেন,মহা বিশ্ব সৃষ্টিতে স্রষ্টার কোন ভূমিকা ছিলনা। অধুনা তার লিখা ÔGrand DesignÕ বইয়ে লিখেছেন মহাবিশ্ব স্বতস্ফূর্ত সৃষ্টি। তার প্রমান স্বরূপ তিনি বলেছেন,যে,পরীক্ষায় দেখাগেছে যে, পররমাণু গঠণকারীমৌলিক কণা শূণ্য থেকেই সৃষ্টি হতে পারে। আর এ ভাবেই বিগব্যাঙের মাধ্যামে পরমাণুর চেয়ে ক্ষুদ্র মহাবিশের জন্ম হয়েছিল। এবং তা ঘটেছিল প্রকৃতির নিয়ম কাণুনের মধ্যেই। বিজ্ঞানের নিয়ম নীতিই ব্যাখ্যা করতে পারে যে, একেবারে শূণ্যতা থেকেই এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছিল।

সূধী পাঠক, আমরা একবার ভেবে দেখি প্রকৃতির নিয়মকাণুন আর বিজ্ঞানের নিয়ম কাণুনের মধে কি কি মিল বা অমিল রয়েছ। আমরা জানি বিজ্ঞান তার সমগ্র মেধা ও শ্রম দিয়ে চেষ্ঠার মাধ্যামে লব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে প্রাপ্ত সিদ্ধান্তকে বলে বিজ্ঞানের নীতি যাকে প্রকারান্তরে  প্রকৃতিরই নিয়ম নীতি বলা চলে। বিজ্ঞান পিতা নিউটনের মাথায় আপেলের আঘাত আমাদেরকে এনে দিয়েছিল বিশ্ববিখ্যাত মহাকর্ষ সূত্র, যার অনুশাসনে এই মহাবিশ্ব চালিত। একে যেমনি বলা যায় বিজ্ঞানের নীতি তেমনি এটি প্রকৃতিরও নীতি। বিজ্ঞান সগর্ভে ঘোষণা দিল এই মহাকর্ষ শক্তিই সকল মহাজাগতীক বস্তুকে মহাশূণ্যে ধরে রেখেছে। বাস্তবিকই দেখা গেল মহাকর্ষের এই বাঁধন ছিন্ন করে কেহই তার মাতৃ অবস্থান ছেড়ে দূরে কোথাও যেতে পারছেনা। শুরু হল বিজ্ঞান জগতে বিবর্তনের ধারা। জগৎ বিখ্যাত বিজ্ঞানীরা তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলাফল নিয়ে এলেন। আধুনিক বিজ্ঞানের কর্ণধার মহামতি আইষ্টাইন নিয়ে এলেন রিলেটিভিটির তত্ত্ব। আরো তুলে ধরলেন পদার্থের সাথে শক্তির সম্পর্ক। তিনি দেখালেন পদার্থই শক্তি,আবার উল্টোভাবে শক্তিই পদার্থ, অর্থাৎ e=mc2 ; যদিও ঘরে বসে শক্তিকে পদার্থে রূপান্তর করা গেলনা তথাপি এই তাত্ত্বিক ধারণাটাই সাড়া পৃথিবীকে আলোড়িত করে তুলল। খুলে গেল স্রষ্টার বদ্ধ দূয়ার। সমুন্নত হয়ে উঠল কোরআনের বাণী-

وَالسَّمَاء بَنَيْنَاهَا بِأَيْدٍ وَإِنَّا لَمُوسِعُونَ

৫১:৪৭ মহা বিশ্বকে সৃষ্টি করিয়াছি অসীম শক্তির দ্বারা ইহাকে আমরা সমপ্রসারন করিতেছি।’

বিজ্ঞানীদের কাছে এই বাণী না পোঁছালেও ভাবুক লোকেরা যেন ঐ সুদূর প্রান্তে স্রষ্টাকে দেখতে পেলেন মানুষের মনে পরিস্কার হয়ে জমাট বাঁধতে লাগল তাঁর বাণী। যেন স্পষ্টই দেখা গেল কি করে শক্তির কণাগুলো জমাট বেঁধে পদার্থ সৃষ্টি করছে। কিন্ত স্টিফেন হকিন্সের দল বলে চললেন, না প্রকৃতি তার নিজের নিয়মেই চলছে। মহাশূণ্যে আপনা আপনি পদার্থ কণা জন্মাচ্ছে। তিনি একবারও ভেবে দেখলেননা- বিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী যদি মহাবিশ্ব জন্মেই থাকে  তবেতো একটি স্থির মহাবিশ্বকেই কল্পনা করতে হয়। কারণ মহাকর্ষের মহাশাষনে সকল মহাজাগতিক বস্তু নিলয়কে কেন্দ্রীভূত হয়ে থাকার কথা। কিন্তু বাস্তব যে ভিন্ন। তাইতো বিজ্ঞান পিতা কোন রকমে তার নিজের আবিষ্কৃত মহাকর্ষের বাঁধা ডিঙ্গাতে গিয়ে বলেছিলেন,‘স্রষ্টাই মহাবিশ্বের সকল বস্তুকে গতিময় করে দিয়েছিলেন। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রদূত হকিন্স সাহেব সে কথাকেও তুরি মেরে উড়িয়ে দিলেন। তিনি বললেন,মহাবিশ্বের সকল বস্তু বিগব্যাঙ থেকে প্রাপ্ত গতিতেই গতিশীল। তিনি কি একবারও ভেবে দেখলেননা তারই পূর্বসূরী বিজ্ঞান পিতার সেই মহাকর্ষ সূত্র যায় ভেঙ্গে। বিজ্ঞানীরাতো থেমে থাকেননি, তারা সত্যের সন্ধানী। হকিন্স সাহেবের কথা মেনে নিলেও মনের কৌতুহল দমেনি, যন্ত্রচোখ ঘুরিয়ে সারা বিশ্বকে দেখতে লাগলেন তন্ন তন্ন করে। সন্ধান পেয়ে গেলেন সেই মহাশক্তির। স্বতসিদ্ধের ন্যয় ধরে নিলেন, এই অচেনা শক্তিটিই মহাবিশ্বের চালিকা শক্তি। সমস্যার প্রায় সমাধান হয়ে গেল। ছায়াপথগুলি আন্তছায়াপথীয়  মহাকর্ষের করাল গ্রাস থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করে অজানার পথে ছুটে চলতে পারছে। তাদের দ্রুতি মন্দনের পরিবর্তে তরাণ্বিত হচ্ছে। আর পবিত্র কোরআন তার পাতাগুলিকে মেলে ধরে সহাস্যে বলছে চেয়ে দেখ,এই বাণী কখনোই মিথ্যে হতে পারেনা। একসময় হকিন্স সাহেব বিশ্ব সৃষ্টিতে স্রষ্টার অবদানকে অস্বীকার করতেননা, ১৯৮৮ তে তার লেখা ,‘ A Brief History of Time’ বইতে লিখেছেন যে,পুরাপুরি তত্ত্ব যেদিন আবিস্কৃত হবে সেদিনই স্রষ্টার মনোভাব জানা জাবে। কিন্তু এই সাক্ষাৎকারে নিউটনের সেই মন্তব্যটি প্রত্যাখ্যান করেন সেখানে নিউটন বলেছিলেন‘ স্রষ্টাই এই মহাবিশ্বকে সমপ্রসারণের জন্যে গতিময় করেছিলেন’।

আমরা জানি,অল্পদিন আগে পর্যন্ত নিউটনের সূত্র অনুযায়ী বিজ্ঞান জানতো যে,বাধাহীন পরিবেশে কোন বস্তুর প্রাপ্ত জড়তা চিরকাল দীর্ঘায়িত হয়। আর সেই মতেই ধারণা করা হত মহাজাগতিক বস্তু গুলি বিগ ব্যাঙ থেকে প্রাপ্ত গতিতে অজানার পথে ছুটে চলেছে। সেখানেও হল ব্যতিক্রম,পরীক্ষালব্ধ ফলাফল থেকে জানা গেল মহাজাগতিক বস’গুলির গতি প্রতিয়িত তরাণ্বিত হচ্ছে, যা নিউটনের সেই নীতি বিরুদ্ধ। প্রকৃতির আইনে সৃষ্ট মহাবিশ্ব প্রকৃতির আইনই ভঙ্গ করে ফেলল। বিজ্ঞানীরা পড়লেন বিপাকে। প্রশ্ন জাগল কেন এমন হয়? কোন সদুত্তর না পেয়ে কৌতুহল জাগল-তবে কি কোন শক্তির যোগান দাতা তাদেরকে ঠেলে দিচ্ছে। না! এ ধারণাকেও প্রশ্রয় দেওয়া যায়না। তবে যে, সৃষ্টিকর্তার শূণ্য আসনটি পূর্ণ হয়ে যায়। ষ্টিফেণ হকিন্সের মত মহাবিজ্ঞানীর রসিকতা করার সুযোগটি আর থাকেনা। কিন্তু তার পরেও বিজ্ঞান থেমে রইলনা। সেই অজানা শক্তির সন্ধানে অনুসন্ধানে নেমে গেল। পেয়েও গেল এক অচেনা শক্তির পরিচয়। সর্বশক্তি দিয়ে বিজ্ঞান গবেষণায় মত্ত হয়ে পড়লো। অবশেষে এই সেদিন আজকের বিজ্ঞান উচ্চকণ্ঠে ঘোষনা করল-আমাদের এই মহাবিশ্বের দৃশ্য শূণ্য স্থানগুলো আসলে শূণ্য নয়। সমগ্র মহাবিশ্বই কৃষ্ণ শক্তিতে ভরপুর, যা থেকে কৃষ্ণ পদার্থ ও অবশেষে দৃশ্য পদার্থ আবিভূত হচ্ছে। এই শক্তিকে চোখে দেখা যায়না এমনকি এ যাবৎ আবিষ্কৃত কোন যন্ত্রের মাধ্যামেও ধরা পড়েনা কিন’ তার অবস্থান যে সত্য তা আজ বিজ্ঞানের কাছে স্বতঃসিদ্ধের ন্যায় সত্য। তাদের উপস্থিতি যেন আলোর ন্যায় পরিস্কার। বিজ্ঞানের অজান্তেই ঘোষিত হল মহাপ্রভুর জয়। তাহলে একটা কথা পরিস্কার হয়ে গেল যে’ বিজ্ঞানী হকিন্সের পরীক্ষাঘারটি দৃশ্যতঃ শূণ্য হলেও প্রকৃতপক্ষে শূণ্য ছিলনা,সেখানে ছিল কৃষ্ণ শক্তির জোয়ার। সম্ভবত সেই কৃষ্ণ শক্তি থেকেই সেই পরীক্ষার ফলাফল তৈরী হয়েছিল। বিজ্ঞানী হকিন্স বলছেন,এই মহাবিশ্ব স্বতস্ফূর্তভাবে জন্মলাভ করেছে। কিন্তু আমি অধম বলব ‘শুধু করেনি,আজো সেভাবেই জন্মাচ্ছে।’ কে বললো বিশ্বের সমগ্র সৃষ্টি স্বতস্ফূর্ত নয়? দৃষ্টির সীমানায় যাকিছু দেখা যায় আর যা রয়েছে দৃষ্টির আড়ালে- সবইতো স্বতস্ফূর্ত সৃষ্টি। আবারও আসা যাক হকিন্সের সেই রসিকতায়-‘স্রষ্টার কি হাত আছে যে তিনি মহাবিশ্ব তৈরী করবেন।’ সুধী পাঠক উনিতো সঠিক কথাটিই বলেছিলেন- সত্যিকি দয়াময়ে হাত আছে? না আমরাই জানি যে দয়াময় দশভূজা? না! সূধী পাঠক তার কোন হাত পায়ের সন্ধান পৃথিবীর মানুষ আজো পায়নি। তিঁনি নিজেও সে বর্ননা দেননি। তিনি দিয়েছিলেন শুধু আদেশ,আর সেই আদেশ বলে বিস্তার হয়েছিল মহাশক্তির যা থেকে স্বতস্ফূর্তভাবে এই মহাবিশ্বের গোড়াপত্তন,বিবর্ধন,বিবর্তন,অবশেষে আজকের এই মহাবিশ্ব জন্ম নিয়েছে ও এগিয়ে চলছে ভবিষ্যতের দিকে। সবইতো স্বতস্ফূর্ততার মাঝে। একাজে কাউকে তিনি নিয়োগ দেননি এবং নিজেও নিয়োজিত হননি। তিনি একত্রিত আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন- ‘বেড়িয়ে আস স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায়’। সূধী পাঠক,তাহলে হকিন্স সাহেব কোথায় দেখতে পেলেন যে,এই মহাবিশ্ব সবতস্ফূর্ত ভাবে সৃষ্টি হয়নি। সত্যিকার অর্থে যে স্রষ্টার হাত পা কিছুই নেই,সে স্বত্তা কি করে মূর্তি গড়বেন? তিনি মহান স্বত্তা,সব কিছু হচ্ছে তার ইচ্ছায় স্বতস্ফূর্তভাবে। সূধী পাঠক, আপনার মনেও কৌতুহল জাগতে পারে- এটি কি করে সম্ভব? শুধু হও বললেই হয়ে যায়। একবার ভাবুনতো দেখি-আপনি রসায়নাঘারের একজন গবেষক, আপনি খারীয় দ্রবণে অম্ল ঢেলে দিলেন,তৎক্ষণাৎ তৈরী হয়ে গেল লবন ও পানি। যা হল, স্বতস্ফূর্তভাবেই হল। এটা কি করে হল? হয়তোবা আপনি বলবেন যে, আপনি রাসায়ণিক পদার্থগুলো মিশিয়ে ছিলেন বলেই হয়েছে। তাহলে এবার ভাবুন তো দেখি- দয়াময় কি কোথাও বলেছেন যে, তিনি এক ফুৎকারে যাদুর ভোজভাজি দিয়ে সবকিছু তৈরী করেছেন। না! তিনি তা করেননি। তিঁনি অসীম শক্তির বিস্তার করেছিলেন আর তা থেকেই তাঁর ইচ্ছে ও পরিকল্পনা মত স্বতস্ফূর্ততার মাঝেই সবকিছু অবির্ভূত হয়েছে ও হচ্ছে। তা হলে কি হকিন্স সাহেবকে আরেকবার ভেবে দেখা উচিৎ নয়? তিনি বলেছেন মহাবিশ্ব প্রকৃতির নিয়ম মেনেই সৃষ্টি হয়েছে। আবারও সেই ছোট্ট প্রশ্ন? বিজ্ঞান কি জানে প্রকৃতির বিধান কি? কোন কোনটি? হয়তো বলবেন- প্রকৃতিতে যা ঘটে,তাই প্রকৃতির বিধান। তাহলে আমার কথায় ব্যত্যয় কোথায়? আপনার স্রষ্টা শুধু বলেছিলেন-‘হও’। যার যার মত সব হয়ে গেল, আজো হয়ে চলেছে। স্বতস্ফূর্তভাবে যার যার চরিত্র বৈশিষ্ট, বৈচিত্রতা, জীবনধারণ পদ্ধতি সবকিছু নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে এই মহাবিশ্বে। কি দেখা গেল, প্রকৃতির বিধান মতই সবকিছু আবিভূত হল। হয়তো আবারও প্রশ্ন করবেন এ বিধান এল কোত্থেকে। আমি যদি বলি,আপনার পরীক্ষায় ক্ষার ও লবণ হল কি করে। হয়তো বলবেন সেটি অম্ল ও ক্ষারের ধর্ম। এবার আমি যদি বলি, যে মহাশক্তি থেকে সকল বস্তুর জন্ম হল,এও তারই ধর্ম। আরেকটি সহজ উপমা নিয়ে ভেবে দেখুন, দৃষ্টিগ্রাহ্য নয় এমনিতর রেণু থেকে সৃষ্ট বীজ আপনার বাড়ির সামনের যে বটবৃক্ষটিকে উপহার দিয়েছে তার দিকে কি একবারও তাকিয়ে দেখেছেন,এই ক্ষুদ্র বীজ থেকে এতবড় মহীরূহটি আবির্ভূত হল কি করে? হয়তো বলবেন সেই রেণুটির মধ্যেই লিখা ছিল তার দেহসৌষ্ঠব সৃষ্টির সকল কৌশল। তাহলে ঐ একই জবাব সেখানেও।

উপরের আলোচনা থেকে এটুকু বুঝা গেল যে এই মহাশূন্যের মহাশূন্যতা আসলে শূন্য নয়, সেই শূন্যস্থান পরিপূর্ণ হয়ে আছে মহা শক্তি যা হতে পারে সৃষ্টির মূল রসদ। এই মহা শক্তির কোন স্বরূপ আজো মানুষের চোখে ধরা পড়েনি,তবে অধুনা অনুভবে এসেছে। আগের মানুষ জানতো-এই মহাশূন্য নিছক শূন্য হাহাকার। কালের বিবর্তনে মানুষের মাথায় পাক ধরেছে,বেড়েছে জ্ঞান, দৃষ্টির বাইরেও অনেক কিছু অনুভব করতে শিখেছে। এমনি কোন এক অনুভুতি দিয়ে আজকের মানুষ বুঝতে পেরেছে অতি দ্রুতি সম্পন্ন মহাজাগতি বস্তুগুলির চালিকা শক্তি হল কৃষ্ণ শক্তি,যা আজঅবদি মানুষের আবিস্কৃত কোন প্রযুক্তি দিয়ে পরীক্ষা করা যায়না ফলে তা ব্যাখ্যার অগম্যই রয়ে গেছে কিন্তু অনুভূতির  আওতায় চলে এসেছে। বিজ্ঞানের কাছে এই শক্তি এখন স্বতসিদ্ধের ন্যায়। একে পরীক্ষার আওতায় আনা এখন সময়ের ব্যপার। আমরা বাতাসকে চোখে না দেখেও অনুভবের দ্বারা তার অস্তিত্বকে স্বীকার করি। তেমনি আজ বিজ্ঞানীরা কৃষ্ণশক্তিকেও স্বীকার করে নিচ্ছে। বলা যায় অদৃশ্য জগতে আরো নতুন কিছু সংযুক্ত হল যা আমরা চোখে না দেখেও মেনে নিতে বাধ্য। দিনের বেলায় খালি চোখে সূর্যের দিকে তাকানো প্রায় অসম্ভব, আলোর তীব্রতায় চোখ জ্বলসে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়ে। সূর্য অস্ত গেলে কৃত্রিম আলো না জ্বেলে অন্ধকারে কিছুই দেখতে পাইনা। আমরা শুধু এই সাধারন আলোটাকেই দেখতে পাই। কিন্তু না দেখেও যে অনেক আলোর অস্তিত্বকে মেনে নেই তা শুধু উপলব্ধির দ্বারা। বিজ্ঞান আমাদেরকে এ সংবাদও দিচ্ছে যে মহাজগতে উপসি’ত আলোক রশ্নির একশতভাগের এক ভাগের সাথেও আমরা পরিচিত নই;বাকী ৯৯ ভাগই অদৃশ্য ও আমাদের অনুভবের বাইরে পড়ে আছে। আমাদের পরিচিত অদৃশ্য রশ্নিগুলো যেমন-এক্স-রে, আল্ট্রাভায়োলেট-রে ইনফ্রারেড-রে,লেসার-রে, তাছাড়াও রয়েছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত নানা তরঙ্গ দৈর্ঘের তড়িৎ-চুম্বক তরঙ্গ। একসময় মানুষ খালিচোখে তাকিয়ে যতটুকু দেখতে পেত সেটুকুই ছিল তার পরিচিত জগৎ। বিজ্ঞানের ক্রম উন্নতিতে মানুষের চোখে উন্মুক্ত জগতের চৌহদ্দি অনেক বড় হয়ে দেখা দিল;তার পরেও মানুষ জানতে পেল এই মহাবিশ্বের অতি সামান্য অংশই তার দৃষ্টি সীমানার মধ্যে রয়েছে। কারণ দূর দূরান্ত থেকে আগত আলোক রশ্নির তীব্রতা এতই সামান্য যে তা অতি উন্নত দূরবীণের চোখেও ধরা পরেনা; কিন্তু পৃথিবী ছেড়ে বহুদূরে চলে যাওয়া নভোযান গুলির চোখে ঠিকই ধরা পড়ছে সেই ম্রিয়মান আলোক রেখা। আবার আমরা সেই আলোক তরঙ্গগুলিকেই দেখতে পাই যা আমাদের চোখে দৃষ্টির অনুভূতি জাগায় (যেসকল আলোকের বিকিরণ দৈর্ঘ০.২৫ থেকে ০.৭ মাইক্রন),বাকী অসংখ্য আলোক তরঙ্গ আমাদের দৃষ্টির বাইরেই থেকে যায়, কিন্তু তাদের উপস্থিতি ধরা পড়ে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতিতে অর্থাৎ বর্ণালীবীক্ষণ যন্ত্রে। ৯৯ শতাংশ আলোক তরঙ্গ আমাদের দৃষ্টির বাইরে থাকলেও তারা কিন্তু ছড়িয়ে আছে এই মহাবিশ্বে আনাচে কানাচে। তাছাড়াও অদৃশ্য জগতে রয়েছে কৃষ্ণ শক্তি, রয়েছে কৃষ্ণ পদার্থ। তাহলে বলা যায় যে,আমরা দেখতে পাইনা বলেই মহাশূন্যের কোন স্থানন আসলে শূন্য নয়, নানা প্রকারের অদৃশ্য পদার্থে পরিপূর্ণ। তাইতো দয়াময় বলেছেন,

وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيرَ لِتَرْكَبُوهَا وَزِينَةً وَيَخْلُقُ مَا لاَ تَعْلَمُونَ     সূরা নহল

১৬:৮ তোমাদের আরোহনের জন্য ও শোভার জন্য তিনি ঘোড়া,খচ্ছর ও গাধা সৃষ্টি করেছেন আর তিনি এমন জিনিস সৃষ্টি করেন যা তোমরা জাননা।

قُل لَّا يَعْلَمُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ

২৭:৬৫‘বল,আল্লাহ্‌ ব্যতিত আর কেহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয়ে জ্ঞান রাখেনা  এবং তারা জানেনা যে কখন পুনরুজ্জীবিত হবে।  -সূরা আন নমল

عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَى غَيْبِهِ أَحَدًا     সূরা আত্ত্বিন

৭২:২৬ ‘অদৃশ্যের জ্ঞান শুধু তাঁহারই,তাহার জ্ঞানের উপর অন্য কাহারো কোন প্রভাব,নিয়ন্ত্রন বা অধিকার নাই।’

وَيَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللّهِ مَا لاَ يَضُرُّهُمْ وَلاَ يَنفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَـؤُلاء شُفَعَاؤُنَا عِندَ اللّهِ قُلْ أَتُنَبِّئُونَ اللّهَ بِمَا لاَ يَعْلَمُ فِي السَّمَاوَاتِ وَلاَ فِي الأَرْضِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ

১০:১৮ আর উপাসনা করে আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন বস্তুর,যা পারেনা তাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে বা কোন লাভ করতে এবং বলে এরা তো  আল্লাহ্‌র কাছে আমাদের সুপারীশকারী। তুমি বল,তোমরা কি আল্লাহএক এমন বিষয়ে অবহিত করছ,যে সম্পর্কে তিঁনি অবহিত নন আসমানও যমীনের মাঝে? তিনি পুতঃপবিত্র ও মহান সে সমস্ত থেকে যাকে তোমরা শরীক করছো।  -সূরা ইউনুছ

কোরআন আবির্ভূহওয়ার বহুকাল পূর্ব থেকেই অদৃশ্যকোন কিছুর অস্তিত্ব ছিল মানুষের অকল্পনীয় ব্যপার। এত সুন্দর আলোকোজ্জ্বল আকাশে যে অদৃশ্য কিছু থাকতে পারে তা ছিল মানুষের বিশ্বাসে অগম্য। অদৃশ্য বলতে মানুষ শুধুমাত্র ভূত-প্রেতকেই মনে করতো। কালের বিবর্তনে মানুষের মননশীলতায় পরিবর্তন এসেছে,উন্নত হয়েছে চিন্তাশক্তি। আনুষ এখন অনুভবেও অনেক অজানাকে জানতে শিখেছে। তীক্ষ্ণ হয়ে উঠেছে অর্ন্তদৃষ্টি। যে বিজ্ঞান চাক্ষুস প্রমাণ ছাড়া কোন কিছুকে স্বীকার করতে চাইতোনা, আজ সেই বিজ্ঞানই বলছে এই মহাজগতের ৯৫ শতাংশই অদৃশ্য আর তা দেখাতো যায়ইনা বুঝাও অনেক কঠিণ। অথচ তাকে অস্বীকার করা একে বারেই অসম্ভব। আজ বিজ্ঞানের যত কৌতুহল,আবিস্কারের যত উদ্যম তার বেশীরভাগই অদৃশ্যকে ঘিরে। অথচ সেই পৌত্তলিকতার যুগে এক অশিক্ষিত মরুচারীর মুখ দিয়ে মহান আল্লাহ্‌ কত পরিস্কারভাবেইনা অদৃশ্য জগতের কথা ঘোষনা করলেন।

সূধী পাঠক,একবার বিবেচনা করুন মহাবিশ্বের যেখানে ৫ শতাংশ মাত্র এই দৃশ্য জগতের এত বিশাল কলেবর সেখানে বাকী ৯৫ শতাংশ অদৃশ্য জগতের কাঠামোয় কি বিশাল আয়োজন হতে পারে! তাইতো বিজ্ঞান অবাক বিষ্ময়ে বলছে বাস্তবের চেয়ে অবাস্তবই যেন বাস্তবতা। অদৃশ্যের বিষয়বস্তই আজ বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় কৌতুহল।

বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায় আমরা জানি মহাজাগতিক সকল বস্তু তথা বস্তুপরিবার বা ছায়াপথগুলি অপরিমেয় গতিতে ছুটে চলেছে অজানার পথে, মানুষ জানেনা কোথায় চলেছে তারা,হয়তো চলেছে তাদের গন্তব্যে বা অন্যকোন মহাজগতে যেখানে নতুন করে সৃজিত হচ্ছে আরেক মহাজগত-যা আজকের কল্পনা,হয়তোবা তা আগামী দিনের পাথেয়। আমরা জানি এই ছুটেচলা বস্তু সমুহের গতিবিধির মধ্যেও রয়েছে নানা অনিয়ম। কোন ছন্দের তাল নেই,নেই কোন নির্ধারিত বিধি। একএকটি একএক গতিতে চলছে,অথচ তাদের মধ্যে নেই কোন সংঘর্ষ। দয়ময়ের কি বিধান! কি সুতিক্ষ্ণ পরিকল্পনা! যেন নিয়মের মাঝে কত অনিয়ম,কিন্তু নেই কোন বিশৃঙাখলা। বিজ্ঞান আজ একটিমাত্র যন্ত্রচোখে(দূরবীণ) দেখতেপাচ্ছে কত বৈচিত্র! যেন মহাসমুদ্রের এক বিশাল পরিসরে ডানকিনে মাছ কিলবিল করছে। সম্প্রসারনের অমোঘ নিয়মে ছায়াপথ সমুহ ছুটে চলেছে অকল্পনীয় গতিতে,তাদেরই একটি নক্ষত্র 3C-295  ছুটে চলেছে সেকেন্ডে ৯০০০০ মাইল গতিতে। তারা কেহই সমবেগ প্রাপ্ত নয়,প্রতিমুর্থেই তরান্বিত হচ্ছে তাদের গতি। আমরা এও জানি এই তরানিণ্বত হতে হতে একদিন যখন আলোর গতি বা তারচেয়েও বেশী হয়ে যাবে তখন চিরতরে হারিয়ে যাবে কোন অজানায়, কারন তাদের বিচ্ছুরিত আলো কোনদিনই আর আমাদের কাছে আসতে পারবেনা। আর ঐ সময়ে সেই নক্ষত্রটি যতদূর যাবে সেই পর্যন্ত আমাদের দৃশ্যজগতের সীমানা নির্ধারন করেছেন আজকের বিজ্ঞানীরা,আর তাহল ১১০০ কোটি আলোক বর্ষ। কিন্ত তারপর? তারপর আবার সেই অদৃশ্য জগতের কথা। হয়তোবা হারিয়ে যাবে কোন এক অদৃশ্য জগতের গহীন কন্দরে। বিজ্ঞানের জানামতে সর্বদূরত্বে অবস্থিত জোতিষ্ক OQ-172 আমাদের অবস্থান হতে মাত্র ১০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। তারপরে সেই মহাশূন্যতা হয়তোবা সেখানে আজঅবধি আমাদের মহাবিশ্ব পৌঁছায়নি,রয়ে গেছে আমাদের অজানা। বিজ্ঞান এখানেই থেমে নেই,এই দূরবর্তী জোতিষ্ক সম্পর্কে অনেক তথ্যই জোগার করেছে। এটি আয়তনে আমাদের সৌরজগতের মাত্র কয়েকগুন বড়,কিন্তু উজ্জ্বলতা আমাদের সূর্যের চেয়ে অকল্পনীয় বেশী। ১০ হাজার বিলিয়ন সূর্য একত্রে যে পরিমান শক্তির বিচ্ছুরন ঘটাতে পারে,সেই নক্ষটি একাই প্রায়  তার সমান। আজকের বিজ্ঞান আমাদের মহাবিশ্বে দৃশ্য বস্তুর একটা আনুমানিক ভর হিসেব করেছে,তা সংখায় প্রকাশ করলে হয়তোবা পড়া সম্ভব হবেনা,তবে তার একটা অনুমান আমরা করতে পারি। তা হল এই যে,আমাদের জানা ছায়াপথের সংখ্যা প্রায় ১০ বা ১০ কোটি এবং প্রতিটি ছায়াপথে নক্ষত্রের সংখ্যা গড়ে ১০ হাজার কোটি;তাহলে মোট বস্তুর সংখ্যা দাঁড়াল 109x10 হাজার কোটি। আবার সূর্য পৃথিবীর তুলনায় ১৩ লক্ষ গুন বড় এবং সূর্য এই মহাবিশ্বে নিতান্তই নগন্য সদস্য। গড়ে আমরা নক্ষত্রগুলিকে সূর্যের মতই ধরে নিলে একটা কাছাকাছি হিসেব পেতে পারি। আমরা জানি পৃথিবীর বস্তভর  ৬ কোটি টন বা 6 x 1024 কেজি। তাহলে মহাবিশ্বের দৃশ্য বস্তুভর দাঁড়ায় 109x1012 x 6 x 1024  ev   6 x1045 কে জি। আমরা আরও জানি মহাবিশ্বের দৃশ্য বস্তুর ভর মোট বস্তুভরের মাত্র ৫ শতাংশ। বাকীটা অদৃশ্য; তাহলে অদৃশ্য বস্তুভরের পরিমান দাঁড়ায় । 684 x1045 কেজি। এই সংখ্যামান থেকে একটা অনুমান করা যায় যে দৃশ্য পদার্থের চেয়ে অদৃশ্য পদার্থের পরিমান কত বিপুল। আর এই তথ্যই পবিত্র কোরআন আপনাকে জানিয়ে দিয়েছে বিজ্ঞান যখন ছিল অঙ্কুরিত অবস্থায়। সেই অঙ্কুর দিনে দিনে বড় হয়ে তার বাল্যকাল পেড়িয়ে আজ তারুণ্যে এসে কত নিখুত পরিমাপে তার স্রষ্টাকে খুঁজে বের করছে। এতো সেই দয়াময়েরই দয়া-যাকে জ্ঞান দান করা হয়েছে তাকে অশেষ কল্যাণ দান করা হয়েছে। এসবতো তাদেরই জন্যে যারা ভাবনা চিন্তা করে। দেখুন, এই অদৃশ্য জগতের খবর আল্লাহ্‌পাক কিভাবে দিয়েছেন,

আয়াতাংশ ১৬:৮‘তিনি সৃষ্টি করিয়াছেন এমন অনেক কিছু যাহা তোমরা অবগত নহ’।

সূধী পাঠক,উপরোক্ত আয়াংশের মর্মার্থ ইতিমধ্যেই আমরা কিছুটা জেনেছি। আমরা জেনেছি সৃষ্টি জগতে যাহাকিছু আছে তার প্রায় সবই অদৃশ্য। মানুষ এই অদৃশ্য জগতকে কখনোই স্বীকার করতে চায়নি, খোঁদ বিজ্ঞান তার জন্ম লগ্ন থেকেই অদৃশ্যে অবিশ্বাসী। পরীক্ষা নীরিক্ষা ও উপযুক্ত প্রমাণ ব্যতিরেকে যে বিজ্ঞান কোন রায় দেয়না সেই বিজ্ঞান আজ তার সুতীক্ষ্ণ মেধা ও অনুভব দিয়ে আজ স্বত:সিদ্ধের ন্যায় মেনে নিচ্ছে ও বলছে যে সৃষ্টির প্রায় সবই অদৃশ্য। কি বিষ্ময়কর কথা। যে কথা উপরের আয়াতে কোরআন বিজ্ঞানের জন্মলগ্নেই ঘোষনা করেছে। অবশেষে বিজ্ঞানের কর্ণধাররাও বলতে বাধ্য হচ্ছেন যে, কোরআন আজকের মানেুষের কাছেও এক বিষ্ময়কর প্রতিভা।

ذَلِكَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ

৩২:৬‘তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যের পরিজ্ঞাত মহাপরাক্রমশালী ও পরম দয়ালূ আল্লাহ্‌’।

وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لَا تَأْتِينَا السَّاعَةُ قُلْ بَلَى وَرَبِّي لَتَأْتِيَنَّكُمْ عَالِمِ الْغَيْبِ لَا يَعْزُبُ عَنْهُ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ وَلَا أَصْغَرُ مِن ذَلِكَ وَلَا أَكْبَرُ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ -সূরা আলসাবা

৩৪:৩‘অবিশ্বাসীরা বলে আমাদের উপর কেয়ামত আসিবেনা। বলুন কেন আসিবেনা? আমার পালনকর্তার শপথ,অবশ্যই আসিবে; অদৃশ্য সম্পর্কে তিনি সম্পূর্ণ পরিজ্ঞাত। আকাশ মণ্ডলী ও পৃথিবীতে তাঁর অগোচরে নহে সুক্ষাণু পরিমান কিংবা তদাপেক্ষা ক্ষুদ্র কিংবা বৃহত্তর কিছু;প্রত্যেকটির তথ্য লিপিবদ্ধ রহিয়াছে এক সুস্পষ্ট গ্রন্থে’।

এই আয়াতটি সম্ভবত বিজ্ঞান মনষ্ক মানুষের সুতীক্ষ্ণ দৃষ্টির সামনে এক বিষ্ময়কর ইঙ্গিত। ভাবতেই পারা যায়না সেই মরুচারীর মুখে দয়াময় এ কোন বাণী ফুটিয়েছেন। যা জানতোনা সেই সময়ের কোন মহাজ্ঞানী এমন কি দেড় হাজার বছরের পরিপক্ষ আজকের বিজ্ঞান ও জানতোনা আজ থেকে ৫০ বছর আগে। এখানে দয়াময় বলেছেন-আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে,তাঁর অগোচরে নহে সুক্ষাণুপরিমান কিংবা তদাপেক্ষা ক্ষুদ্র- এ কোন তত্ত্ব। ‘সুক্ষাণু পরিমান কিংবা তদাপেক্ষা ক্ষুদ্র’।

আজকের বিজ্ঞান অণু পরমাণুর সন্ধান খুব বেশীদিন আগে পায়নি। অণু পরমাণুর বিশ্লেষনে সুক্ষাণু অর্থাত পরমাণু গঠনকারী মৌলিক কণিকার সন্ধান আরও অল্প দিনের। তদাপেক্ষা ক্ষুদ্র কণার অর্থাত মৌলিক কণা তথা,ইলেকট্রন,প্রোটন,নিউট্রন এদের ভগ্নাংশের সন্ধান মিলেছে নিতান্ত হালে। তারপরেও কি বলা চলে,কোরআন মোহাম্মদ (সা:) এর প্রলাপ? এখানে এই বিষ্ময়কর তথ্য এসেছে মহাকাশ প্রসঙ্গে- কিন্তু বস্তু সৃষ্টিকারী এই সুক্ষ কণার সাথে মহাশূণ্যের এমন কি সম্পর্ক দয়াময় দেড় হাজার বছর পরের বিজ্ঞানীদের জন্যে পবিত্র কোরআনে মজুদ করে রেখেছেন। আছে ! এক নিটোল সম্পর্ক রয়েছে মহাকাশে এই ক্ষুদ্র কনার! দয়াময় বড় পবিত্র বড় উচ্চজ্ঞানী। তিনি মহাকাশের এই বিশাল চত্তরেই প্রথম অতি ক্ষুদ্র কণাদের গোড়াপত্তন করেছেন,আর তা থেকেই হয়ত সৃষ্টি হয়েছে বিশাল বিশাল মহাজাগতিক বস্তু সমুহ। বিজ্ঞানীরা মহাকাশে খুঁজে পেয়েছেন এই ক্ষুদ্র কণার মহা সমাবেশ। ১৯৭০ সালে পদার্থবিদ  টম কিবল্‌ প্রস্তাব করেন যে,মহাবিশ্বের অসীম শূণ্যতায় মহাজাগতিক তন্তু রয়েছে,এই কাল্পনিক তন্তু স্থানীয় ত্রুটি; মহাশূণ্যের সুসমতা ভঙ্গের বিভিন্ন পর্যায় পরিবর্তনের সময় তৈরী হয়েছিল। শূণ্যস্থানগুলি প্রকৃত পক্ষে শূণ্য নয়,অনুমান করা হয় প্রতি একক হাবল্‌ স্থানে অন্তত একটি করে তন্তু বা তার রয়েছে।  অনেকটা ঠাণ্ডা  পানিতে বরফের কেলাশ গঠনের মত; যেন চির ধরা সংঘবদ্ধ বরফ কণা। প্রাথমিক মহাবিশ্ব মডেলে  কোয়াণ্টাম ফিল্ড তত্ত্ব ও স্ট্রিং তত্ত্ব -উভয় ক্ষেত্রেই ধরে নেওয়া হয় য, মহাবিশ্বের বিবর্তনের প্রথম পর্যায়ে সৃষ্টিতাত্ত্বিক স্ফিতির ঠিক পরপর অবস্থান্তর পর্যায়ে এই মহাজাগতিক তার বা তন্তুর  আবির্ভাব ঘটেছে। বিজ্ঞানীদের ধারনা  মহাজগতের মূল গঠন শুরু হয়েছিল এই মহাজাগতিক তার দ্বারা। তত্ত্ব মতে বিশ্ব সৃষ্টিতে এই মহাজাগতিক তার বিশিষ্ট ভুমিকা রেখেছে,এরা বহুগুনে গুনান্বিত। পরিমানগত তত্ত্বে  ও স্ট্রিং তত্ত্বে উভয় ক্ষেত্রেই এই মহাজাগতিক তারের কিছু সাধারন বৈশিষ্ট রয়েছে,এরা একই ভাবে অত্যান্ত সুক্ষ ব্যসের,বলতে গেলে একটা প্রোটনের মত বা তারচেয়েও অতি ক্ষুদ্র। আমরা একটি ভাইরাসের গড় ব্যসকে অতি সুক্ষ মনে করে থাকি যা অতি শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্রেও দেখা যায়না,সেই ভাইরাসের চেয়েও অকল্পনীয় ভাবে চিকণ। কখনো কখনো এদেরকে শূণ্য ব্যসের ও বলা হয়। এই ধারনামতে তারগুলিকে এক মাতৃক বস্তও বলা হয়ে থাকে। স্থির অবস্থায় এদের উপর মহাকর্ষীয় বল কাজ করেনা। খোলা অবস্থায় কসমিক তারের উপরও মহাকর্ষীয় প্রভাব বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু বন্ধ তারের উপড় মহাকর্ষীয় প্রভাব প্রচলিত নিয়মসিদ্ধ ভাবেই কাজ করে। মহাবিশ্বের সম্প্রসারনের সময় মহাজাগতিক তন্তু গোলাকার জালিকা তৈরী করে। আগে ভাবা হত গেলাটিক সুপার ক্লাষ্টারে বস্তুভর জড়ো হওয়ার জন্য মহাকর্ষই দায়ী, অসীম মহাকর্ষীয় আকর্ষনে এই তন্তু জালিকায় পুঞ্জিভূত হয়েছিল মহাজাগতিক বস্তুকণা আর এই বস্তুকণা একত্রিত হয়ে সৃষ্টি করেছে ছায়াপথ। ১৯৭৬ সালে টম কিবল তার অনুসন্ধানী গবেষণা চালিয়ে বলেছেন,পরম একত্রীকরন ক্ষেত্র তত্ত্ব বা গ্রান্ডইউনিফাইড থিওরী মতে সৃষ্টির আদিতে অর্থাৎ সময়ের অভিযাত্রা যখন শূন্যতে তখন  বিশ্বভ্রহ্মাণ্ড ছিল ভ্রুণ অবস্থায় ঠিক তখনকার অগ্নিগোলকের মধ্যে পদার্থকণা ও শক্তির মিশ্রনে কেহই পৃথক ছিলনা,ছিল সমস্বত্ব দ্রবণের মত। তারপর ঘটল বিগব্যাঙ,শুরু হল মহাবিশ্বের অভিযাত্রা,নবঘঠিত ভ্রহ্মাণ্ডের তাপমাত্রা তখন অকল্পনীয়-সংখ্যা মানে ১০০০ ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডিগ্রী সে:। তখনই অবসান ঘটে একত্রিকরণ পক্রিয়ার। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা হ্রাস পেতে থাকলে মৌলিক বলগুলো আপন স্বত্বায় আবির্ভূত হতে থাকে। আর এই বল গুলোই হল দূর্বল ও সবল মিথস্ক্রিয়া, বিদ্যুতচৌম্বক মিথস্ক্রিয়া ও অভিকর্ষ বল। টমের মতে বিগব্যাঙের পর হতে মহাবিশ্ব বেলুনের মত ফুলতে থাকে আর তার গায়ে দেখাদেয় নানা আকৃতির অসংখ্য চির। যে মহাশক্তির বলে ঘট্‌ল বিস্ফোরণ সেই শক্তি  যমাটবদ্ধভাবে থেকে গেল সেই মহাজাগতিক তারের মধ্যে। পূর্বেও মানুষের মনে ধারনা ছিল যে মহাবিশ্ব একক কোন উৎস থেকেই সৃষ্টি আর সেই ধারনা ৭০ এর দশকে এসে জ্ঞিানীদের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠা থেকে পাকা হয়।  বিজ্ঞানীরা সবল ও দূর্বল মিথস্ক্রিয়া এবং বিদ্যুত চৌম্বক মিথস্ক্রিয়া এই ত্রয়ী শক্তির সঙ্গে মহাকর্ষের সম্মিলন নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে তত্ত্বগতভাবে প্রমান করলেন যে এই মহাবিশ্ব একক শক্তি উৎস থেকে সৃষ্টি। আমাদের এই চেনা বিশ্বের  অতি পরিচিত সুন্দর আকৃতি রূপায়নে মহাজাগতিক তার বা কসমিক ষ্ট্রিং এর অবদান যথেষ্ঠ।  কিন্তু বর্তমানে হিসেব নিকেশ করে বলা হচ্ছে মহাবিশ্ব গঠনে মহাকর্ষের অবদান মাত্র ১০ শতাংশ। এক সময় ভাবতো পদার্থ গঠনে কসমিক তারের প্রভাব ছিল যথেষ্ট কিন্ত এখন ছায়াপথ জরীপে এবং কসমিক মাইক্রোওয়েভ এর পটভূমি পরিমাপে যথেচ্চ হ্রাসবৃদ্ধির চেয়ে  বিবর্তনের  ধারনা দেয় পরিস্কার ভাবে। এই যথাযথ পর্যবেক্ষণে কসমিক তারের পরিস্কার ভূমিকার কথা জানা যায়, যা ১০ শতাংশের বেশী নয়।

আমরা উপরের আলোচনায় দেখতে পেলাম যে আজকের বিজ্ঞানীরা চাক্ষুস প্রমান না পেয়েও সন্দেহাতীত ভাবে কসমিক তারের উপস্থিতি স্বীকার করেন এবং ধরে নিয়েছিলেন যে এই মহাবিশ্বের তাবত বিশালকায় মহাজাগতিক বস্তুগুলি সৃষ্টিতে অতি সুক্ষব্যসের সেই মহাজাগতিক তারের ভূমিকা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রিষ্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড ভিটেনের মতে অতি সূক্ষ কিন্তু দৈর্ঘে বহু আলোকবর্ষেরও বেশী মহাজাগতিক তার গুলি বিগব্যাঙের পর সৃষ্ট অতি শক্তিশালী চুম্বক ক্ষেত্রে অতিপরিবাহিতার কাজ করে এবং অতিমাত্রায় বিদ্যুত প্রবাহের মাধামে সৃষ্টি করে এক বিশাল তড়িতচৌম্বকীয় ক্ষেত্র যা থেকে সৃষ্টি হয় বিকিরণের বন্যা। সেই বিকিরণে শিশু মহাবিশ্বের গ্যাসীয় ফিল্ডে সৃষ্টি হয় নানা আকৃতির বুদবুদ ও স্থানে স্থানে শূণ্যতা। পরবর্তীতে সম্প্রসারনের ধারায় সেই শূণ্য স্থানগুলি বিশাল আকৃতি ধারন করে এবং  একএকটা বুদবুদ বিবর্তিত হয়ে সৃষ্টিকরে এক একটা ছায়পথ এবং স্থান করে নেয় শূণ্যের বিভিন্ন কন্দরে। মহাজাগতিক বস্তুদের এই সজ্জিত বিন্যাসের পিছনে মহাজাগতিক তারের অবদানই বেশী বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। তাদের ধারনা এই তার অতিশয় দ্রুত তরঙ্গায়িত হয়ে বিদ্যুত প্রবাহের দ্বারা বিদ্যূত-চৌম্বক ক্ষেত্র রচনা করতে পারে এবং তা থেকে উদ্ভূত হতে পারে নানারকমের শক্তিশালী রশ্নির বিকিরণ। তারা এও মনে করেন যে,মহাকাশে মহাজাগতিক রশ্মি ও গামা রশ্নির উপস্থিতি এই মহাজাগতিক তারের জন্যই হয়ে থাকে। তাছাড়া দূরদূরান্তের ছায়াপথসমুহ হতে আগত আলোক রশ্নি কসমিক তার কর্তৃক সৃষ্ট চুম্বক ক্ষেতে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পথ পরিবর্তন করতে পারে যা মহাশূণ্য পর্যবেক্ষণকারীদের বিভ্রান্ত করতে পারে-সম্প্রতি হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এমনি এক বিভ্রান্তিতে পড়লে কসমিক স্ট্রিং এর ধারনা তাদের মনে পাকাপোক্ত হয়ে উঠে।এ ছাড়াও মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড প্রাপ্তি বিজ্ঞানীদের কাছে কসমিস্ট্রিং এর উপস্থিতি পাকাকরে তোলে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন কসমিক তার ব্লাকহোলের চেয়েও বেশী ঘণ যা ১০২১ গ্রাম প্রতি ঘন সে:মি:।

তাহলে আবার সেই কথাই মানসপটে ভেসে উঠে

৩৪:৩ কিন্তু অবিশ্বাসীরা বলে,আমাদের উপর কেয়ামত আসবেনা;বলুন কেন আসবেনা? আমার পালনকর্তার শপথ-অবশ্যই আসবে। তিনি অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞাত। আকাশ মণ্ডলী ও পৃথিবীতে তাঁর অগোচরে নহে সুক্ষাণু পরিমান কিংবা তদাপেক্ষা ক্ষুদ্র কিংবা বৃহত্তর কিছু;প্রত্যেকটির তথ্য লিপিবদ্ধ রহিয়াছে এক সুস্পষ্ট গ্রন্থে।

গ্রীক দার্শনিক ডেমোক্রিটাসের পরমানু তত্ত্ব থেকে মানুষ জানে দুনিয়ার তাবৎ পদার্থ এটম নামের সূক্ষকণা দ্বারা গঠিত, যাকে ধ্বংস করা যায়না বা ভাগ করা যায়না। এই পরমাণুর উন্নত ধারণা প্রাচীন ধারনা থেকে বিচ্যুত হয়ে বলছে, আগে পরমাণুকে যে সুক্ষতম মৌলিক কণা বলা হয়েছে তা ঠিক নয়, তাকেও ভাঙা যায়। এই ধারানা মানুষ মাত্র গত শতাব্দীর শেষের দিকে আবিস্কার করেছে। কিন্তু পবিত্র কোরআন ১৪ শতাব্দী আগেই এই ধারণার সূত্রপাত করেছে। আমরা উপরের আয়াতটি ভালভাবে লক্ষ্য করলেই তা বুঝতে পারবো।

১০:৬ বস’ত যে কোন অবস্থাতেই তুমি থাক এবং কোরআনের যে কোন অংশ থেকেই পাঠ কর কিম্বা যে কোন কাজই তোমরা কর অথচ আমি তোমাদের নিকটে উপস্থিত থাকি যখন তোমরা তাতে আত্মনিয়োগ কর। আর তোমার পরওয়ার্দেগার  থেকে গোপন থাকেনা একটি কণাও, না যমিনের না আসমানের;না এর চেয়ে ক্ষুদ্র কোন কিছু,না বড় যা এই প্রকৃষ্ট কিতাবে নেই।

এই যে ‘তদপেক্ষা খুদ্র’ অর্থাৎ খুদ্রাতি খুদ্র  শব্দটির,দ্বারা দয়াময় এখানে সম্ভবত পরমাণুর ভগ্নাংশের কথাই বলেছেন।

Capture1

আমরা জানি –

১. সাধারন পদার্থ পরমাণুদ্বারা গঠিত, এই পরমাণুগুলি বিদ্যুৎ চুম্বক শক্তি মাধ্যামে একত্রিত হয়ে অণু গঠন করে। আর এই অণুগুলি একত্রিত হয়ে তরল কঠিণ বা বায়বীয় পদার্থ উৎপন্ন করে।

২. পরমাণুগুলি তৈরী হয় একটা ঘণকেন্দ্রের চারিদিকে ইলেকট্রণ মেঘের দ্বারা, বিদ্যুচুম্বক শক্তি এই কেন্দ্র ও ইলেক্ট্রণগুলিকে তার সজ্জার মধ্যে ধরে রাখে।

৩. কেন্দ্রটিতে থাকে প্রোটন ও নিউট্রন যা শক্তিশালী নিউক্লিয়ার শক্তি বলে আবদ্ধ থাকে

৪. কেন্দ্রস্থিত  এই প্রোটন ও নিউট্রন কণাগুলি তিন প্রকারের কোয়ার্ক কণা দ্বারা গঠিত। মাত্র বিশ বছর আগেও বিজ্ঞান জানতো পরমানু গঠন কারী এই প্রোটন ও নিউট্রনই খুদ্রাতিখুদ্র কণা। সহসা বিজ্ঞান জানতে পেরেছে  এই ক্ষুদ্র্রাতিক্ষুদ্র কণা গুলি আরো ক্ষুদ্র কণাদ্বারা গঠিত। কণাপদার্থবিজ্ঞান নিবির পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা দ্বারা এই অতিক্ষুদ্র কণার বৈশিষ্ট সম্পর্কে জানতে পেরেছে। তাদের গবেষণা থেকে জানা গেছে যে পরমাণু গঠণকারী প্রোটন ও নিউট্রন কোয়ার্ক বা উপ কণা দ্বারা গঠিত। কোয়ার্ক অতি ক্ষুদ্র কণা যা মানুষের ধারণা ও হিসাবের বাইরে। এই কণার ব্যস ১০-১৮ মিটার। উপরের আয়াতে আরও একটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য যে,এই আয়াত পরমাণুর  ওজনের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এখানে مِثْقَالُ ذَرَّةٍ  শব্দজোড়ে مِثْقَالُ শব্দটির অর্থ হচ্ছে ওজন; এখানে পরমাণুর ওজন বুঝানো হয়েছে। অতএব এটি কোরআনের আরেকটি বিষ্ময়। কণাগুলি পরমাণুর কেন্দ্রে নিউক্লিয়ার বল দ্বারা একত্রিত হয়ে অবস্থান করে।

আমরা আরও জানি পরমাণুর কেন্দ্রে থাকে ধনাত্মক আধান যুক্ত কণা প্রোটন। প্রোটন আহিত হওয়ায় একে অপরকে বিকর্ষণ করে। অলৌকিকতা এখানেই,যখন এই কণাগুলি একত্রিত হয়ে একটি ক্ষুদ্র কেন্দ্র সৃষ্টি করে তখন তাদের মধ্যকার বিকর্ষণ বলকে দমিয়ে রাখার জন্যে একপ্রকার বল কাজ করে। যে শক্তি এই বিকর্ষণকারী কণাগুলোকে ও নিউট্রনকণাকে ক্ষুদ্রস্থানে একত্রিত করে রাখে তাকে বলে শক্তিশালী নিউক্লিয়ার বল। এই শক্তিধারী মৌলিক কণাকে ফ্রান্স ভাষায় বলা হয় ‘গ্লুয়ন’। প্রচণ্ড ধ্বংসকারী এ্যটমিক বম্ব থেকে এই শক্তিই নির্গত হয়। এই মহাবিশ্বে দয়াময় কল্যাণের নিমিত্তে অত্যান্ত সুপরিকল্পিত গাণিতিক সমন্বয়ে যা কিছুই সৃষ্টি করেছেন তার মধ্যেও রয়েছে গাণিতিক যথার্ততায় এক দূর্বার শক্তি। পরস্পর বিকর্ষণকারী প্রোটন কণাগুলিকে এই দূর্বার শক্তিই দৃঢ় সংলগ্ন করেছে। হোক সে বল খুব দৃঢ়, বা দূর্বল। প্রোটন ও নিউট্রন কণাগুলো উপযুক্ত পরিবেশে ঠিকই আলাদা হয়ে যেতে পারে। যে পারমানবিক মহাশক্তি বয়ে আনতে পারে দুর্বার যন্ত্রনা সেই শক্তিই কত সুন্দরভাবে সাজিয়ে রেখেছে আমাদের এই মহাবিশ্বকে। ধন্যবাদ এই সুপরিকল্পিত চমকপ্রদ মহাব্যবস্থাকে যার জন্য পদার্থ তার মৌলিক কণায় ভেঙ্গে গিয়ে কোন ধ্বংস লীলা সাধণ করছেনা।

পরমাণুর স্থিতিশীলতায় আরেকটি জরুরী বল হল বিদ্যুতচুম্বক বল; এই বল বিপরীতধর্মী দুই তড়িৎশক্তি পরস্পরকে আকর্ষণ করে রাখে। এই শক্তির কারণেই কেন্দ্রের প্রোটন কণা রাইরের ইলেকট্রনকে আকর্ষণ করে রাখে। মজার ব্যপার হল আকর্ষণ থাকা সত্যেও প্রোটন কণা ইলেট্রনকে টেনে কেন্দ্রে নিয়ে আসতে পারেনা,প্রয়োজনীয় দূরত্বে থেকে তারা কেন্দ্রের চারিদিকে তাদের নিজস্ব কক্ষপথে ঘূর্ণন রত থাকে। আরো মজার ব্যপার হল এই ইলেকট্রন গুলি একই ধরনের আধানে আহিত হওয়ায় তারা পরস্পকে বিকর্ষণ করে তথাপি বিশেষ উপায়ে সমন্বিত হয়ে পরমানুর কেন্দ্রের বাইরে স্তরে স্তরে ঘূর্ণন রত থাকে। ইলেকট্রনের এই পরস্পর বৈরীতার মধ্যেও সমন্বিত হওয়ার জন্যে বিপরীত স্পিনীং ব্যবস্থায় ব্যবস্থিত। এই মহাব্যবস্থার ব্যবস্থাপক নিঃসন্দেহে আত্মচেতনায় সমৃদ্ধ এক মহা স্রষ্টা যার সৃষ্টি কুশলতায় সৃষ্টি হয়েছে এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা থেকে অসীম মহাবিশ্ব। সূধী পাঠক, এখানেই শেষ নয়,উপরে আলোচিত গ্লুয়ন কণাই শেষ কথা নয়। কিচুদিন আগে বিজ্ঞানীগন আরো সুক্ষ কণার সন্ধ্যান পেয়েছে তার নাম দিয়েছেন বোসন কণা।

এই মহাবিশ্বের বস্তুসামগ্রী তৈরীর মূল রসদ মৌলিক কণাসমুহ,সৃষ্টির আদিতে প্রথমে সৃষ্টি হয়েছিল সুপারনোভার মহারসায়নাঘারে যা পর্যাক্রমে সৃষ্টি করেছে এই মহাবিশ্বকে। সকৃতজ্ঞ অভিবাদন সেই মহাস্রষ্টাকে যিনি মানবকল্যানে ব্যয় করেছেন তাঁর মেধা ও শক্তিকে। ইহা এমন কোন গল্প নয় যে,বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে আবির্ভূত হয়েছে এই সুন্দর সজ্জিত খেলাঘর, এ এক বিশাল পরিকল্পনার মাধ্যামে অসীম শক্তির দ্বারা ব্যবস্থিত এক মহাজগৎ যা সৃষ্টি হয়েছে কোন এক অসীম দয়ালু মহাবিজ্ঞ বিজ্ঞানীর আপন ইচ্ছায়।

উপরের আলোচনায় আমরা সুক্ষাতিসূক্ষ বস্তুর কিছু পরিচয় পেলাম;এছাড়াও মহাবিশ্ব জুরে রয়েছে বৃহৎ ও বৃহত্তর মহাজাগতিক বস্তু সামগ্রী। তাহলে আমরা বলতে পারি আজকের বিজ্ঞানের এই আবিস্কারের অনুপ্রেরনাতেই দয়াময় ঐ পবিত্র গ্রন্থ সুস্পষ্ট ইঙ্গিত লিপিবদ্ধ করে দিয়েছেন যা সাধারন মানুষ বুঝতে পারেনি,হয়তো বুঝতে পেরেছিল কিছু গবেষকের দল। তাইতো আবারো চোখের সামনে ভেসে আসে,- এই সকল তাহাদের জন্য যাহারা চিন্তা ভাবনা করে।’ সূধী পাঠক,লক্ষ্য করুন নীচের আয়াতখানি,

وَالسَّمَاء ذَاتِ الْحُبُكِ

By the heaven containing pathways  ৫১:৭ পথবিশিষ্ট আকাশের কসম।

এখানে ذَاتِ ‘যাত’ শব্দটির শাব্দিক অর্থ ‘অধিকারী, মালিক(স্ত্রী), সত্তা, অস্তিত্ব, ব্যক্তিত্ব, স্বয়ং

أَلَّا يَسْجُدُوا لِلَّهِ الَّذِي يُخْرِجُ الْخَبْءَ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَيَعْلَمُ مَا تُخْفُونَ وَمَا تُعْلِنُونَ

২৭:২৫ তারা আল্লাহকে সেজদা করেনা কেন? যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর লুক্কায়িত বা অদৃশ্য বস্তুকে প্রকাশ করেন এবং জানেন যা তোমরা গোপন কর ও যা প্রকাশ কর।

ذَلِكَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ

৩২:৬ তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানী,পরাক্রমশালী,পরম দয়ালু।

উপরোক্ত আয়াতটিতে একটি বিষয় পরিস্কার যে আমাদের এই মহা বিশ্ব লুক্কায়িত বা অদৃশ্য বস্তুসম্ভারে পরিপূর্ণ। কি সেই বস্তু সমুহ যা মানুষ দেখতে পায়না?। তবে কি সেই লুকায়িত বস্তু সমুহ আজকের বিজ্ঞানের কৃষ্ণ পদার্থ? যা আজো বিজ্ঞান তার চাক্ষুস দৃষ্টিতে খুঁজে পায়নি কিন্তু স্বত:সিদ্ধের ন্যায় তার অস্তিত্বকে স্বীকার করে নিচ্ছে। একবার ভেবে দেখেছেন কি কি সাঙ্গাতিক তথ্য লুকিয়ে রয়েছে এই আয়াতে? এ এক বিষ্ময়কর তথ্য-‘তিনি আকাশ ও পৃথিবীর লুক্কায়িত বা অদৃশ্য বস্তুকে প্রকাশিত করেন।’ সূধী পাঠক এ যে কতবড় ইঙ্গিত একবার ভেবে দেখেছেন কি? এযে মহাজগতের বিবর্তনের ধারা-এ সৃষ্টির ক্রমবিকাশের ইঙ্গিত। প্রকৃত দৃষ্টিতে বিজ্ঞানের নতুন আবিস্কার কৃষ্ণ শক্তি ও কৃষ্ণ পদার্থই হল দৃশ্য পদার্থ সৃষ্টির প্রধান নিয়ামক। আজকের বিজ্ঞান নি:শঙ্কোচে ঘোষনা করছে কৃষ্ণশক্তি,কৃষ্ণপদার্থ,মহাজাগতিক তার-এরাই নানা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি করেছে এই মহাজাগতিক বস্তুনিলয়। তাহলে মহাজাগতিক বিবর্তনের এর চেয়ে বড় স্বীকৃতি আর কি হতে পারে? লক্ষ্য করুন কালের বর্ননা- যে সময়ে কোরআন নাযিল হয়েছে তার বহু কোটী বছর পূর্বেই এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে, অথচ আয়াতে বর্ণনার কাল কত নিখুত ভাবে সাধারন বর্তমানকে বুঝানো হয়েছে। ‘তিনি অদৃশ্য বস্তুকে প্রকাশিত করেন’-যা চিরকালের সত্য,চিরবর্তমান অর্থাৎ চলমান। এখানে অদৃশ্য থেকে দৃশ্যে রূপান্তরে প্রক্রিয়া চিরকালীন-অর্থাৎ সৃষ্টি থেকে শুরু হয়ে চলে আসছে,চলছে এবং অনন্তকাল চলবে। কি প্রজ্ঞাময় বর্ণনা! কি অন্তহীন বিবর্তনের ধারা। দেখুন কোরআন মণীষার স্বঃতসিদ্ধতা,এ যদি মানব রচিত হত তবে শুধু দৃশ্য বস্তুসমুহের বর্ণনায় বলা হত অদৃশ্য হতে দৃশ্যে প্রকাশিত করিয়াছেন। বর্ণনার এই বিজ্ঞতা কোরআনকে মহিমান্বিত করেছে বহুগুণে।

وَلِلّهِ غَيْبُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَإِلَيْهِ يُرْجَعُ الأَمْرُ كُلُّهُ فَاعْبُدْهُ وَتَوَكَّلْ عَلَيْهِ وَمَا رَبُّكَ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ       m~iv û“

 

১১:১২৩‘আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যাহাকিছু দৃষ্টির অগম্য,সকলই আল্লাহ্‌র। আর সকল কাজের প্রত্যবর্তন তাঁরই দিকে;অতএব,তাঁরই বন্দেগী কর এবং তারই উপর ভরসা রাখ,আর কার্যকলাপ সম্মন্ধে তোমাদের পালনকর্তা কিন’ বে-খবর নন।’

تِلْكَ مِنْ أَنبَاء الْغَيْبِ نُوحِيهَا إِلَيْكَ مَا كُنتَ تَعْلَمُهَا أَنتَ وَلاَ قَوْمُكَ مِن قَبْلِ هَـذَا فَاصْبِرْ إِنَّ الْعَاقِبَةَ لِلْمُتَّقِينَ    সূরা হুদ

১১:৪৯‘আর এই সমস্ত অদৃশ্য জগতের তথ্য তোমাকে অহী দ্বারা অবহিত করিতেছি যাহা ইহার পূর্বে তুমি জানিতেনা কিংবা জানিতনা তোমার সম্প্রদায়; ধৈর্য্যধারন কর,যারা ভয়করে চলে তাদের পরিণাম ভাল,সন্দেহ নেই।’

উপরোক্ত আয়াতগুলি একত্রে পর্যালোচনা করলে দেখাযায় ৩২:৬ আয়াতে অদৃশ্য জগতের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে; ৩৪:৩ আয়াতে অদৃশ্য সম্পর্কে ইঙ্গিত দানের পাশাপাশি তাদের নমুনা সম্পর্কেও ধারনা দেওয়া হয়েছে এবং আরও বলা হয়েছে যে,পবিত্র কোরআনে সে সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে।

১১:৪৯ আয়াতখানি লক্ষ্য করুন,এখানে সুস্পষ্টভাবে বলা হচ্ছে কোরআন অদৃশ্য জগতের তথ্য ভাণ্ডার, এই মহাগ্রন্থ শুধুই জীবন ব্যবস্থা নয়, এটি মানুষের ভাবনাচিন্তার এক অমিয় ভাণ্ডার,এটি বিজ্ঞানের সূতিকাঘার। এখানে বলাহচ্ছে ‘যাহা জানিতনা তোমার সম্প্রদায়’- কি পরিস্কার ধারনা! কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার পরেও প্রায় দেড় হাজার বছরে মানুষ অদৃশ্য জগতের সামান্যই জেনেছে তার অভিধা দিয়ে। সব অজানা রয়ে গেছে চোখের আড়ালে। কোরআনের বর্ণনায় এমন কতকি রয়েছে চোখের আড়ালে তার কি কোন হিসেব আছে? বেহেশত-দোযখের কথাই ধরুননা- সূর্যের মত অগণিত নক্ষত্র চোখের সামনে জ্বল জ্বল করতে দেখেও কি আমাদের মনে হতে পারেনা যে, দয়াময় আমাদের প্রত্যেকের জন্য একটি করে দোযখ্‌ বরাদ্ধ করলেও সবই প্রায় পড়ে থাকবে ফাঁকা। বেহেশত্‌ না হয় আপাতত চোখের আড়ালেই থাক!

সূধী পাঠক উপরে কসমিক তার নিয়ে এই যে সামান্য আলোচনা করা হল তার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত পবিত্র কোরআনেও খুঁজে পাওয়া যায়। আসুন খুঁজে দেখি-সূরা রাদ

اللّهُ الَّذِي رَفَعَ السَّمَوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لأَجَلٍ مُّسَمًّى يُدَبِّرُ الأَمْرَ يُفَصِّلُ الآيَاتِ لَعَلَّكُم بِلِقَاء رَبِّكُمْ تُوقِنُونَ

১৩:২ ‘দেখ,তিঁনিই আল্লাহ্‌ যিনি উর্ধদেশে স্থাপন করিয়াছেন আকাশ মণ্ডলীকে স্তম্ভ ব্যতিত; অতঃপর তিঁনি আরশের উপর অধিষ্ঠিত হইয়াছেন। তিঁনি চন্দ্র ও সূর্যকে করিয়াছেন নিয়মাধীন-প্রত্যেকেই একটি ব্যপ্তিকাল পর্যন্ত সঞ্চালনশীল; তিঁনি সকল বিষয় পরিচালনা করেন,নিদর্শন সমুহ প্রকাশ করেন যাতে তোমরা স্বীয় পালন কর্তার সাথে সাক্ষাৎ সম্মন্ধে বিশ্বাসী হও।’

শব্দ দুইটর একত্রে প্রচলিত বা দৃশ্য অর্থ হল ‘খুঁটি ছাড়া’ । بِغَيْرِ  হল এটি নাম বাচক শব্দমূল,এর সাথে بِ  অব্যয় যোগে অর্থ হয় ‘ছাড়া’। এই  غَيْرِ শব্দটির কিছু মূলগত বা অদৃশ্য অর্থ রয়েছে তা হল অতি ক্ষুদ্র বা অতি সঙ্কুচিত আকার যুক্ত। এই গাইর শব্দের ক্রিয়াবাচক শব্দ হল ‘ইগারাত’ যার বাংলা তরজমা হয় কোন কিছুকে প্যাঁচানো। এই ধারনা থেকে ধরে নেওয়া যায় غَيْرِ শব্দটি সুক্ষ কোন কিছু দ্বারা প্যাঁচানো বা সুক্ষ অথচ প্যাঁচানো কোন বস্তুর সাথে সংশ্লিষ্ট। তহলে মহাজাগতিক তারের একটা সংশ্লিষ্টতা এসে য়ায়। তবে মহাজাগতিক তার নিয়ে এখনো যেহেতু দুদোল্যমানতা রয়েছে ফলে এ নিয়ে জোর করে কোন কিছু প্রমাণ করার প্রয়োজণীয়তা আছে বলে আমরা মনে করিনা,শুধুমাত্র একটা প্রছ্‌ছন্ন ধারনার অবতারনা করা হল। আজকের বিজ্ঞানীরা একবাক্যে স্বীকার করেন যে,বিগব্যাঙ থেকে সৃষ্ট হয়ে আমাদের এই মহাবিশ্ব এত সুন্দর সাজে সজ্জিত হয়েছে ঐ মহাজাগতিক তারের বদৌলতে। অথচ দেখুন নিজে অদৃশ্যে থেকে কি সুন্দর সৌষ্ঠবে রূপ দিয়েছে এই বিশ্ব ভ্রহ্মাণ্ডের। যেন নিরাকার শিল্পী তার সৃষ্ট রসদ দিয়ে মনের মত করে আল্পনা এঁকেছেন,কিন্তু তার এই দৃশ্য আল্পনার মূল রসদ রয়ে গেছে অদৃশ্যে। তাইতো বলতে হয় সেই শ্বাস্বত:বাণী-‘যদি আমরা আসমানের কোন দরজা খুলিয়া ধরিতাম এবং তাহারা উহাতে আরোহণও করিত তাহা হইলে তাহারা বলিত; আমাদের চক্ষু বিভ্রান্ত হইয়াছে মোহাচ্ছন্নতায়। বরং আমরা সকলে যাদুগ্রস্ত হইয়াছি।’

সূত্র:- বিভিন্ন ওয়েভ সাইট, আল কোরআন দ্যা চ্যালেঞ্জ।

 

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান