মস্তিস্কে বিধাতার অবস্থান

 

وَمَا تَكُونُ فِي شَأْنٍ وَمَا تَتْلُو مِنْهُ مِن قُرْآنٍ وَلاَ تَعْمَلُونَ مِنْ عَمَلٍ إِلاَّ كُنَّا عَلَيْكُمْ شُهُودًا إِذْ وَمَا

 

تَكُونُ فِي شَأْنٍ وَمَا تَتْلُو مِنْهُ مِن قُرْآنٍ وَلاَ تَعْمَلُونَ مِنْ عَمَلٍ إِلاَّ كُنَّا عَلَيْكُمْ شُهُودًا إِذْ إِلاَّ فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ

10:61 বস্তুতঃ যে কোন অবস্থাতেই তুমি থাক এবং কোরআনের যে কোন অংশ থেকেই পাঠ করা কিংবা যে কোন কাজই তোমরা কর অথচ আমি তোমাদের নিকটে উপস্থিত থাকি যখন তোমরা তাতে আত্ননিয়োগ কর। আর তোমার পরওয়ারদেগার থেকে গোপন থাকে না একটি কনাও, না যমীনের এবং না আসমানের। না এর চেয়ে ক্ষুদ্র কোন কিছু আছে, না বড় যা এই প্রকৃষ্ট কিতাবে নেই।

Capture

সূধী পাঠক, উপরের আয়াতটি লক্ষ্য করুন, বক্তব্য বিষয়টি অত্যান্ত গুরুত্বপূ্র্ণ; পূর্বাপর আয়াতের সাথে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক ভাবেই বিবৃত হয়েছে বাণী টুকু। এখানে বিষয়বস্তু দু’টি অংশে বিভক্ত। প্রথম অংশে যে বিষয়টির উপর আলোকপাত করা হয়েছে তা হল, আমরা যখন কোন বিষয়ে আত্ম নিয়োগ করি তখন মহান স্রষ্টা আমাদের খুব নিকটে থাকেন। আর দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে মহান আল্লাহর কাছ থেকে তাঁর সৃষ্ট কোন কিছুই গোপন থাকেনা। এই কোন ছিছুর আকৃতি বর্ণণার মধ্যে রয়েছে এক বিষ্ময়কর তথ্য। ক্ষুদ্র কণা-তার চেয়েও ক্ষুদ্র অর্থাৎ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র; এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্রর মধ্যেই রয়েছে আজকের বিজ্ঞানের কণাতত্ত্ব।যাহোক আল্লাহ্ চাহেনতো এ বিষয়ে আমরা ভিন্ন পরিসরে আলোচনার চেষ্টা করবো। এখানে আমরা আত্মনিয়োগের বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখবো। এখানে উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ্ তাঁর বান্দার কাছাকাছি থাকার বিষয়টি পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন আঙ্গিকে বর্ণিত হয়েছে,কিন্তু এখানে বলা হয়েছে একটি বিশেষ প্রসঙ্গে, ‘যখন মানুষ কোন কাযে আত্ম নিয়োগ করে’ অর্থাত মানুষের মন যখন কোন নির্দিষ্ট দিকে গভীর অনুভূতি প্রবণ হয়;যা হতে পারে অধ্যয়ন, আরাধনা বা জাগতিক জীবনের প্রয়োজনীয় যে কোন কাজ।

আমরা জানি মানুষের এই আত্মনির্ভরতার বিষয়টি সম্পূর্ণই মস্তিস্ক সম্পৃক্ত। মনে মনে ভাবনাচিন্তা করা বা অনুভূতিপ্রবণ হওয়া, ভাব বিনিময় বা আবেগতারিত হওয়া সর্বোপরি যে কোন কাজে মনোযোগী হওয়া; ইত্যাদি সবই নির্ভর করে তার মস্তিস্কের বিশেষ অংশের কার্যকলাপের উপর। হয়তো বলবেন,এ গুলো মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট; আর এই বৈশিষ্টের কারণেই মানুষ ইতর প্রাণীর চেয়ে আলাদা। সঠিক কথা,এই বৈশিষ্টের কিছু কিছু নিম্ন প্রাণীর মধ্যেও সামান্যভাবে দেখা যায়। কিন্তু একটা বিশেষ বৈশিষ্ট ‘আরাধনা বা প্রার্থনা’ যা মানুষের মধ্যে প্রকট কিন্তু, অন্য প্রাণীর মধ্যে আছে কিনা তা বিজ্ঞান নিশ্চিত নয়।কিন্তু মস্তিস্কের বিবর্তনের ধারা বিবেচনা করলে ইতর প্রাণীর মধ্যে যতসামান্র হলেও থাকারই কথা। যদি থেকেও থাকে তা মানুষের কাছাকাছি নয়।

সূধী পাঠক, আপনার মনে কি কোনদিন এই প্রশ্নটি উঠেছে? আমরা কেন স্রষ্টার কথা ভাবি? মানুষের মনে কেন ধর্মানুভূতি জাগে?হয়তো বলবেন, স্বাভাবিক চিন্তা ভাবনার মতই স্রষ্টার কথা মনে আসে। জবাবটা কেমন যেন মানানসই হলনা! একটা কথা ভেবে দেখুন, মানুষ কখন ভাবে? যখন তার ভাবনার প্রয়োজন হয়-ক্ষুদা লাগলে খাবার কথা ভাবে; ব্যথা পেলে যন্ত্রনায় কাতরায়;আবেগ ভালবাসায় উদ্ভেলিত হয়; অর্থাৎ কোন একটা প্রয়োজনীয় সূত্র ধরেই মানুষের চিন্তাভাবনার সূত্রপাত ও তার দীর্ঘায়ণ ঘটে। কিন্তু স্রষ্টার কথা ভাববার জন্যে মানুষের এমন কোন প্রয়োজন নেই। মায়ের কোলে শিশুটি যখন কাঁদে তখন সে কিন্তু  স্রষ্টার চিন্তায় নয়,পেটের ক্ষুদা বা কোন যন্ত্রনায়। কিন্তু মজার বিষয় হল এই শিশুটিই যখন বয়ঃক্রমে জ্ঞান বুদ্ধির অধিকারী হয় তখন আপনাতেই সে স্রষ্টাকে নিয়ে ভাবনা চিন্তা করতে শুরু করে। হয়তোবা বলবেন, সে তার বাবা মাকে ভাবতে দেখে প্রভাবিত হয়। আমি কিন্তু ঠিক তা মনে করিনা! পিছন দিকে ফিরে তাকান, সেই আদিম যুগের মানুষ কেন সূর্যকে দেখে তার প্রণাম নিবেদন করেছিল? হয়তো সে ভেবেছিল শক্তিধর এই নক্ষত্রটিই তার দেবতা। ইতিহাসের পাতায় হয়তো দেখে থাকবেন আদিম যুগের মানুষ যখন ভবতে শিখেনি, উলঙ্গ দেহে বনে-বাদারে ঘুরে বেড়াত তখনও কিন্তু তার অর্চণা নিবেদন করতো কোন না কোন কল্পিত দেবতার উদ্দেশ্যে। হয়তো বলবেন এটি বিবর্তনেরই ধারাবাহিকতা। অতি সত্য কথা, বিবর্তনের পথ ধরেই আসে এই চেতনা। এখন কথা হল বিবর্তন ঘটে কার? কোন অঙ্গের বা মনের,মন তো দেহেরই কোন অংশের ক্রিয়া। তাহলে যে বিষয়টি এসে দাঁড়াল তা হল, যে ভাবেই হোক মানুষের মনে স্রষ্টার চিন্তা হওয়া মানবদেহেরই কোন অঙ্গের ক্রিয়া। বিজ্ঞান বলছে মন বলে আলাদা কোন অঙ্গ নেই;তা মস্তিস্কের কোন অংশের ক্রিয়াকলাপ। মনস্তত্ত বলছে মানুষের ভাবনা চিন্তার পিছনে একটা ঐশরিক ইন্দন (Devine inspiration) কাজ করে-তা হতে পারে ভাল ,হতেপারে মন্দ। এই ইন্দন টুকু বর্তমান বিজ্ঞানের কাছেও রহস্য হয়ে আছে। বর্তমান বিজ্ঞান প্রাণী দেহ নিয়ে যেমন যথেষ্ট গবেষণা করেছে তেমনি গবেষণা চলছে মানুষের মস্তিস্ক নিয়ে। আসুন দেখি মানুষের মস্তিস্ক নিয়ে বিজ্ঞান কি বলছে।

স্রষ্টার সকল সৃষ্টির মধ্যে মানুষের মস্তিষ্ক হল সবচেয়ে জটীল সৃষ্টি; আর এটি হল মানবদেহের জটীলতম অঙ্গ। সম্ববত স্রষ্টা তাঁর সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে মানুষকে স্রেষ্ট করে সৃষ্টি করার জন্যেই এমন ভাবে সৃষ্টি করেছেন।মানুষের মস্তিস্ক প্রায় ১০০ বিলিয়ন স্নায়ু কোষ ধারণ করে এবং সহস্র বিলিয়নেরও বেশী স্নায়ু তন্তু ধারণ করে যাদেরকে বলা হয় সিনোপসিস্ (synapses)। ইহা এক লক্ষ ঘটনাকে একসাথে এবং সারাজীনে কোটি কোটি ঘটনা ধারন করতে পারে।অধুনা বিজ্ঞানে এক শাখার উদ্ভব হয়েছে যা মানুষের ধর্মীয় অনুভুতি নিয়ে গবেষণা করছে। যার কাজ হল ধর্মীয় স্নায়ু প্রাণীবিজ্ঞান(neurobiology of religion,) গবেষণা করে মস্তিষ্কের অধ্যাতিক চক্রের ক্রিয়াকলাপ ব্যাখ্যা করা।

মানুষ যখন মসজীদ,গীর্জায় প্রার্থনায় বসে তখন তার মনে একটা অপরাধবোধ উৎপন্ন হয়। কতক বৈজ্ঞানীক বলছেন মানুষের মস্তিষ্কে বিধাতার বিন্দু (“God-spot”) বা আধ্যাতিকতার কেন্দ্র রয়েছে এবং তার অবস্থান হল মস্তিষ্কের টেম্পোরাল লোব কেন্দ্রে। এই লোবের সাথে সংযোগ রয়েছে সম্মুখ করটেক্সের যা মানুষের অনুভূতি কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। সুখের বিষয় এই যে স্রষ্টায় বিশ্বাসী না হলেও তাঁকে(স্রষ্টাকে) নিয়ে ভাববার মত বিশেষ স্থান মানুষের মস্তিস্কে রয়েছে। মানুষকে আধ্যাতিকতায় মগ্ন করার জন্যে মস্তিস্কে রয়েছে এন্টিনা। অনেকের মতে ধর্মানুভূতি মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনে; কারণ অধ্যাতিকতা মস্তিস্কের টেম্পোরাল লোবকে উজ্জিবীত করে। আর এ জন্যেই স্রষ্টা আমাদেরকে ছেড়ে যেতে পারেননা। আধ্যাতিকতার এই ‘উজ্জীবনে’ মুসলমানরা অবিশ্বাসীদের মত বিশ্বাস করেনা যে,‘স্রষ্টা’ মানব মস্তিস্কের সৃষ্টি।একটা বিষয় লক্ষ্য করুন,সেই আদিম মানুষ যখন তার নিত্য প্রয়োজন ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারতোনা তখন কিন্তু ঠিকই সে স্রষ্টাকে নিয়ে ভবতো। দু’হাত তুলে অজানা স্রষ্টার উদ্দ্যেশ্যে তার মনের প্রণতি নিবেদন করতো।

সম্ভবত আল্লাহ্ ঠিকই মানুষের মস্তিস্কে ‘স্রষ্টা-বিন্দু’ সৃষ্টি করেছেন কারণ এটাই তাঁর সৃষ্ট মানবকুলের সাথে সংযোগের মাধ্যাম। আমরা যদি তাঁকে বেশী করে জানতে চাই তবে এই মাধ্যামের উন্নতি সাধন প্রয়োজন।এই উন্নত কেন্দ্রটিই বর্তমানে অনুভূতি বা চিন্তা ভাবনার কেন্দ্রে বিবর্তিত হয়েছে। একে বলা হয় নতুন মস্তিস্ক বা চিন্তাভাবনার মস্তিস্ক। মস্তিস্কের এই অংশটাই আমাদেরকে উন্নত প্রাণী হিসেবে নিম্ন প্রাণী থেকে পৃথক করেছে; আর এই সুবাদেই আমাদের মন গভীর ভাবে ভাবতে পারে ও বিশ্বাসের ভিতকে শক্তিশলী করতে পারে।

সম্ভবত আল্লাহ মানুষের মস্তিস্কে স্রষ্টার চিহ্ন এঁকে  দিয়েছেন, এজন্যে যে তাঁর সৃষ্ট বিবেক সম্পন্ন প্রাণী এই মানুষ যেন তাঁকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে পারে; এটি তাঁর মহান ইচ্ছা। সম্ভবত এ উন্নত কেন্দ্রটি দিনে দিনে বিবর্তীত হয়ে আমাদের মস্তিস্কের নতুন পরিচিতি দানের মাধ্যামে আমাদেরকে শ্রেষ্ট পাণীতে পরিণত করেছে। আর এই চিন্তাভাবনার মধ্য দিয়েই মানুষ অর্জন করেছে মনুষত্ব, জয় করেছে প্রকৃতিকে, উন্নীত হয়েছে শ্রেষ্ট প্রাণীতে,শেষঅবদি নিম্ন প্রাণীর সাথে সৃষ্টি করেছে এক বিশাল ব্যবধান। শুধু তাই নয়, চিন্তাভাবনার মধ্য দিয়ে স্রষ্টার ধারনাতে বিশ্বাস হয়েছে দৃঢ়।
 মস্তিস্ক শরীর ও আত্মার মধ্যে পার্থক্য

যদিও বলা হয়ে থাকে যে টেম্পোরাল লোবই হল স্রষ্টাবিন্দুর বাসস্থান এবং আধ্যাতিকতা অর্জনের পিঠস্থান তবু এটি এন্টিনা স্বরূপ কাজ করে। এটি মানুষের আত্মার কেন্দ্র (locus)বিন্দু নয়; যদিও আল্লাহ আত্মা ফুঁকে দিয়েছেন প্রথম মানুষ আদমকে তথাপি প্রত্যেক মানুষের আত্মা আলাদাভাবে সৃষ্ট এবং তা শরীর ও মস্তিস্ক থেকে আলাদা। প্রকৃত পক্ষেই এই ত্রয়ীর মধ্যে এক বিশাল ব্যবধান। আমরা যখন গভীর প্রার্থনার মাধ্যামে আধ্যাতিকতার উন্নয়ন করি তখন তা ইলেকট্রো এনসেফালোগ্রাম (electro-encephalogram) পরীক্ষায় পরিস্কর ভাবে মস্তিস্কের টেম্পোরাল লোবের কম্পাঙ্ক তরঙ্গ পরিবর্তনের মাধামে পরিস্ফূটিত হয়ে উঠে। বর্তমানে FMRI (Functional Magnetic Resonance Imaging) and PET (Positron Emission Tomography) পরীক্ষার দ্বারা দেখা গেছে যে,প্রার্থনা বা ধ্যানের সময় মস্তিস্কের কয়েকটি অংশ শুধু কাজ করে,বাকী অংশগুলো তখন অকেজো থাকে,আর তা হল মস্তিস্কের সম্মুখভাগ (prefrontal cortex)যা মানুষের মনযোগ আনয়ন করে।পরীক্ষায় আরও দেখা গেছে যে, যখন রোগীর মস্তিস্কে সুক্ষ তরিৎদ্ভারের দিয়ে বিদ্যুত পরিচালনার মাধ্যামে টেম্পোরাল লোবকে আঘাত করা হয় তখন সেখানে অতিপ্রাকৃতিক বা ঐশরিক অনুভূতি জেগে উঠে। আবার এমনি অনুভূতি মানুষের ব্যক্তিগত সমস্যা বা রক্তে চিনির পরিমান কমে গেলেও (hypoglycemia-low blood sugar) জন্মায়। তখন মানুষ যেন আপন মনেই স্রষ্টাকে খুঁজে পায়। সূধী পাঠক কখনোকি লক্ষ্য করেছেন যে, চরম বিপদে সকলেই মুহর্মুহ স্রষ্টাকে স্মরণ করতে থাকে। একবারও কি ভেবে দেখেছেন, কেন তা করে! লক্ষ্য করে দেখবেন,প্রার্থনার সময় মানুষ অনুভবের মাধ্যামে খুব সহজে নিজেকে যেন স্বর্গীয় রাজ্যে হারিয়ে ফেলে। দেখবেন অপরাধী মানুষ কখনো কখনো অভিভূত হয়ে স্রষ্টার কাছে নিজেকে সমর্পন করে অনেকটা আশ্বস্থ বোধ করেন। তখন মনে হয় স্রষ্টা যেন খুব কাছ থেকে আমাদেরকে লক্ষ্য করছেন। আর এই প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ বলছেন,

وَإِذَا مَسَّ الإِنسَانَ الضُّرُّ دَعَانَا لِجَنبِهِ أَوْ قَاعِدًا أَوْ قَآئِمًا فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُ ضُرَّهُ مَرَّ كَأَن لَّمْ يَدْعُنَا إِلَى ضُرٍّ مَّسَّهُ كَذَلِكَ زُيِّنَ لِلْمُسْرِفِينَ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ

10:12 আর যখন মানুষ কষ্টের সম্মুখীন হয়, শুয়ে বসে, দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকতে থাকে। তারপর আমি যখন তা থেকে মুক্ত করে দেই, সে কষ্ট যখন চলে যায় তখন মনে হয় কখনো কোন কষ্টেরই সম্মুখীন হয়ে যেন আমাকে ডাকেইনি। এমনিভাবে মনঃপুত হয়েছে নির্ভয় লোকদের যা তারা করেছে।

وَإِذَا أَنْعَمْنَا عَلَى الْإِنسَانِ أَعْرَضَ وَنَأى بِجَانِبِهِ وَإِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ فَذُو دُعَاء عَرِيضٍ

41:51 আমি যখন মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করি তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং পার্শ্ব পরিবর্তন করে। আর যখন তাকে অনিষ্ট স্পর্শ করে, তখন সুদীর্ঘ দোয়া করতে থাকে।

অবশ্য কোন কোন বিজ্ঞানী দ্বিধাদ্বদ্ধে আছেন যে, মানুষের মস্তিস্ক তরঙ্গ স্রষ্টাকে সৃষ্টি করছে, না স্রষ্টা মস্তিষ্ক তরঙ্গ সৃষ্টি করছেন? কারণ তারা স্বীকার করছেন যে, প্রর্থনা বা ধ্যান মানুষের অন্তরে গভীর অনুভব ও ভালবাসার জন্ম দেয়। যখন মস্তিস্কের excitatory and inhibitory neurotransmitters উদ্দীপ্ত হয় এবং তাদের জৈবীক ও আবেগময় ক্রিয়া দ্বারা আমাদেরকে প্রভাবিত করতে থাকে। সাধারনতঃ মানুষ মনে করে আমাদের মনের এই অনুভব স্রষ্টা প্রদত্ত।(Ref-Web sight Islamic Reachers Int.

মস্তিস্ক

k

মানুষের মস্তিস্কের গাঠণিক কাঠামো প্রায় হুবহু  মেমাল প্রজাতির মস্তিস্কের গঠন; কিন্ত এই প্রজাতির যে কোন প্রাণীর দৈহিক আকৃতির অনুপাতে মস্তিস্কের আকৃতিও বড়। বড় প্রাণী হিসেবে তিমি বা হাতির মস্তিস্ক বড়,কিন্তু দৈহিহক আকৃতির তুলনায় তা মানুষের চেয়ে বড় নয়। পরীক্ষায় দেখা গেছে মানুষের মস্তিস্কের আকৃতি গড়পড়তা বোতলাকৃতি নাক সম্পন্ন ডলফিনের মস্তিস্কের চেয়ে দ্বিগুন আর শিম্পাঞ্জীর তিনগুন। অধিকতর সম্প্রসারণ দেখাযায় সেরিব্রাল করটেক্স (cerebral cortex,)বিশেষভাবে সম্মুখ ভাগে যে অংশ ব্যস্ত থাকে প্রধান প্রধান কাজে যেমন,নিজেকে নিয়ন্ত্রণ, পরিকল্পনা করা, reasoning , চিন্তাভাবনা করা ইত্যাদি। সেরিব্রাল করটেক্সের কছু অংশ দৃষ্টির কাজে ব্যপৃত থাকে। মানুষের সেরিব্রাল করটেস্কে নিউরাল পেশীকলার পুরো স্তর থাকে এবং তা এমনভাবে ভাঁজ করা থাকে যে প্রাপ্ত খালি জায়গা পুরো করতে পারে। করটেক্স চরিটি অংশে বিভক্ত থাকে,যথা- ১.সম্মুখ অংশ, ২.পেরিয়েটাল লোব, ৩.টেম্পোরাল লোব, ৪.অসিপটাল লোব, প্রতিটি অঞ্চল আবার বিভিন্ন অংশে বিভক্ত; যার যার কাজ আলাদা,যেমন, দৃষ্টি, মোটর নিয়ন্ত্রণ, ভাষা ইত্যাদি। মস্তিস্কের বাম ও ডান অংশ আকৃতিতে প্রায় সমান, উভয় পার্শ্বে বিভিন্ন অংশের পূণরাবৃতি রয়েছে।ভাষা সৃষ্টিতে উভয় অংশের অবদান থাকলেও বাম অংমের পাধান্য রয়েছে; ।

মোটা হাড়ের স্কাল দ্বারা মস্তিস্ক আবদ্ধ থাকার কারণে বাহ্যিক আঘাত থেকে সহজেই রক্ষা পায়। হারের অভ্যান্তরে সেরিব্রোস্পাইনাল তরলের মধ্যে মস্তিস্ক ভাসমান থাকে। মস্তিস্ক রক্তের স্রোত থেকে রক্ত-মস্তিস্ক ব্যারিয়ার দ্ধারা পৃথক থাকে; ফলে মস্তিস্ক সহজে আক্রান্ত হয়না। তবে সবল রক্ত প্রবাঞের দ্বার স্ট্রোক বা কোন রাসায়নিক বিষ যা নিউরো টক্সিন হিসেবে ক্রিয়া করে মস্তিস্ককে আক্রান্ত করতে পারে।

আত্মা

আত্মা হল মানুষের দেহে অমর অস্তিত্ব,ধর্ম, দর্শন এমন কি মনোজগতেও আত্মার ধারণা প্রকট। আত্মা বলতে সাধারন ভাবে যা বুঝায় তা হল ‘যে শক্তি বা অস্তিত্ব কোন বস্তুর মধ্যে প্রানের স্পন্দন জাগায় বা বেঁচে থাকতে সহযোগিতা করে বা নিস্প্রান বস্তু থেকে আলাদা রাখে। কিছু কিছু ধর্মীয় চেতনা অনুযায়ী শুধুমাত্র মানবাত্মার সাথেই একটা ঐশরিক সংযোগ রয়েছে। ক্যাথলিক ধর্মজাজক থমাস অকিনাস(Thomas Aquinas) এর মতে সকল প্রাণীর মধ্যেই আত্মা বা অ্যানিমা রয়েছে, তন্মধ্যে শুধুমাত্র মানবাত্মা অমর।

গ্রীক দার্শনিকদের মতে ঐশরিক স্পন্দন জীবন্ত বস্তুকে পরিচালিত করে। ফ্রাণ্সিস এম কর্নফর্ড(Francis M. Cornford)বলেন,আত্মা ঘুমিয়ে থাকে যখন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কর্মাবস্তায় থাকে; আর আত্মা জেগে থাকে যখন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঘুমায়,আত্মা জেগে থেকে প্রাণীকে তখন স্বপ্ন দেখায়। ইরিন রুড (Erwin Rohde) লিখেছেন যে, প্রাচীন পিথাঘোরীয়ান বিশ্বাস মতে প্রাণী দেহ থেকে বিমুক্ত হয়ে গেলে আত্মার আর প্রাণ থাকেনা,যমালয়ে ফিরে গিয়ে অবসর যাপন করে আর দেহে ফিরে আসার সুযোগ থাকেনা।

সক্রেটিসের ধারনা মতে প্লাটো বলেছেন যে, আত্মা হল কোন ব্যাক্তির অস্তিত্ব। যেহেতু দেহের মৃত্যু হয় আত্মা চক্রাকারে অন্য দেহে পূণর্জন্ম লাভ করে। প্লাটোর মতে আত্মা তিন অংশে গঠিত,যথা-

১.মন, ২.ভাবনা বা আবেগ, ৩.প্রয়োজন বা চাহিদা;সবক’টি অংশই সমন্বিত ভাবে কাজ করে।

থমাস একুইনাস (St. Thomas Aquinas (1225 – 1274))এর মতে আত্মা হল জীবন্ত দেহের প্রথম বাস্তবতা; তিনি প্রাণীর তিনটি আলাদা আলাদা  বৈশিষ্ট নিরুপণ করেন, উদ্ভিদ-খাদ্য গ্রহন করে ও বর্ধিত হয়, জন্তুর মধ্যে উদ্ভেদের চেয়ে অতিরিক্তস্বরূপ কর্মক্ষমতা রয়েছে, আর মানুষের মধ্যে জন্তুর চেয়ে বেশী আছে বুদ্ধি।

আত্মা প্রসঙ্গে ধর্মীয় অনুভূতী

প্রাচীণ মিশরীয় ধর্মমত অনুযায়ী প্রত্যেকটা প্রাণী দুই ধরনের উপকরণ দিয়ে তৈরী আর তা হল দৈহিক ও আত্মিক উপকরণ। প্রাচীণ ব্যাবীলণীয়রাও একই মত পোষণ করতেন। বাহাই(Bahá’í Faith) মতে আত্মা বিধাতার চিহ্ন। বাহাউল্লাহ বলেছেন যে, প্রাণী দেহের মৃত্যুর পরেও আতা শুধুমাত্র বেঁচেই থাকেনা, এটি অমর।তিনি আরও বলেন আত্মার উন্নতি মানুষকে ক্রমান্বয়ে বস্তু জগত থেকে আল্লাহর দিকে এগিয়ে দেয়।

বুদ্ধদের মধ্যে অনেকের মতে মৃত্যুর পরেও আত্মার ক্রিয়াকর্ম চলতে থাকে। তারা মনে করেন মানুষের অবচেতন মনে চেতনার সঞ্চয় থাকে,যা মৃত্যুর পরেও ক্রিয়াশীল থাকে। তিব্বতীয় বুদ্ধদের মতে মানুষের তিনটি মন থাকে, তন্মধ্যে একটি হল সুক্ষ মন যা মৃত্যুতেও পৃথক হয়না,আর একটি হল স্বপ্নিল মন (dreaming mind)বা অবচেতন মন আর অপরটি হল খসরা মন (gross mind); মানুষ যখন ঘুমায় তখন এই মনটি চলে যায়, অর্থাৎ কার্যকর থাকেনা। সুক্ষ মনের চেয়ে খসরা মন কম স্থায়ী, এবং মৃত্যুর পর আর থাকেনা। সুক্ষ মন যেহেতু মৃত্যুর পরেও চলমান থাকে এবং যখন ইন্দ্রিয় গ্রাহ্যতায় বাঁধা পড়ে তখন তার মধ্যে পুনরায় একটি সুক্ষ মনের সৃষ্টি হয় তার সমগ্র নিজস্বতা নিয়ে যা জাগতিক মানুষের মধ্যে থাকে। আধুনীক কালে পশ্চিমা বুদ্ধদের অনেকেই পুণর্জন্মে বিশ্বাস করেন খ্রীষ্টানদের ধারনা মতে প্রত্যেকটি আত্মা স্রষ্টার আলাদা আলাদা সৃষ্টি আর এই আংশের সৃষ্টি নিয়ে দু’ধরনের মতবাদ চালু রয়েছে; traducianism অনুযায়ী মানব শিশুর আত্মা আসে তার পিতামাতা থেকে। আবার preexistence theory মতে আত্মা মানুষ ভ্রূণ তৈরীর কিছু আগে সৃষ্টি হয়। ক্যাথলিকদের মতে আত্মা মানুষের অন্তরীণ অবস্থা এবং সবচয়ে মূল্যবান অংশ। এই আত্মার মাধ্যামেই মানুষ স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হয়ে উঠেছে। আত্মাই মানুষের মধ্যে আধ্যাতিক চেতনা জোগায়। যীশু খ্রীষ্ট যখন পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসবে তখন জীবিত কি মৃত সকল আত্মার বিচার করবেন। যে লোক তার পাপের প্রতি অনুতপ্ত না হয়ে বা স্রষ্টাতে অবিশ্বাসী হয়ে মারা যাবে সে বিচার দিনে সাজা প্রাপ্ত হয়ে চিরতরে নরকে নিক্ষিপ্ত হবে। তারা মনে করেন পুণর্জন্ম আত্মার ধারনার সাথে সামজ্ঞস্যপূর্ণ নয়।

ইসলামী ধারনা মতে পবিত্র কোরআন বলছে, সূরা

وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الرُّوحِ قُلِ الرُّوحُ مِنْ أَمْرِ رَبِّي وَمَا أُوتِيتُم مِّن الْعِلْمِ إِلاَّ قَلِيلاً

১৭:৮৫ তারা আপনাকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দিনঃ রূহ আমার পালনকর্তার আদেশ ঘটিত। এ বিষয়ে তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে।

اللَّهُ يَتَوَفَّى الْأَنفُسَ حِينَ مَوْتِهَا وَالَّتِي لَمْ تَمُتْ فِي مَنَامِهَا فَيُمْسِكُ الَّتِي قَضَى عَلَيْهَا الْمَوْتَ وَيُرْسِلُ الْأُخْرَى إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

39:42 আল্লাহ মানুষের প্রাণ হরণ করেন তার মৃত্যুর সময়, আর যে মরে না, তার নিদ্রাকালে। অতঃপর যার মৃত্যু অবধারিত করেন, তার প্রাণ ছাড়েন না এবং অন্যান্যদের ছেড়ে দেন এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।

সূধী পাঠক, উপরের আয়াতটি লক্ষ্য করুন, কি পরিস্কার বর্ণনা; মানুষের মৃত্যুকালে তার প্রাণ বিয়োগ হয় আর ঘুমের ঘোরেও দেহে থাকেনা। কি বিতর্কিত বিষয়! যে বিজ্ঞান আত্মাকেই সমর্থন দেয়না সে কি এ বিতর্কের কোন সমাধান দেবে? বিজ্ঞান নাইবা মানলো, হতাশ না হয়ে আমরা বরং আমাদের মত করে ভেবে দেখি। 39:42 আয়াতে দেখা যাচ্ছে মানুষের মৃত্যুকালে আত্মার বিয়োগ হলে তা আর দেহে ফিরে আসেনা; অর্থাৎ স্থায়ী ভাবে চলে যায়। আবার ঘুম ঘোরে যখন বিয়োগ ঘটে তা হয় অস্থায়ী বিয়োগ অর্থাত ঘুম ভাঙলে ফিরে আসে। আমরা জানি প্রাণীর মৃত্যু ঘটলে তার মস্তিস্কের ক্রিয়াকলাপ স্থায়ী ভাবে বন্ধ হয়ে যায়; কিন্তু ঘুমের ঘোরে তা ঘটেনা। তা হলে প্রাণকে মস্তিস্কের ক্রিয়া বলেও আক্ষায়িত করা চলেনা; কারণ প্রাণী দেহে মস্তিস্কের ক্রিয়া বন্ধ করা চলেনা, বন্ধ হলে দেহের মৃত্য ঘটবে। বিজ্ঞানও তাই বলে। আমরা মস্তিস্কের ক্রিয়াকলাপক দুইটি প্রধান ভাগে ভাগ করতে পারি এক হল প্রাণী দেহের প্রতিটি কোষকে জীবন্ত রাখা আর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গকে সেময়োচিত সঠিক নির্দেশনা দিয়ে কর্মক্ষম করে তোলা। মানুষ যখন ঘুমের ঘোরে থাকে তখন মস্তিস্কের দ্বিতীয় কাজটি প্রায় বন্ধ থাকে। তাহলে হতে পারে উক্ত আয়াতে ঘুমের ঘোরে প্রাণ বিয়োগের মধ্য দিয়ে দেহের এই নিঃস্ক্রিয়তা আনয়ন করা হয় (আল্লাহই জানেন ভাল)।এবার যুক্তির খাতিরে বলা চলে মানুষের মস্তিস্কের এই কর্মোদ্দিপণা বন্ধ হয়ে যাওয়াকেই বলে প্রাণ বিয়োগ, আর যখন তা স্থায়ীভাবে ঘটে তখন মস্তিস্কেরও মৃত্যু ঘটে আর অস্থায়ী বিয়োগ ঘটলে মস্তিস্কের বিশ্রাম হয়। আমরা উপরে প্রাচীন বুদ্ধদের ধারনা থেকেও দেখেছি যে,ঘুমঘোরে মানুষের খসরা মন দেহ থেকে বেরিয়ে যায়। জেগে উঠলে পুনরায় ফিরে আসে। মৃত্যু ঘটলে এই মন আর ফিরেনা। আমরা আরও একটা বিষয় অবগত হয়েছি যে, মস্তিস্কের ক্রিয়া কলাপ মানুষের দেহের সাথে সম্পর্কিত এবং তার কাজ বিভিন্ন অংশে বিভক্ত। মস্তিস্ক আক্রান্ত হলে দেখা যায়,যে অংশ নিঃস্ক্রিয় হয় তার আনুষাঙ্গিক দেহের অংশও অকর্মন্য হয়ে পরে,কিন্তু মরে যায়না।বিজ্ঞান কিন্তু এ ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা শূণ্য। কোন প্রাণীর যখন স্থায়ী প্রাণ বিয়োগ ঘটে তখন মস্তিস্কের সকল কাজ স্বাভাবিক থাকা অবস্থায়ও ঘটতে পারে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞান বলছে যে, মস্তিস্কের ক্রিয়া বন্ধ হয়েই প্রাণী মৃত্যু বরণ করে। এ ক্ষেতে আমরা দ্বিমত পোষন করি, কারণ একটু ভাবনা চিন্তা করলেই দেখা যায় যে,মস্তিস্কের বিভিন্ন অংশ দেহের বিভিন্ন অংশকে সচল রাখে আবার তারা একসাথে না মরলে প্রাণীরও মৃত্যু ঘটেনা, তাছাড়া মস্তিকের কোন অংশই মরেনা নিঃক্রিয় হয়। মস্তিস্কের বিভিন্ন অংমের আলাদা আলাদা নিঃস্ক্রিয়তায় প্রাণীর মৃত্যু ঘটেনা বরং হঠাত করেই ঘটে। আর এই হঠাৎ ঘটার মধ্যই যত রহস্য; অর্থাত করেই মস্তিস্ক থেকে প্রাণটা বেরিয়ে যায়,তখন দেখা যায় যে দেহকোষগুলো জীবিত থেকেও কোন কর্ম করতে পারেনা। এই আলোচনায় একটা বিষয় পরিস্কার হয়ে গেল যে মৃত্যুর সময় মস্তিস্কের কর্মক্ষমতার বাইরেও এক কিছু বিয়োগের মাধ্যামে প্রণীকে নিঃস্প্রাণ করে তোলে।

আত্মা সম্পর্কে আধুনিক বিজ্ঞানের মতামত অস্পষ্ট। আধুনিক বিজ্ঞানীরা ‘আত্মা’ শব্দটিকে মনের কাব্যিক সংস্করণ বলে মনে করেন।নানা পরীক্ষা নীরিক্ষায় বিজ্ঞান মনে করছে আত্মা বিষয়টি মানুষের একটা বিশ্বাস মাত্র। মানুষের মস্তিস্কের ক্রিয়াকলাপই হল আত্মার কাজ। মস্তিস্ক বেঁচে থাকাই হল আত্মার উপস্থিতি। মস্তিস্কের সম্মিলিত ক্রিয়াকর্মেই আত্মার অবস্থান।

আধুনিক দার্শনিকরা মনে করেন যে মন শরীরেরই অংশ; এর কোন আলাদা অস্তিত্ব নেই।বর্তমান বিজ্ঞানেরও এই মত, বিশেষ করে সমাজ-প্রাণীবিজ্ঞান,কম্পউটার বিজ্ঞান ও স্নায়ু বিজ্ঞান। শরীরের যে কোন পরিবর্তনের জন্য মনের ক্রিয়া সম্পুর্ণরূপে বিজ্ঞানের মাধ্যামে ব্যাখ্যা করা যায়।

সূত্র-Human brain – Wikipedia, the free encyclopedia

অতি ধার্মিকতাকে কোন কোন গবেষক টেম্পোরাল লোবের অসুস্থতা বা সন্যাসরোগ (TLE)হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সন্যাস বা মৃগী রোগীদের এক বিরাট অংশের উপর নীরিক্ষণ করে দেখা গেছে যে, এই অসূখে আক্রান্ত হওয়ার আগে তারা সূবর্ণ বলয় দেখতে পায় যা তাদেরকে স্রষ্টার সাথে সংযুক্ত করে আবার কখনো কখনো অলৌকিক বাণী শুনতে পায় এবং সাথে অলৌকিক দৃশ্যাবলীও দেখতে পায়। কোন কোন অমুসলিম বিজ্ঞানী বলে থাকেন যে আমাদের নবী রসূলরা এই রোগে আক্রান্ত ছিলেন। কিন্তু অত্যাধুনিক গবেষকরা সন্দেহ পোষন করছেন যে, মৃগী রোগের সাথে ধার্মিকতার কোন সম্পর্ক নেই। রোগীদের বক্তব্য বিষয়টি অতিপ্রাকৃতিক উপস্বর্গ।

সূধী পাঠক, আমরা জানি বিজ্ঞান সত্যের উপাসক, প্রকৃত বিজ্ঞান কতৃক স্থিরীকৃত বিষয় মিথ্যে হতে পারেনা। াও প্রসঙ্গে একটা কথা না বললেই নয়; তা হল বিজ্ঞান ও বিজ্হানী। একজন বিজ্ঞানীর সব কথাই বিজ্ঞান নয়। বিজ্ঞানীর প্রকল্পিত বিষয় যখন সত্যের কষ্টি পাথরে যাঁচাই হয়ে সনদ প্রাপ্ত হয় তখনই তা বিজ্ঞান হয়ে উঠে। উপরে নবী রসুল সম্পর্কে কটূক্তি থাকলেও তা কিন্তু বিজ্ঞান হয়ে উঠেনি।

নিবীর নীরিক্ষণ থেকে একটা বিষয় পরিস্কার হয়ে উঠে যে, মানুষ যখন আরাধণায় নিমগ্ন হয় এবং তা যদি হয় গভীর ঐকান্তিকতায় পরিপূর্ণ তখন মানুষের টেম্পোরাল লোব উদ্দীপ্ত হয়। আমরা দেখেছি টেম্পোরাল লোবের নানা কাজ,তন্মধ্যে আরাধনায় স্রষ্টার প্রতি নিগূঢ় ভক্তির উদ্রেক করাও একটা কাজ। আবার এই আরাধনার নিয়মিত অণুশীলন দ্বারা এই ভক্তির গভীরতাকেও উন্নীত করা যায়।  কখনো কখনো (বিরল ঘটনা) দেখা যায় এই অনুশীলনের সময় মানুষের মনোবৈকল্য দেখা দেয় যা হতে পারে টেম্পোরাল লোবের উদ্দীপ্ততা মস্তিস্কের ধারন ও সহনশীলতার বাইরে চলে যায়। তখন এই সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে আর এ জন্যে এ কথা বলা চলেনা যে মৃগী রোগের কারণে ধার্মীকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার কখনো কখনো এরকমও দেখা যায় যে, মানসিক ভাবে ভারসাম্যতা কমে গেলে কেউ কেউ (ক্ষেত্র বিশেষে) ধর্ম কর্মের দিকে খুব বেশী ঝুকে পড়ে; তাতেও এ কথা বলা যায়না যে মানসিক ভারসাম্যহীনরা ধার্মীক হয়ে উঠে। এরকম তখনই হতে পারে যখন টেম্পোরাল লোবে ধর্মানুভূতি সৃষ্টির অংশটুকুর উদ্দীপনা অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়ে কউ মানসিক ভারসাম্য হয়ে পড়ে।

যাই হোক সমগ্রিক আলোচনা থেকে একটা বিষয় পরিস্কার যে,মানুষের মস্তিস্কে ধর্মানুভুতি সৃষ্টির ব্যবস্থা রয়েছে; যার উদ্দীপ্ততা মানুষকে কঠোর ধর্মানুরাগী করে তোলে।মস্তিস্কের এই বিশেষ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে মানুষের সাথে যদি তার স্রষ্টার কোন যোগসূত্র স্থাপিত হয় তাতে অবাক হওয়ার যেমন কিছু নেই আবার তাকে পাগলামী বা মৃগী রোগও বলা চলেনা। আবার মৃগী বা সণ্যাস রোগে আক্রান্ত রোগীর ধর্মানুরাগকেও সাধারন বলা চলেনা। ধর্মানুরাগীরা সাধালনতঃ এই রোগে আক্রান্ত হয়না। বিষয়টি সম্পূর্ণই নির্ভর করে মস্তিস্কের টেম্পোরাল লোবের সহনশীলতার উপর।বিজ্ঞান বলছে এই টেম্পোরাল লোবই মানুষের মনোজগত হিসেবে কাজ করে; আর উপরের সার্বিক আলোচনা থেকে পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে  যে,মানুষের এই মনোজগতে স্রষ্টাকে নিয়ে ভাববার একটা পরিবেশ রয়েছে,যা স্রষ্টাকে সংযুক্ত করে তার সৃষ্টির সাথে। মহান স্রষ্টা সম্ভবত সৃষ্টির প্রাক্কালে মানুষের এমন কি সকল প্রাণীর মস্তিকেই এঁকে দিয়েছেন এই বিশেষ কেন্দ্র।

উল্লেখ্য যে, ১৯৯৪ সাল  অবদি আমেরিকান সাইক্রিয়াটিক এসোসিয়েশন শক্ত ধর্মানুভূতিকে মানষিক বৈকল্য বলে উল্লেখ করত; কিন্তু এখন তারা বিশ্বাস করেন যে, ধর্ম মানুষের মনে সুস্থতা আনয়ন করে। ধর্মীয় কোন আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যামে আমরা যখন গভীর আরাধনায় মগ্ন হই তখন তা আমাদের মস্তিস্কের টেম্পোরাল লোবের ক্রিয়াকর্মে প্রতিফলিত হয়। অতিন্দীয়রা তাদের অনুভুতি ব্যাক্ত করতে গিয়ে বলে থাকেন যে, যখন কোন ঐশরিক সংবাদ আসে তখন তারা অলৌকিক শব্দ শুনে এমনকি দৃশ্যাবলী দেখে ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে পড়েন,কখনো কখনো শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন, শরীরে কম্পন ও হয়ে থাকে। আমরা ইতিহাসের পাতায় দেখেছি নবী রসুলদের ওহী প্রাপ্তির সময় এমনটা হয়ে থাকতো। নীরিক্ষায় দেখা গেছে যে,সাধারন মানুষের তুলনায় ধার্মীক ব্যাক্তিদের দুঃশ্চিন্তা  মুক্ত হওয়া সহজ। তুলনামূলক নিম্নরক্তচাপে ভোগেন। কখনো কখনো অধিক আয়ুষ্কাল প্রাপ্তিও দেখা গেছে।

يُنَزِّلُ الْمَلآئِكَةَ بِالْرُّوحِ مِنْ أَمْرِهِ عَلَى مَن يَشَاء مِنْ عِبَادِهِ أَنْ أَنذِرُواْ أَنَّهُ لاَ إِلَـهَ إِلاَّ أَنَاْ فَاتَّقُونِ

16:2 তিনি স্বীয় নির্দেশে বান্দাদের মধ্যে যার কাছে ইচ্ছা, নির্দেশসহ ফেরেশতাদেরকে এই মর্মে নাযিল করেন যে, হুশিয়ার করে দাও, আমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। অতএব আমাকে ভয় কর।

رَفِيعُ الدَّرَجَاتِ ذُو الْعَرْشِ يُلْقِي الرُّوحَ مِنْ أَمْرِهِ عَلَى مَن يَشَاء مِنْ عِبَادِهِ لِيُنذِرَ يَوْمَ

40:15  তিনিই সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী, আরশের মালিক, তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা তত্ত্বপূর্ণ বিষয়াদি নাযিল করেন, যাতে সে সাক্ষাতের দিন সম্পর্কে সকলকে সতর্ক করে।

 

One thought on “মস্তিস্কে বিধাতার অবস্থান”

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান