চাঁদে ভ্রমন -JOURNEY TO THE MOON

 

لَتَرْكَبُنَّ طَبَقًا عَن طَبَقٍ

৮৪:১৯ নিশ্চয় তোমরা এক সিঁড়ি থেকে আরেক সিঁড়িতে আরোহণ করবে।

الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ طِبَاقًا مَّا تَرَى فِي خَلْقِ الرَّحْمَنِ مِن تَفَاوُتٍ فَارْجِعِ الْبَصَرَ هَلْ تَرَى مِن فُطُورٍ

৬৭:৩ তিনি সপ্ত আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। তুমি করুণাময় আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টিতে কোন তফাত দেখতে পাবে না। আবার দৃষ্টিফেরাও; কোন ফাটল দেখতে পাও কি?

أَلَمْ تَرَوْا كَيْفَ خَلَقَ اللَّهُ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ طِبَاقًا

৭১:১৫ তোমরাকিলক্ষ্যকরনাযে, আল্লাহকিভাবেসপ্তআকাশস্তরেস্তরেসৃষ্টিকরেছেন।

 

সূধী পাঠক উপরের্‌ আয়াত তিনটিতে একই শব্দ طَبَقٍ যার অর্থ ‘স্তরে স্তরে’ ব্যবহৃত হয়েছে। মহান আল্লাহ এই শব্দটি দ্বারা স্তরের পর স্তর বুঝিয়েছেন।আয়াত ৮৪:১৯ এ কি বলতে চেয়েছেন। পরিস্কার ভাবেই বুঝা যাচ্ছে মানবজাতির ক্রম উন্নতির কথাই বলেছেন। কিন্তু একানে ৮৪:১৮ নং আয়াতে চাঁদের কথা বলে এই আয়াতে ক্রমোন্নতির কথা বলার মাঝে কোন ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে উঠে? প্রায় ১৪০০ বছর মানুষ এই ইঙ্গিত বুঝেনি,বুঝেছে তখন যখন বিজ্ঞান মহাজগতে পাড়িজমিয়ে চন্দ্র পৃষ্টে আরোহন করলো((September 12, 1969) ঠিক তখন।। জানিনা কোথায় আমাদের ব্যর্থতা,বুঝেও না বুঝার ভান করার মধ্যে কি যে লুকিয়ে রয়েছে তা আল্লাহই ভাল জানেন। বিশ্বাসীর হতাশ হলেও অবিশ্বাসীরা কিন্তু ঠিকই বুঝে নিয়েছে এই বিষ্ময়কর আয়াতের তাৎপর্যো। চন্দ্র বিজয় মানব ইতিহাসের এক চাক্ষুষ বিজয়। অসম্ভব সম্ভব হল,মানুষ এক ধাপ থেকে আরেক ধাপে উন্নীত হল। মহান আল্লাহ বলেছেন মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি থেকে। বিজ্ঞান জগতের অনেকেই তা মেনে নিলেননা,বিংশ শতাব্দীতে এসে খোদ বিজ্ঞানই বললো,মানব দেহের সকল উপাদানই রয়েছে মাটিতে এমনকি, প্রাণী কোষের সেই বিষ্ময়কর অংশ ডি এন এ তৈরীর মূল উপাদান এমাইনো এসিডের সকল উপাদাই মাটিতে নিহিত। এই আবিস্কার কি মানুষের উন্নত স্তরে উন্নীত হওয়ার সুভ লক্ষন নয়! আজকের বিজ্ঞান সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বকে আবিস্কার করেছে,যা কোরআনের পাতায় বর্ণিত হয়ে আছে মহা সোচ্চারে। একি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা নয়। তাইতে মহান আল্লাহ আক্ষেপ করে ৮৪:২০ আয়াতে বলছেন ‘অতএব, তাদের কি হল যে, তারা ঈমান আনে না?’ তার পরেও কি বলবেন, পবিত্র কোরআন মানব রচিত দর্শন। সুধী পাঠক আমাদের বিম্বাস কিন্তু এখনও অবিশ্বাসীদের মনে ছায়াপাত করতে পারেনি। তাদের মানসচক্ষু আজও বিধাতার ছায়া দেখতে পায়নি। প্রকৃতির প্রতিটি অনুতে পরমানুতে কি তা ভগ্নাংশে যে বিধারতার পরশ লেগে আছে,তাকে দেখতে না পাওয়ার মধ্যে শুধু চিত্তেরই বলিদান হয়নি হয়েছে সেই মানব স্বত্তারও যারা আজও তাদের (অবিশ্বাসীদের)অন্তর্জগতে বিশ্বাষের বৃষ্টি বর্ষাতে পারেনি।

সূধী পাঠক,হয়তো বলবেন,এ বিজয় মানুষের বিজয়,বিজ্ঞানের বিজয়! এতে কোরআনের বিজয় কোথায়? প্রকৃতপক্ষেই এটি একটি বাস্তব প্রশ্ন!সূধী পাঠক আমাদের জেনে রাখা দরকার,যে, পবিত্র কোরআনতো কোন প্রতিযেগিতায় নামেনি!বা বিজ্ঞানের সাথে কোন প্রতিদ্ধন্দিতাও নেই। বিজয়ের কোন প্রশ্নই উঠেনা। পবিত্র কোরআন একটি প্রতিবেদন,যার পাতায় পাতায় মানুষের কল্যানকর কিছু বাণী বর্ণীত হয়ে আছে। কল্যাণকর শব্দটির পরিধিী ব্যপক;এর মধ্যে নিহিত রয়েছে মানুষের আত্মিক,সামাজিক ও ও প্রযুক্তিগত কল্যাণ। পবিত্র কোরআনকে আমরা ধর্ম গ্রন্থ বলেই জানি; ফলে তার যে পরিধি তাতে মানুষের আত্মিক কল্যানই শুধু থাকার কথা; কিন্তু বিষ্ময়কর ভাবে গ্রন্থটি সম্ভাব্য সকল প্রকার কল্যাণের সন্ধান দিয়েছে। আর এই ধারণাগুলোই এই পবিত্র গ্রন্থটিকে বিষ্ময়কর করে তুলেছে। অসম্ভব দক্ষতাপূর্ণ কোন নিদর্শন দেখতে পেলেই মানুষ অবাক হয়,তাই পবিত্র কোরআন যখন তার স্বাভাবিকতার বাইরে কিছু বর্ণনানা করে তখনই আমরা অবাক বিষ্ময়ে বলি এ যে নিদর্শন! এ বিষ্ময়, এ miracle!

বিবর্তনের ইতিহাস থেকে আমরা দেখতে পাই মানুষ ক্রমবিবর্তনের ধারায় তার নিজের অস্তিত্বকে সময়ের ব্যবধানে শক্তিশালী করে তুলছে,সেই সাথে তার মস্তিকের ক্রমোন্নতি ঘটছে। মানুষ তার সাধ্য সাধনা দিয়ে জীবন যাত্রাকে উন্নত করে তুলছে। ক্রমবিকাশ ঘটছে জ্ঞান বিজ্ঞানের। সময়ের দীর্ঘ পরিধীতে মানুষের মেধা ও অভিধার ক্রমোন্নতি ঘটছে। যা কিছু ঘটে চলেছে,সবই প্রকৃতির নিয়মের মধ্যেই হচ্ছে।এ ক্ষেত্রে কোরআনের অবদান কি? একটা জটীল প্রশ্ন! উত্থিত হয়ে আসছে দিনের পর দিন।

সুধী পাঠক,কোথাও কি এমনটা দেখেছেন যে,কোরআন দাবী করেছে যে,সে এই ক্রমবিকাশের নিযন্ত্রা,বা কোরআনে এমন কোন ফর্মূলা আছে যা দিয়ে মানুষ উন্নতির চরম শিখরে উঠতে পারবে! পবিত্র কোরআন শুধু সোচ্চার হয়ে বলেছে,যিঁনি কোরআনের রচয়িতা,একমাত্র তিঁনিই এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা ও সকল নিয়মের প্রণেতা। তার নিয়মেই চলছে এই মহাবিশ্ব এই মহাপ্রকৃতি।

সূধী পাঠক,বিজ্ঞানের হিসেব মতে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার ১৫ শত কোটী বছর আগে। আর তখন থেকেই সৃষ্টি হয়েছে মহাবিশ্বের যত নিয়মকাণুন;আর এই নিমকাণুনের সকল পরিবর্তন ও পরিবর্ধন ও তিঁনিই করছেন প্রয়োজন মত। পবিত্র কোরআনতো মহাবিশ্বের নীতি নিয়ম নিয়ে অবতীর্ণ হয়নি। এটি এসেছে মানব কল্যাণে। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে আমরাজানি পবিত্র কোরআন এসেছে মানব সৃষ্টির অনেক পরে;৫৭০খৃষ্টাব্দে। মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস তারচেয়েও অনেক অনেক পুরানো। আর সেই বিবর্তন চলছে প্রকৃতির নিয়মে।বিবর্তনের ধারায় মানুষ যখন অনেকটাই বিকষিত হয়ে উঠেছে তখনই কোরআন এসেছে মানুষের এই বিকাশমান মেধাকে সহযোগিতা করতে;ক্রম বিকাশকে ত্বরাণ্বিত করতে। বিকশিত ধারায় বিজ্ঞান যখন সবে মাথা তুলেছে তখনই কোরআন তার সামনে আলোকবর্তিকা হয়ে উজ্জলভাবে প্রজ্বলিত হয়ে উঠেছে। তার পাতায় পাতায় তুলে ধরেছে বিজ্ঞানের নানা পথরেখা। স্থানে স্থানে বিজ্ঞানকে বলেছে ‘ভাবুকদের জন্যে রয়েছে চিন্তাভাবনার বিষয়’।ধীরে ধীরে বিজ্ঞান পরিপুষ্ট হয়ে উঠেছে।কোরআন প্রতিযেগিতায় নামেনি,পরিপুরক হয়ে বন্ধুর বেশে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।

সূধী পাঠক,হয়তো বলবেন,বিজ্ঞানের ধারক বাহকরাতো কোরআন পড়েনি,কোরআন পড়ে তাদের গবেষনা কাজ করেনি? সে দায় কি আপনি পবিত্র কোরআনকে দেবেন?কোরআন এক বিকাশমান বৈজ্ঞানীক তথ্যপূর্ণ গ্রন্থ হয়ে আপনার কুলুঙ্গিতে শোভা পাচ্ছে, আপনি অভিমান ভরে,হিংসার ছলে তাকে স্পর্শ করছেননা! তাকি তার দোষ?আপনার অভিমানে কোরআনের কোন বাণীতো মুখ ঘুরিয়ে নেয়নি; তাহলে তাকে প্রতিযোগী বলবেন কেন?সেতো আপনার সহায়ক হয়ে আপনার পিছে পিছে ঘুরে ফিরছে। একবার উচ্চারণ করে দেখুন,একবার ভেবে দেখুন কি বলছে সে!আপনি মুখ ঘুরিয়ে রেখেছেন,অভিমান ভরে বলছেন এ মুসলমানের ধর্মগ্রন্থ,আমার জানার বিষয় নয়! না!সূধী পাঠক,আপনি অমুসলিম বলে কোরআন আপনার শত্রু নয়; আপনার বন্ধু। কোরআন এসেছে মানুষের জন্যে,বিশ্বের জ্ঞান ভাণ্ডারকে পূর্ণ করার জন্যে। আপনার চিত্তকে পুত পবিত্র ও সুন্দর করে গড়ে তোলার জন্যে।

সূধী পাঠক এ পর্যোন্ত এসে একটা কৌতুহল দমন করে রাখতে পারছিনা! তা হল, বিজ্ঞান কি কোরআনের সহযোগিতা নিচ্ছেনা? আমরা জানিনা এর জবাব! যদি বলা হয় নিচ্ছেনা তবে বাহবা দিতেই হয়;কারণ আপন মেধা ও অভিধা দিয়ে এ পর্যোন্ত এগিয়ে আসার জন্যে।তবে বলা চলে যে,কোরআনের সহযোগিতা নিলে হয়তোবা বিজ্ঞানের বর্তমান উন্নয়ন আরও বহু আগেই চলে আসতো। আর যদি বলা হয় বিজ্ঞান পবিত্র কোরআনকে বুঝতে পারেনি তবে সে দায় বর্তায় সেই শ্রেণীর উপর যারা পবিত্র কোরআন নিয়ে ভাবনা চিন্তা করে।কারণ মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ করে তাকে মানুষের কাছে বোধগম্য করে তুলে ধরার দ্বায়িত্ব দিয়েছে ভাবুক শ্রেণীর উপর। এ ব্যর্থতা তাদের।

পবিত্র কোরআন যখন অবতীর্ণ হয় তখন মানুষের বিকশিত জ্ঞানের ধারা আজকের পর্যায়ে ছিলনা।কোরআনের ভাবনা চিন্তা করার মত আয়াতগুলো সাধারনের চিন্তার বাইরে ছিল,আর সে কারণেই পবিত্র কোরআন ভাবুকদের কে বারবার আহ্বান করেছে। দূর্ভাগ্যবশতঃ সেই ভাবুক শ্রেণী কোরআন পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বলে বেশী নাড়াচাড়ার সাহস করেনি;ফলে বিজ্ঞানের এই সহায়ক গ্রন্থটি বিজ্ঞান জগতে প্রবেশ করতে পারেনি। তাই বলে কি তার মূল্যবান তথ্যগুলো ম্লান হয়ে গেছে? না! সূধী পাঠক মোটেই ম্লান হয়নি,তবে ব্যর্থ মানুষগুলোর ব্যর্থতার দায় নিজের কাঁধে নিয়ে ঘুমরে কাঁদছে। সূধী পাঠক,আসুন আমরা সকলে মিলে এই পবিত্র গ্রন্থটির চোখের জল মুছে দেই, মাথা উচু করে বলি সর্বশ্রেষ্ট এই গ্রন্থটি চিরকালের জন্যই সর্বশ্রেষ্ট।

THE MOON HAS SPLIT

চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে

সূধী পাঠক, সূরা আল ক্বামারের প্রথম আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন,

اقْتَرَبَتِ السَّاعَةُ وَانشَقَّ الْقَمَرُ

৫৪:১ কেয়ামতআসন্ন, চন্দ্রবিদীর্ণহয়েছে।

1- The Hour has come closer and the moon has split

(shaqqa).

54-The Moon, 1

উপরের আয়াতটি চাঁদে অবতরনের আরেকটি ইঙ্গিত।উপরের আয়াতে আরবী শব্দ شَقَّ ‘সাক্কা’ এর বিভিন্ন মুখী তাৎপর্যো ধারণ করে।বহুমূখী ধারণার মধ্যে,টুকরা হয়ে যাওয়া, বিদীর্ণ হওয়া, ফাঁটল দেখা দেওয়া,চাষ করা ইত্যাদি।

সূরা আব্বাসার ২৫-২৬ নয় আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন,

أَنَّا صَبَبْنَا الْمَاء صَبًّا

৮০:২৫ আমিআশ্চর্যউপায়েপানিবর্ষণকরেছি,

ثُمَّ شَقَقْنَا الْأَرْضَ شَقًّا

৮০:২৬ এরপরআমিভূমিকেবিদীর্ণকরেছি,

পৃথিবীর মাটিকে ছাষাবাসের মাধামে বিদীর্ণ করাও এই সাক্কা শব্দ দ্বারাই বুঝানো হয়ে থাকে। তাই ধরে নেওয়া হয়েছে চন্দ্র বিদীর্ণ করন বলতে পৃথিবীর মানুষ চাদে অবতরন করাই বুঝানো হয়েছে।

সূরা আল ক্বামারের ২য় আয়াতে মহান আল্লঅহ বলছেন,

وَإِن يَرَوْا آيَةً يُعْرِضُوا وَيَقُولُوا سِحْرٌ مُّسْتَمِرٌّ

৫৪:২ তারা যদি কোন নিদর্শন দেখে তবে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, এটা তো চিরাগত জাদু

 

সূত্র-প্রবন্দটি CANER TASLAMAN এর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘THE QURAN UNCHALLENGEABLE MIRACLE’ এর সহযোগিতায় প্রণিত।

 

আব্দুল আজিজ খন্দকার

২১.০৫.২০১৪

 

2 thoughts on “চাঁদে ভ্রমন -JOURNEY TO THE MOON”

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান