বংশগতির রহস্যময়তা- Mystery of Genetics

genetics-cloud_1_big

সূধী পাঠক, আপনারা হয়তো জানেন,বাংলায় একটা প্রবাদ রয়েছে,‘বাপকা বেটা সেপাইকা ঘোরা’। খুবই সহজবোধ্য বাক্য; সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ দেখে আসছে বংশধরের মধ্যে সাদৃশ্যতা। একই প্রজাতির মধ্যে আকৃতির সামঞ্জস্যতা। মানুষের চেয়ে ইতর প্রাণীর মধ্যে এই সাদৃশ্যতা এতটাই ঘনিষ্ট যে একদল পিঁপরার মধ্যে মা,বাবা, সন্তানকে আলাদা করা মোটেই সম্ভব নয়। এখন প্রশ্ন হল কেন এই সাদৃশ্যতা?একই মায়ের পেটে কেন একটি মানুষ অপরটি বানর হলনা। আমরা দেখেছি কোন একটি প্রজাতি কোন ক্রমেই অন্য প্রজাতির সন্তান উপহার দেয়না। সৃষ্টি থেকে অদ্যাবদি একই ভাবে সকল প্রজাতি তার বংশকে প্রলম্বিত করে চলেছে। মানুষের চিন্তাধারার ক্রম বিকাশের সাথে সাথে অনেক ভাবুক লোক এ নিয়েও অনেক ভেবে দেখেছে, কিন্তু রহস্যের মধ্যেই থেকে গেছে সব। ভাবনার রাজ্যের শ্রেষ্ট প্রজাতি বিজ্ঞান যখন হামাগুড়ি দিতে দিতে সবে উঠে দাড়িয়েছে ঠিক তখন পবিত্র কোরআণ এই বংশগতির রহস্য বেধ করার জন্যে বেশ কছু রহস্যময় বাণীর অবতারনা করেছে। কিন্তু ভাবুক শেণীরা কেমন যেন সে দিকটাকে এড়িয়ে গেছে। হতে পারে পবিত্র কোরআন ধর্মীয় বাণী, একে নিয়ে চিন্তাভাবনার সুযোগ নেই, আবার এও হতে পারে যে, ধর্মকে বিজ্ঞান জগতে ডেকে আনলে হয়তো সবাইকে ধার্মীক হয়ে যেতে হবে। সে যাই হোক, আমরা পবিত্র কোরআনের কিছু বাণী দেখে নেই। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সূরা হাজ্জ্ব এর ৫নং আয়াতে মানব সৃষ্টির একটা পূর্ণাঙ্গ চিত্র দিয়েছেন এই ভাবে,

২২:৫ হে লোকসকল! যদি তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দিগ্ধ হও, তবে (ভেবে দেখ-) আমি তোমাদেরকে মৃত্তিকা থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর বীর্য থেকে, এরপর জমাট রক্ত থেকে, এরপর পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট ও অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট মাংসপিন্ড থেকে, তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্যে। আর আমি এক নির্দিষ্ট কালের জন্যে মাতৃগর্ভে যা ইচ্ছা রেখে দেই, এরপর আমি তোমাদেরকে শিশু অবস্থায় বের করি; তারপর যাতে তোমরা যৌবনে পদার্পণ কর। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে নিষ্কর্মা বয়স পর্যন্ত পৌছানো হয়, যাতে সে জানার পর জ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে সজ্ঞান থাকে না। তুমি ভূমিকে পতিত দেখতে পাও, অতঃপর আমি যখন তাতে বৃষ্টি বর্ষণ করি, তখন তা সতেজ ও স্ফীত হয়ে যায় এবং সর্বপ্রকার সুদৃশ্য উদ্ভিদ উৎপন্ন করে।

ثُمَّ جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً فِي قَرَارٍ مَّكِينٍ

২৩:১৩ অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দু রূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি। সূরা আল মুমিনুন

ثُمَّ جَعَلَ نَسْلَهُ مِن سُلَالَةٍ مِّن مَّاء مَّهِينٍ

৩২:৮ অতঃপর তিঁনি তার বংশধর সৃষ্টি করেন তুচ্ছ পানির নির্যাস থেকে। সূরা সেজদাহ

خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَأَنزَلَ لَكُم مِّنْ الْأَنْعَامِ ثَمَانِيَةَ أَزْوَاجٍ يَخْلُقُكُمْ فِي بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ خَلْقًا مِن بَعْدِ خَلْقٍ فِي ظُلُمَاتٍ ثَلَاثٍ ذَلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ فَأَنَّى تُصْرَفُونَ

৩৯:৬ তিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে একই ব্যক্তি থেকে। অতঃপর তা থেকে তার যুগল সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি তোমাদের জন্যে আট প্রকার চতুষ্পদ জন্তু অবতীর্ণ করেছেন। তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভে পর্যায়ক্রমে একের পর এক ত্রিবিধ অন্ধকারে। তিনি আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা, সাম্রাজ্য তাঁরই। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব, তোমরা কোথায় বিভ্রান্ত হচ্ছ? -সূরা আল যুমার

الَّذِي خَلَقَكَ فَسَوَّاكَ فَعَدَلَكَ

৮২:৭ যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুবিন্যস্ত করেছেন এবং সুষম করেছেন। সূরা আল ইনফিতার

فِي أَيِّ صُورَةٍ مَّا شَاء رَكَّبَكَ

৮২:৮ যিনি তোমাকে তাঁর ইচ্ছামত আকৃতিতে গঠন করেছেন।

সূধী পাঠক, অবতীর্ণ হওয়ার পর থেকে দীর্ঘ সময় ধরে তার নিজের গণ্ডির মধ্যেই আটকে রইল, ভাবুকদের মনে রেখাপাত করতে পারলোনা। একসময় বিশ্বের তাবৎ ভাবুকরা অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত দিল আমাদের প্রকৃতিতে এত প্রাণের সমাহার ঘেটতে কোন স্যষ্টার প্রয়োজন হয়নি, আপনা্পনি সব জন্মাচ্ছে আর বিবর্তীত হয়ে বৈচিত্রতার সৃষ্টি করছে। ভাবুদের মনে এই ধারনাটা এতটাই রেখাপাত করল যে, তাদের অনেকেই মূল্যবান রা দিয়ে ধারণাটিকে স্বতঃসিদ্ধভাবে প্রশান করার চেষ্টায় লেগে গেলেন, প্রায় একশত বছর কেটে গেল কোন পরিবর্তন এলনা। বিশ্বাসীদের হতাশাই বাড়তে লাগল। এমনি এক ক্রান্তি লগ্ণে ১৯৫৩ সালে বিজ্ঞান জগতে এক মাইল ফলক স্থাপিত হল,জেমস্ ওয়াটসন ও ফ্রান্সিস ক্রিক অসম্ভবকে সম্ভব করে এক বিষ্ময়কর মহাজগতের আবিস্কার করলেন, যেখানে লুকিয়ে রয়েছে প্রাণী জগতের বংশধারা। এই আবিস্কারের মাধ্যামে তারা প্রাণীর দেহকোষের গভীরে নউক্লিয়াসের মধ্যে লুকিয়ে থাকা বংশ কাঠামোকে উন্মুক্ত করেন। এই কাঠামোর নামকরণ করা হয় ডি এন এ (DNA)। তারা ডি এন এ অনুর দ্বি-হেলিক্স কাঠামো আবিস্কারের মাধ্যামে এক নতুন মহাবিশ্বকে আবিস্কার করেছেন। তথ্য জগতে এই আবিস্কার মানবীয় জ্ঞানের এক বিশাল উত্তোরণ। ডি এন এ অনুর দ্বি হেলিক্স কাঠামো বিজ্ঞান জগতে প্লাবণ এনে দিয়েছে। এর জন্যেই সম্ভব হয়েছে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে ধারাবাহিক ভাবে বয়েচলা। বিজ্ঞানের কাছে যা ছিল রহস্যের জগৎ তা হয়ে উঠেছে জ্ঞান চর্চার চারণভূমি। বিজ্ঞানীরা প্রজননের নতুন জগৎ খুঁজে পেয়েছে। প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে বিজ্ঞানীরা চর্চা করে নানা পরীক্ষা নীরিক্ষার মাধ্যামে যে টুকু জেনেছে তা ডি এন এ স্থিত তথ্যের নিতান্ত ক্ষুদ্রাংশ মাত্র। তবে বিজ্ঞান এ পর্যোন্ত যতটু্কু জেনেছে তা ডারউইনের বিবর্তন বাদের সাথে গভীর ভাবে জড়িত হয়ে আছে, যে তথ্য এক সময় সাড়া বিশ্বে আলোড়ণ সৃষ্টি করেছিল। যে তথ্যের সুবাদে মানুষ ধরেনিয়েছিল বিষ্ময়কর সৃষ্টি, আমাদের এই প্রাণীজগৎ নিতান্ত ব্যাঙের ছাতার ন্যায় আপনা আপনি গজিয়ে উঠেছে,তার জন্যে কোন সুচিন্তিত পরিকল্পনার প্রয়োজন হয়নি, প্রয়োজন হয়নি কোন মহান স্রষ্টার। ডি এন এর অত্যান্ত সরল সহজ দ্বি-হেলিক্স কাঠামো সেই প্রলয়ঙ্করী তত্ত্বকে প্রায় সম্পূর্ণরূপে গিলে খেয়েছে। মাত্র চার জোড়া খারের এক অলৌকিক সজ্জার পিছনে চিতার আগুণে জ্বালিয়ে দিয়েছে ভূবন মোহিনী স্রষ্টা বিহীন সৃষ্টি তত্ত্ব।

ধীরে ধীরে বিজ্ঞান ডি এন এর ভাষাকে যতই মানুষের ভাষায় রূপান্তর করেছে ততই তারা বিষ্ময়ে বিমূঢ় হয়ে পড়েছে; তারা একের পর এক অকল্পনীয় বিষয় উন্মুক্ত করেছে ; যা প্রায় তিন বিলিয়ন জেনেটিক অক্ষর দিয়ে অতি উৎকৃষ্ট ভাষায় লিখা রয়েছে ডি এন এর প্রচ্ছদে। ডিসকভারী ইনষ্টিটউটের ডঃ ষ্টিফেন মেয়ার বলেছেন,‘ডি এন এ বিংশ শতাব্দীর এক বিশেষ আবিস্কার, এটি প্রকৃতপক্ষেই তথ্যের এক বিশাল ভাণ্ডার। ১৮৫৯ সালে ডারউইনের বিবর্তনবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে বিজ্ঞান ক্রমান্বয়ে সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য থেকে দূরে চলে যেতে লাগলো, প্রাণী দেহ সংগঠণের কলা কৌশল না জানার কারণে শুধুমাত্র পর্যোবেক্ষনলব্দ ও কিছু আনুমানিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে দীর্ঘ দিনের বিজ্ঞান মেধা গুলিয়ে গেল অজ্ঞানতার মহাসমুদ্রে। বিজ্ঞান পিতার সেই মন্তব্য (আমি বিজ্ঞান সাধনা করি শুধুমাত্র স্রষ্টার কাজের ক্রিয়া কৌশল জানার জন্যে), বৃদ্ধ পাগল বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর সেই বিখ্যাত বাণী,‘স্রষ্টা এই মহাবিশ্বকে লিখেছেন অঙ্কের ভাষায়’ সবকিছু ক্ষোদ বিজ্ঞানীদের কাছেই মিথ্যে হয়ে গেল, আর সত্যের সমাধিতে অঙ্কুরিত হল ‘স্রষ্টাবিহীন মহাবিশ্ব আপনাআপনিই সৃষ্টি হয়েছে’ তত্ত্বের। বিবর্তন বাদ প্রকাশিত হওয়ার প্রায় ১০০ বছরের মাথায় মহান স্রষ্টা এক বিষ্ময়কর নিদর্শণ দেখিয়ে দিলেন ওযাটসন ও ক্রীকের আবিস্কারের মধ্য দিয়ে। ক্ষোদ বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানীরাই মন্তব্য করলেন যে, এত জটীল প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট ডি এন এ কোন ক্রমেই প্রাকৃতিক নির্বোচনের মাধ্যামে পরিবর্তীত হতে পারেনা। তার কর্মপ্রণালীর জন্যে যেমন সুচিন্তিত বিধান লিপিবদ্ধ রয়েছে তেমনি তার যে কোন পরিবর্তনের জন্যেও তেমনি জটীল নকশা ও নির্দেশনা দরকার। প্রাসাদতূল্য তত্ত্ব ছোট একটা আবিস্কারের মাধ্যামে ধুলিৎসাত হয়ে গেল। সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে বিকশিত হয়ে উঠলো মহান আল্লাহর বাণী,

৮২:৭ যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুবিন্যস্ত করেছেন এবং সুষম করেছেন। সূরা আল ইনফিতার

জীববিজ্ঞানী মীচেল ডেনটন ডি এন এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন যে,প্রাণী জগতের সকল প্রজাতির জীবন ধারনের জন্যে যতপ্রকার প্রোটিণ দরকার তা তৈরীর যাবতীত তথ্যাবলী এই ডি এন এ ধারন করে,তাছাড়াও এর মধ্যে আরও বহু তথ্য ধারনের মত শূণ্য স্থান পড়ে আছে (Evolution: A Theory in Crisis , 1996, p. 334)। কে এত ক্ষুদ্র স্থানে তথ্যের এই বিশাল ভান্ডারকে অগণিত অক্ষরের দ্বারা ক্ষুদ্রাকৃতিতে সঞ্চয় করে রাখতে পারে? বিবর্তন বাদ কি কখনো এমন সুর্দঢ় পদ্ধতিতে প্রজাতির ভবিষ্যত নিয়ন্ত্রন করতে পারে?

ডি এন এ’র মাঝে লিখিত আছে বংশ ধারার ভাষা

আমরা জানি কোন ভাষা রচনার ক্ষেত্রে প্রয়োজন সঠিক বর্ণমালা, অক্ষরগুলো বসাবার পদ্ধতি, কিছু অর্থপূর্ণ শব্দ সঠিক ব্যাকরণ ও শুদ্ধ বাণান এবং একটা উদ্দেশ্যময় লক্ষ্য। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন যে,জেনেটিক কোডের মধ্যে এ সকল গুণাগুণ সবই রয়েছে। ষ্টিফেন মেয়ার বলেছেন যে,জেনেটিক কোড গুলোর বৈশিষ্ট ঠিক কম্পউটারের ভাষার মতই। তাছাড়া মহান আল্লাহ তাঁর করুণার বিশেষ দান হিসেবে মানুষকে দিয়েছেন মৌখিক ভাষা যা কালক্রমে লিখিত রূপ নিয়েছে যা দিয়ে মানুষ অনায়াসে একে অপরের সাথে ভাবের আদান প্রদান করতে পারে। আমরা জানি অন্যান্ন প্রাণীর মধ্যেও রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিভিন্ন প্রাণী বিভিন্ন উপায়ে স্বজাতীর সাথে তথ্যের আদান প্রদান করে,তবে তা খুব উন্নত ব্যবস্থা নয়, যা মানুষের রয়েছে। ন্ম্নি প্রাণীর এই যোগাযোগ ব্যবস্থাকে এখন পর্যোন্ত কোন সুগঠিত ভাষারূপে প্রমাণ করতে পারেনি বিজ্ঞান; তথাপি এ গুলো প্রাণী জগতের যোগাযোগ পদ্ধতি। মানুষ তার নিজের ভাষা ছাড়াও কিছু তৈরী করা ভাষার সৃষ্টি করেছে যাকে বলা যায় কম্পউটারের ভাষা। তাছাড়াও প্রকৃতিতে আরও অনেক অজানা ভাষা রয়েছে যে ভাষায় মহান বিধাতা তার সৃষ্টি কৌশল লিখে রেখেছেন, তার মধ্যে আজকের বিজ্ঞান কিছু কিছু বুঝতে পারছে, যেমন মহাশূণ্যের গাণিতিক ভাষা, প্রাণী জগতের গঠণ শৈলী ও প্রাণী কোষের কর্মপদ্ধতি, প্রাণীর বংশ ধারা ও তার ভবিষ্যত জীবনের রূপরেখা, ইত্যাদি। বিজ্ঞান সবেমাত্র এগুলোর সন্ধান পেয়েছে পরিপূর্ণভাবে জানা বুঝার সুযোগ এখনও তৈরী করতে পারেনি, এসব এখন সময়ের ব্যপার। মাইক্রোসফট এর প্রতিষ্ঠাতা বিল গেট্স মন্তব্য করেছেন যে, ডি এন ‘র মধ্যে অতি উন্নতমানের এমন সফটঅয়ার প্রোথিত করা আছে যা এ পর্যোন্তআবিস্কৃত যে কেনটার চেয়েও জটীল।

সূধী পাঠক,একবার ভেবে দেখুন, আজকের দিনে সুপার কম্পউটারে ব্যবহৃত জটীল সব প্রোগ্রামকি কোন উপায়ে আপনা আনি তৈরী হতে পারে? হয়তো বলবেন, বলবেন প্রাণী জগতে হচ্ছে। না! সুধী পাঠক; বিজ্ঞান শুধু প্রাণী জগতের কথা বলছেনা, বস্তু জগতেও চলছে বিবর্তনের ধারা; প্রকৃতপক্ষে বিবর্তনই আমাদের মহাকাশকে এত সুন্দর করে সাজিয়ে তুলেছে। যদি বস্তুজগতে বিবর্তন হতে পারে তবে কম্পিউটারের পোগ্রাম কেন আপনা আপনা বিবর্তীত হবেনা? না! হয়না, তার মধ্যে বিবর্তন আনতে হলে তার স্রষ্টাকেই আনতে হয়; ঠিক তেমনি প্রাণী জগতে বিবর্তন ঘটাতে হলেও এই প্রাণী জগতের স্রষ্টাকেই তা করতে হয়। তবে হাঁ, এমনটা হতে পারতো, যদি সেই প্রাণীজগতের স্রষ্টা আপনা আপনি বিবর্তীত হওয়ার বিধান রাখতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি; পবিত্র কোরআনে তিনি পরিস্কার ভাবে বলেছেন যে, তিঁনি সকল প্রাণীকে পানি ও কাঁদামাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। তাইতো মহান আল্লাহ নীচের আয়াত দু’টিতে বলছেন,

২১:৩০ কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না? সূরা আম্বিয়া

وَاللَّهُ خَلَقَ كُلَّ دَابَّةٍ مِن مَّاء فَمِنْهُم مَّن يَمْشِي عَلَى بَطْنِهِ وَمِنْهُم مَّن يَمْشِي عَلَى رِجْلَيْنِ وَمِنْهُم مَّن يَمْشِي عَلَى أَرْبَعٍ يَخْلُقُ اللَّهُ مَا يَشَاء إِنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

২৪:৪৫ আল্লাহ প্রত্যেক চলন্ত জীবকে পানি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। তাদের কতক বুকে ভয় দিয়ে চলে, কতক দুই পায়ে ভর দিয়ে চলে এবং কতক চার পায়ে ভর দিয়ে চলে; আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম।

ধারক ডি এন এ

সূধী পাঠক, বিজ্ঞান ডি এন এ আবিস্কারের মাধ্যামে প্রাণী জগতে চলমান বংশ ধারার গুপ্ত রহস্যের যৎসামান্য আবিস্কার করতে পারলেও প্রায় সবই রয়ে গেছে আড়ালে। বিজ্ঞান শুধুমাত্র জানতে পেড়েছে কেন সন্তান তার পিতামাতার বৈশিষ্টকে ধরে নিয়ে আসে, আরও জানতে পেড়েছে যে, কখনো কখনো কোন শিশুর মধ্যে তার পূর্বপুরুষের বৈশিষ্টও পরিস্ফূটিত হয়ে উঠে। পিতামাতার সন্তান তার পূর্বপুরুষের বৈশষ্টকে ধারণ করার প্রকৃত কারণ সম্ভবত বিজ্ঞানেরও সূস্পষ্ট জানা নেই। তবে এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞান মনে করে, পিতা মাতার জিনে সুপ্ত বৈশিষ্টগুলো কখনো কখনো সন্তানের মধ্যে পরিস্ফূটিত হয়ে উঠে। আবার কখনো কারও বৈশিষ্ট একক ভাবেও আসে; সেক্ষেত্রে অপর জনের বৈশিষ্ট গুলো সুপ্ত হয়ে থাকে, আবার কখনো বা কোন পূর্ব পুরুষের সুপ্ত বৈশিষ্ট জাগ্রত হয়ে সন্তানের মধ্যে প্রকাশিত হয়। এই বৈশিষ্ট গুলো সম্পূর্ণই জিন নিয়ন্ত্রন করে। ১৮৬৫ সালে যখন বিজ্ঞানী গ্রেগর জ্যোহান মেন্ডেল বংশগতি বিদ্যার তত্ত্ব প্রকাশ করেন তখন জিন সম্পর্কে মানুষের ধারনা ছিলনা তাই তিনি বলেছিলেন কোন একটি কণা বা ফ্যক্টর প্রাণীর স্ব স্ব বৈশিষ্টগুলো নিয়ন্ত্রন করে এবং জাইগোট তৈরীকালে ফেক্টরগুলো মিশ্রিত না হয়ে পাশাপাশি অবস্থান করে; এই জাইগোট বা ভ্রূণটি পরিপূর্ণ হলে যখন তার মধ্যে জনন কোষ উৎপন্ন হয় তখন ফেক্টরগুলো পৃথক পৃথক জনন কোষে গমন করে। এখানে উল্লেখ্য যে, পুরুষ ও স্ত্রী উভয় প্রকার প্রাণী দেহেই উভয় প্রকার জনন কোষ উৎপন্ন হয়,কিন্তু স্বকীয় বৈশিষ্টের কোষটি বেঁচে থাকে অপরটি মরে যায় এবং অপসারিত হয়। মেন্ডেলের এই ‘ফ্যাক্টরটি তখনও বিজ্ঞানের কাছে পরিচিত ছিলনা; ১৮৭৫ খৃষ্টাব্দে স্ট্রাসবার্গার কোষের নিউক্লিয়াসে ক্রোমোসম আবিস্কার করেন, ১৮৮২ সালে ওয়াল্টার ফ্লেমিং ক্রোমোসম বিভাজন বর্ণনা করেন; বিজ্ঞানীরা মনে করেন এই ক্রোমোসমই বংশগতির ধারক ও বাহক। ১৮৬৯ সালে ফ্রেডরিচ মিসার লক্ষ্য করেন যে, রক্তের সাদা কনিকার কেন্দ্রে এক প্রকার দূর্বল এসিডের উপস্থিতি রয়েছে, পরবর্তীতে এর নামকরণ করা হয় ডি এন এ। ১৯০৩ সালে ওয়াল্টার সুটন থিয়োডোর বোবেরী মন্তব্য করলেন যে, ক্রোমোসোমই হল বংশধারার ধারক। ১৯১০ সালে থোমাস হান্ট মর্গান দেখালেন যে, ক্রোমসমেই জিন অবস্থান করে । ১৯৩৩ সালে জেন ব্রাকেট দেখাতে সক্ষম হলেন যে, ডি এন এ ক্রোমোসমে থাকে আর আর এন এ থাকে সাইটো প্লজমে। ১৯৫৩ সালে যখন ডি এন এর দ্বি-হেলিক্স কাঠামো আবিস্কৃত হয় তখন বিজ্ঞান জগতে প্রাণীর বংশ ধারার অনেক জট উন্মুক্ত হয়ে যায়। এই আবিস্কারের ফলে মেন্ডেলের তত্ত্ব আরও গতি পায়।

মেন্ডেল নির্দেশিত ফ্যাক্টরটির সন্ধান যখন বিজ্ঞান পেয়ে গেল তখন অনেক রহস্যের জট খুলতে শুরু করলো। মানুস জানতে পেল যে, ডি এন এর দ্বি-হেলিক্স কাঠামোতে ডি এন এর অনুক্রমে মাত্র চারটি ক্ষারক অনু যাদেরকে নিউক্লিওটাইড বল হয়, পরস্পরের সাথে হাইড্রোজেন বন্ধনী দ্বারা যুক্ত হয়ে জিন তৈরী করে। মাত্র চারটি ক্ষারক অনু জোড় বেঁধে তৈরী করে অসংখ্য জিন; অর্থাৎ ক্ষারকের সুনির্দিষ্ট অনুক্রমকেই জিন বলে, আর ক্ষারকের তিন অক্ষর বিশিষ্ট ট্রিপলেট কোড বা কোডনকেই বলে জেনেটিক কোড। এই জিনগুলো প্রাণী দেহের সংগঠনে বিভিন্ন ভূমিকা পালন করে আর রক্ষা করে প্রাণীর বংশ ধারা।

সূধী পাঠক, ক্রোমোসম আবিস্কারের মধ্য দিয়ে বিজ্ঞান প্রাণীজগৎকে জানা ও বুঝার একটা আলোকময় পথ তৈরী করলো,বিজ্ঞান মৃদু আলোয় দেখতে পেল এই পথ জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে বৈচিত্রময় প্রাণীজগতের নানা চিহ্ন, যার খোঁজে চলতে চলতে খুঁজে পেয়েছে বংশ ধারার অনেক রহস্য। তাইতো বিজ্ঞান বলছে, এই ক্রোমোসমই প্রাণীর বংশ ধারাকে বহন করে চলে। কোষের নিউক্লিয়াসে অবস্থিত অণুলিপন ক্ষমতা সম্পন্ন সূতাকৃতির বংশগতীয় এই উপাদান প্রাণীদেহের মিউটেশন,প্রকরণ ও প্রাণীর বৈশিষ্ট সংরক্ষন ও স্থানান্তরের কাজে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এই ক্রোমোসমের লোকাসে থাকে ডি এন এ যার মধ্যে ক্ষারক জোড় কর্তৃক তৈরী জিন গুলো সুসজ্জিত থাকে। এই জিন গুলোই নিয়ন্ত্রন করে প্রাণীর বংশ ধারা আর গড়ে তোলে সুঠাম দেহ ও পরিচালনা করে তোর সকল কর্ম। তা হলে বলা যায়,‘জিন হল ক্রোমোসমের লোকাসে অবস্থিত ডি এন এ অণুর মধ্যে খারক অনুর সুনির্দিষ্ট সজ্জা বা সিকুয়েন্স যা জীবের একটি নির্দিষ্ট কার্যোকর সংকেত আবদ্ধ করে প্রোটিন হিসেবে বৈশিষ্টের বিকাশ ঘটায়। যে কোন জিনেই মিউটেশন বা পরিবর্তন ঘটতে পারে যার মাধ্যামে একটি স্থায়ী ও বংশ পরম্পরায় স্থানান্তর যোগ্য নতুন প্রকরণ তৈরী হয়। অর্থাৎ বংশধর উৎপাদনের সময়ে পিতৃ মাতৃ জিন গুলো মিলিত হয়ে সন্তানের জিন তৈরী হয়, তখন ক্ষেত্র বেধে পিতা মাতার উভয় প্রকার বৈশিষ্টই স্থানান্তর হয়, বা একক কোন বৈশিষ্ট প্রকট হয়, আবার কখনো পিতা মাতার ডি এন এ তে সুপ্ত কোন বৈশিষ্ট প্রকাশিত হয় বা সম্পূর্ণ নতুন বৈশিষ্টের অভুদ্ভয় হয়; আর এই পরিবরর্তন গুলো হয় জিনের মিউটেশনের মাধ্যামে। এবার লক্ষ্য করুন, সন্তান উৎপাদন কালে পিতা মাতার ক্রোমোজম ভেঙে যখন সন্তানের কোমোসম তৈরী হয়,তখন পিতা মাতার উভয় প্রকার জিনই কিন্তু সন্তানের ডি এ এ তে স্থান পায়না, সন্তানের ডি এন এ তে পিতা মাতার জিন গুলো ভেঙে নতুন করে প্রয়োজন মত জিন তৈরী হয় যা সন্তানের দেহ কাঠামোর বিকাশে সাহায্য করে। কখনো কখনো একাদিক জিন মিলে একটি বৈশিষ্ট নিয়ন্ত্রন করে। এখন প্রশ্ন হল এই ভাঙা গড়ার কাজটি কে নিয়ন্ত্রন করে? যদি বলেন এটি ডি এন এর কাজ; তবে প্রশ্ন থেকে যায় যে উভয় প্রকার ডি এন এর মধ্যে বুঝা পড়ার মাধ্যামে নতুন ডি এন এ তথা জিন তৈরীর কাজটি কিভাবে সমাধা লাভ করে। বিষয়টা সম্ভবত এখনও বিজ্ঞানের কাছে রহস্যাবৃত। যদি বিষয়টাকে বিবর্তনের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয় তবে কি ঘটতে পারে? ধরে নেই পিতৃ মাতৃ ক্রোমোসম ভেঙে সন্তানের ক্রোমোসম উৎপাদন কালে জিনগুলো ভেঙে নতুন সজ্জায় অবস্থান নিল; তাহলে দেখা যাবে,সবগুলো জিনই পাশাপাশি থেকে এলোমেলো বৈশিষ্টের সৃষ্টি করেছে। অতএব দেখা যাচ্ছে সন্তানের জিনগুলোকে সুনির্দিষ্ট সংখ্যায় নিয়ন্ত্রন করে সৃষ্টিকর্মকে সুস্থিত করতে একটা সুচিন্তিত কাঠামো প্রয়োজন এবং সে কাঠামোর একজন রচয়িতা চাই; নইলে এই বিশাল প্রাণীজগতের বংশধারায় কোন সুনিয়ন্ত্রন থাকতোনা। এখানেও বিজ্ঞান শুধুমাত্র একজন স্রষ্টাকে আড়াল করার জন্যে অসহায়ের মতই বলছে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মধ্য দিয়েই প্রাণীর বংশধারায় পরিবর্তন আসছে, কখনো কখনো কোন প্রজাতির কিংদংশ কোন কোন বিশেষ কারণে বিবর্তিত হয়ে নতুন বংশের সৃষ্টি করছে। অবশ্য এই বিশেষ কারনটির পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা তারা দিতে পারছেন, যে টুকু দিচ্ছে তা কোন রকমেই বাস্তবতার সাথে মিলছেনা অর্থাৎ পরিবেশ ও প্রাণীর মনঃস্কামনা এই পরিবর্তনের কারণ।

আমরা জানি বিভিন্ন প্রাণীর দেহে বিভিন্ন সংখ্যায় ক্রোমোসম থাকে; তবে একথা বলা যায়না যে, ক্রোমোসমের সংখ্যাই প্রাণীর প্রজাতি নিয়ন্ত্রন করে। আবার এও বলা যায়না যে জিন সংখ্যার নিয়ন্ত্রনেই প্রজাতি গড়ে উঠে। পরীক্ষায় দেখা গেছে প্রাণী দেহে সর্বনিম্ন ২ থেকে সর্বোচ্চ ১৬০০ পর্যোন্ত ক্রোমোসম রয়েছে; আবার সমসংখ্যক কোমোসমের প্রাণীও রয়েছে। সূদী পাঠক, একবারও কি ভাবতে পারেন প্রাণীর একটা কোষে ঐ সংখ্যক ক্রোমোসম থাকলে সম্পূর্ণ দেহে কি পরিমান ক্রোমোসম থাকতে পারে আর তাদের সমন্বিত কার্যোপ্রণালীই বা কত জটীল ও উন্নত প্রক্রিয়ায় চলে? সম্ভবত প্রজাতি পরিবর্তনের ইতিহাস ডি এন এর অন্য কোন পর্বে লেখা রয়েছে যা বিজ্ঞান আজও আবিস্কার রেতে পারেনি। এক সময়কার বিজ্ঞান অনুমান করেছিল প্রকৃতির বৈরী পরিবেশে প্রাণীর মনঃস্কামনা থেকে শুরু হয় বিবর্তন; বহু বছরের প্রক্রিয়ায় প্রজাতি থেকে প্রজাতির এই পরিবর্তন সাধিত হয়। কিন্তু ডি এন এ ও জিনের ধারনা বিজ্ঞানীদের সে ধারণা পাল্টে দিয়েছে। আজও বিজ্ঞান প্রজাতি পরিবর্তনে ঘোর রহস্যের মধ্যে ছুটাছুটি করছে। সে যাই হোক প্রাণীর বংশধারা নিয়ে বিজ্ঞান অনেক দূর এগিয়েছে।

একসময় বিজ্ঞান মানুষকে বানরের বংশধর হিসেবে প্রচার করলো, পরীক্ষা নীরিক্ষার দ্বারা তা প্রমান করার চেষ্টা আজও চলছে; সম্ভবত এই চেষ্টার একটা সুপ্ত কারণ হল পিতামাতা বিহীন আদম সৃষ্টির ঘটনাকে মেনে না নেওয়া ও তাকে অবাস্তব প্রমান করা। একটি প্রশ্নের উপর প্রায় সমগ্র বিজ্ঞান আজ একমত যে, বীজ ছাড়া যেমন গাছ উৎপাদন হয়না তেমনি পিতামাতা বিহীন কোন প্রাণী জন্মাতে পারেনা। তাই ধরে নেওয়া হয়েছে সেই এক কোষী এমিবাটি হঠাৎ করেই তৈরী হয়েছিল এবং এটিই মাতৃপ্রাণ, এটি থেকে কালক্রমে বহুকোষী তারপর বিবর্তনের ধারা ও দূর্ঘটনার মাধ্যামে মাতা পিতা ও তাদের থেকে বংশধারা এবং পর্যায়ক্রমে ঐ বিবর্তনের মাধ্যামেই প্রজাতির পরিবর্তন; এভাবেই এসেছে প্রাণী জগতের বৈচিত্রতা। বিজ্ঞান শুধু নিষেকের মাধ্যামেই প্রজননের সংবাদ দেয়নি,নিষেক ছাড়াও প্রজননের তথ্য দিয়েছে। বিজ্ঞান খুঁজে পেয়েছে কিছু কিছু নিম্ন শ্রেণীর উদ্ভিদের মধ্যে ডিম্বাণু নিষিক্ত না হয়ে সরাসরি ভ্রূণসৃষ্টি করে থাকে। এ ধরনের প্রজনন প্রক্রিয়াকে পারথেনোজেনেসিস বা অপুংজনি বলে; এ প্রক্রিয়ায় ডিম্বক স্ভাবাবিক বীজে পরিণত হয়; মৌমাছিতেও এ ধরনের প্রজনন দেখা যায়। এই ধারণা থেকে পরিস্কার বুঝা যায় যে, শুধু একটা ডিম্বক কোন একটা সন্তানের ভ্রূণ হতে পারে। তাকে গর্ভাশয়ের মত উপযুক্ত পরিবেশ দিলে তা বিকশিত হতে পারে। ঠিক তেমনি এই ধরিত্রীর মাটিকেও আমরা মায়ের গর্ভাশয় ভাবতে পারি। যেখানে ভ্রূণ স্থাপিত হলে তা পূর্ণাঙ্গ শিশুর রূপ নিতে পারে। আর এমন উদাহরণের বোধ হয় শেষ নেই। অসংখ্য পোকার ডিম মাটিতেই ফুটে আর এক সময় পূর্ণাঙ্গ পোকা হয়ে বেরিয়ে আসে। কখনো কি লক্ষ্য করেছেন? আপনার বাড়ির পাশে রাতে কত অসংখ্য পোকার ডাক শেনা যায়। তারা কি সবই এমিবার বংশধর? আর যদি তাই হয় তবে কারো সাথে কারোর সাদৃশ্যতা নেই কেন? কত রঙ বেরঙের পোকা আপনার চারিদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তারা কি প্রয়োজনে আপনা আপনি তৈরী হল? এ সব নিয়ে ভাবুন দেখতে পাবেন, দূরে কোথাও কোন অস্পষ্ট স্বত্তা আপনার অবচেতন মনকে নাড়া দিয়ে যাবে।

আমরা বিজ্ঞানের কাছে জেনেছি একটা প্রাণকোষ তৈরী হতে শুধু একটা ডি এন এ ও কিছু প্রয়োজনীয় প্রোটিন অণু দরকার; যেগুলো উপযুক্ত পরিবেশে প্রয়োজনীয় প্রভাবকের সহায়তায় প্রাণকোষ সৃষ্টি করতে পারে। সেই প্রান কোষটি অনুকুল কোন পরিবেশে ডি এন এর তথ্য অনুযায়ী একটা জটীল প্রাণীর ভ্রূণ সৃষ্টি করতে পারে যা মাটিতে মাতৃগর্ভাশয়ের মত পূর্ণাঙ্গ শিশুতে রূপান্তরিত হতে পারে। তারপর প্রকৃতির কোলে হেলেদুলে বড় হয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রাণীতে রূপান্তরিত হতে পারে। এক সময় তার দেহকোষ ভেঙে তৈরী হতে পারে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু যা জিবীত অবস্থায় ধরিত্রীর বুকে পতিত হয়ে সৃষ্টি করতে পারে জাইগোট যা পূর্বের ন্যায় মাটির গর্ভাশয়ে আশ্রিত হয়ে বেড়ে উঠতে পারে ভ্রূণ শিশুরূপে, কালের প্রবাহে এটিও হয়ে উঠতে পারে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রাণী। একে কি বিজ্ঞান অসম্ভব বলে তুড়ি মেড়ে উড়িয়ে দেবে। কিন্তু মহান স্রষ্টার পক্ষেতো সবই সম্ভব।আমরা কি এ ভাবে প্রথম মানুষ হযরত আদম (আঃ) ও তার সঙ্গিনীর কথা ভাবতে পারিনা।

সূধী পাঠক, উপরের স্তবকটি সম্পূর্ণই আমার নিজস্ব অভিমত। এ ক্ষেত্রে আমি মহান প্রভুর কাছে নতজানু হয়ে ক্ষমা ভিক্ষা চাইছি, তিনি যেন আমার সকল ভুল ত্রুটি ও অজ্ঞানতাকে তাঁর স্বাধীন মমত্ব দিয়ে ক্ষমা করেন। আমি জানিনা এই রহস্যের আসল সত্য কি। আমি শুধু চেয়েছি মহান আল্লাহর বাণী ও আধুনীক বিজ্ঞানের ধারনার সমন্বয় ঘটাতে এবং বিজ্ঞানের কাছে তুলে ধরতে যে, প্রকৃতির নিয়মের মাঝেও মহান আল্লাহর নির্দেশিত কাজগুলোকে ব্যাখ্যা করা যায়। চেয়ে দেখুন মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সূরা হাজ্জ্ব এর ৫নং আয়াতে কি বাবে মানব সৃষ্টির একটা পূর্ণাঙ্গ চিত্র দিয়েছেন,

২২:৫ হে লোকসকল! যদি তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দিগ্ধ হও, তবে (ভেবে দেখ-) আমি তোমাদেরকে মৃত্তিকা থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর বীর্য থেকে, এরপর জমাট রক্ত থেকে, এরপর পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট ও অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট মাংসপিন্ড থেকে, তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্যে। আর আমি এক নির্দিষ্ট কালের জন্যে মাতৃগর্ভে যা ইচ্ছা রেখে দেই, এরপর আমি তোমাদেরকে শিশু অবস্থায় বের করি; তারপর যাতে তোমরা যৌবনে পদার্পণ কর। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে নিষ্কর্মা বয়স পর্যন্ত পৌছানো হয়, যাতে সে জানার পর জ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে সজ্ঞান থাকে না। তুমি ভূমিকে পতিত দেখতে পাও, অতঃপর আমি যখন তাতে বৃষ্টি বর্ষণ করি, তখন তা সতেজ ও স্ফীত হয়ে যায় এবং সর্বপ্রকার সুদৃশ্য উদ্ভিদ উৎপন্ন করে।

সূরা আন নিসার ১ম আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,

يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُواْ رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالاً كَثِيرًا وَنِسَاء وَاتَّقُواْ اللّهَ الَّذِي تَسَاءلُونَ بِهِ وَالأَرْحَامَ إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا

৪:১ হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচঞ্ঝা করে থাক এবং আত্নীয় জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন।

বংশগতির তথ্য সব একই রকম

আমরা বিবর্তণ বাদ থেকে জেনেছি,প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যামে ধীরলয়ে প্রাণী দেহে পরিবর্তন ঘটতে থাকে এবং এক সময় হঠাৎ করে দূর্ঘটনার মত এক প্রাণী অন্য প্রাণীতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। কিন্তু বাস্তবে এমনটা হতে দেখা যায়না;হঠাৎ করে কোন প্রাণী দৈহিক কাঠামো পরিবর্তন ককনোই সম্ভব নয়, তা হতে পারে কোন একমাত্র এক প্রজাতির গর্ভে অণ্য প্রজাতির জন্মের শদ্য দিয়ে; অর্থাৎ বংশধারার পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে। আর এই পরিবর্তন সম্ভব হতে পারে একমাত্র বংশগতি নিয়ন্ত্রনকারী তথ্যের পরিবর্তনের মাধ্যামে। বিজ্ঞানের ধারনা থেকে আমরা জানি এই তথ্যগুলোর মৌলিক বৈশিষ্ট প্রায় একই। ক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়া থেকে শুরু করে উদ্ভিদ ও সর্বোন্নত প্রাণী মানুষের দেহে বিদ্যমান বংশগতির তথ্যের মৌলিক গঠণ প্রায় একই। ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে তথ্যের পরিমান কম হলেও তারা ঠিক মানুষের মধ্যে অবস্থিত তথ্যের মতই সুক্ষ ও সঠিক ভাবে নির্দেশনা দিয়ে থাকে। দেখাযায় যে, সকলের তথ্য গুলোই পূর্ব চাহিদামত অক্ষর, ব্যকরণ ও সঠিক শব্দের সমন্বয়ে লিখিত ভাষায় সমন্বিত; ব্যকটেরিয়া থেকে মানুষ পর্যোন্ত বংশগতির কোড গুলো একই উপাদানে গঠিত;অর্থাৎ চারটি বিশেষ ক্ষারক দিয়েই সকল জিন তৈরী হয় শুধু মাত্র পার্থক্য এই যে, ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির জিনে কোড সংখ্যা ভিন্ন ভিন্ন। আর এই ভিন্নতা দি্য়েই প্রাণী জগতে প্রজাতির পরিবর্তন। কোষ বিভাজনের সময়ে স্বপ্রলিখন বা রিপলিকেশন প্রক্রিয়ায় কোষস্থিত ক্রোমোসম তথা ডি এন এ নতুনভাবে তৈরী হয় এবং হুবহু প্রতি লিপি তৈরী করে। প্রলিখনের সময়ে যদি কোন একটা ভূল হয় তবে প্রাণীর দৈহিক কাঠামোতে আসতে পারে নানারূপ বিকলাঙ্গতা। লক্ষ্যকরুন, আমরা যাদি ধরে নেই প্রতি কোষে ৫০০ জিন সম্বলিত প্রাণীটি একটি ফড়িং; আবার ৫৫০ টি জিন নিয়ে গঠিত হয়েছে টিকটিকি; তবে রিপলিকেশন প্রক্রিয়ায় ভ্রূণ দু’টির অনুরূপ সংখ্যক জিন বিশিষ্ট কোষই তৈরী হবে। রিপলিকেশন প্রক্রিয়ায় ভিন্ন সংখ্যক জিনের কোন কোষ উৎপাদনের সুযোগ নেই, যে কোন রকম ত্রুটি প্রাণীর দেহ কাঠামোতে বৈকল্য আনতে পারে প্রজাতির পরিবর্তন করতে পারেনা। প্রজাতির পরিবর্তন ঘটাতে হলে একমাত্র উপায় হল, সুচিন্তি পরিকল্পনায় যে কলাকৌশলে নির্দিষ্ট জিন সংখ্যা দিয়ে একটি নির্দিষ্ট প্রজাতি সৃষ্টি করা হয়েছে ঠিক সেই কৌশলে ভিন্ন সংখ্যক জিন দিয়ে নতুন প্রজাতি সৃষ্টি করা। এই কলা কৌশল সম্ভবত সবিস্তারে লেখা রয়েছে ডি এন এর তথ্য ভাণ্ডারে। তাইতো অণুজীব বিজ্ঞানী মাইকেল ডেনটন বলেছেন,ব্যাকটেরিয়া থেকে মানুষ পর্যোন্ত প্রতিটি কোষ তৈরী হয়েছে কৃত্রিম ভাষা ও তাকে কর্মপদ্ধতিতে রূপান্তর প্রক্রিয়ায়, তথ্যের স্মৃতি ভাণ্ডার ও তা থেকে খুঁজে নেওয়ার পদ্ধতিসমন্বয়ে; এই কোষের মধ্যে রয়েছ সূচারু নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রাণীদেহের বিভিন্ন অংশেরর ত্রুটিহীন উপায়ে কোষগুলো গড়ে তোলে। কোষের মধ্যে রয়েছে প্রুফ রিডিং ডিভাইস যা ভুলত্রুটি সংশোধন করার নির্দেশ দিয়ে সঠিক কোয়ালিটি উৎপাদনে সতর্ক থাকে; এবং স্বপ্রলিখনের মাধ্যামে হুবহু একই জিনিস উৎপাদনে সক্ষম; এমন সুকঠিণ প্রতিরক্ষার মধ্যে কোন উপায়েই আপনা আপনি পরিবর্তনের সুযোগ নেই। ফলে কি করে বলা যায় একটা ব্যাকটেরিয়ায় বংশধারার তথ্য আপনা আপনি বিবর্তীত হয়ে অন্য প্রাণীর সৃষ্টি করবে? (সূত্র- Denton, p. 329)।

বিবর্তনবাদীরা এ ব্যপার একেবারেই নীরব রয়ে গেছে। লী স্ট্রোবেল বলেছেন, আমাদের দেহের একশত ট্রিলিয়ন কোষের মধ্যস্থিত ডি এন এ গুলো সাড়ি বাঁধলে লম্বা হবে প্রায় ৬ ফুট; যার মধ্যে রয়েছে চার অক্ষরের রাসায়নিক বর্ণমালা যা দিয়ে লিখা হয়েছে আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরীর বিস্তির্ণ নির্দেশিকা।আজ পর্যোন্ত এমন কোন তত্ত্ব কউ দিতে পারেনি , যাতে বলা হয়েছে কিভাবে এই ক্ষুদ্র জৈব কোষের মধ্যে প্রাকৃতিক উপায়ে এই নির্দেশিকা তৈরী হল? (সূত্র-Strobel, p. 282 ), আজকের বিজ্ঞানের কাছেও এ এক মহাবিষ্ময়, কি করে গুটিকয়েক মৌলের সমন্বয়ে সৃষ্ট এই ডি এন এ,যা আর পাঁচটা জৈব যৌগের মতই স্বাভাবিক গড়ণে তৈরী, তার মধ্যে এত সব তথ্যের সমন্বয় ঘঠলো কিভাবে? আজও তা বিজ্ঞানের কাছে রহস্য হয়েই আছে।

এ সকল তথ্য প্রমানই প্রমাণ করে যে, সুচিন্তিত পরিকল্পনা ছাড়া ডি এন এর মত অণু কোন জৈব প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হতে পারেনা, কিছু রাসায়নিক বৈশিষ্ট ছাড়া এই যৌগটির মধ্যে প্রাকৃতিক নিয়মে আর কিছুই থাকার কথা নয়, তার রাসায়নিক বৈশিষ্ট যেমন অটুট তেমনি তার মধ্যে যেন কোথা হতে এসেছে অফুরন্ত অজানা বৈশিষ্ট যা রসায়ন সাস্ত্রের কাম্য নয়। তা ছাড়াও রয়েছে কিছু বিষ্ময়কর বৈশিষ্ট যা চারটি অক্ষরের সজ্জিত শব্দে বর্ণিত হয়ে বয়ে নিয়ে চলেছে প্রাণীর বংশধারাকে। তদুপরি ডি এন এর অণুলিপিকরণে সর্বোচ্চ কার্যোক্ষম করার জন্যে প্রয়োজন প্রতি শব্দে জোড় সংখ্যার অক্ষর;সেই প্রয়োজনেই ডি এন এ তেও সমন্বিত হয়েছে চারটি অক্ষর। পৃথিবীতে সকল জীবন্ত প্রাণীর জিনে দেখা যাচ্ছে চারটি অক্ষরের ডিজিটাল কোড। আর এই ঘটনাই জোড় দাবী করে যে, হঠাৎ ঘটে যাওয়া পরিবর্তনের চেয়ে প্রাণীজগৎ সৃষ্টি ও প্রজাতির পরিবর্তন এক সুচিন্তিত পরিকল্পনার ফল। আর এ কারণেই বোধ হয় অজ্ঞেয়বাদী বিজ্ঞানী মাইকেল ডেনটন বলেছেন,ডারউইনের উনবিংশ শতাব্দীর বিবর্তনবাদ বিংশ শতাব্দীর এক অলঙ্কারিক কল্পনা। বিবর্তন বাদের সাহায্যে ডি এন এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সকল বিবর্তনবাদীরাই এখন খুঁজছে কোন এক প্রজ্ঞাময় উৎসের। তারা বলছে ডি এন এর কোডগুলো সুচিন্তিত পরিকল্পনায় তৈরী হয়েছে। বড়ই পরিতাপের বিষয় এই যে, তারপরেও অনেক বিবর্তবাদী অক্লান্ত পরিশ্যম করে যাচ্ছেন বিবর্তনবাদকে প্রতিষ্টা করতে।

মানুষের শরীরের ডি এন এর সংখ্যা কত?

সূধী পাঠক,এক একটি প্রণীকোষ প্রাণীদেহের এক একটি স্বতন্ত্র একক; এক জাতীয় প্রতিটি কোষ একই বিন্যাসে বিণ্যস্ত। বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে বিভিন্ন কোষ সু সমন্বিতভাবে বিভিন্ন কাজ করে। বিজ্ঞানের কাছ থেকে আমরা জানি প্রতিটি প্রাণী এক একটি ক্ষুদ্র ভ্রূণ কোষ থেকে এত সুন্দর দৃষ্টি নন্দন হয়ে গড়ে উঠে; আর এই গড়ে তোলার প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে সেই ভ্রূণ কোষটির মধ্যস্থিত ডি এন এ। অর্থাৎ প্রতিটি প্রাণীর ভ্রূণস্থিত সুনির্দিষ্ট কয়েটি ডি এন এ মিলে এই সূঠাম সুন্দর দেহটি গড়ে তোলে। তা হলে প্রশ্ন উঠে,কোষস্থিত ডি এন এ ক’টি? জটলি প্রশ্ন!

সূধী পাঠক, এর জবাব আজও রহস্যে ঘেরা। বিজ্ঞান এই জটীল বিন্যাষের খুব সামান্যই জেনেছে। যতদূর জেনেছে তাতে হিসেবটি অত্যান্ত সহজ। আসুন আমরাও চেষ্টা করে দেখি কিছুটা আন্দাজ করতে পারি কিনা। ডি এন এর হিসেব করতে হলে আমাদেরকে প্রথমেই বুঝতে হবে প্রাণী কোষের কোন স্থানে ডি এন এর অবস্থান। আমরা বিজ্ঞানের কাছেই জেনেছি একটি প্রাণী কোষের মৌলিক উপাদান হল তার কোষ প্রাচীরের অভ্যন্তরে সইটোপ্লসম ও তার মধ্যে ভাসমান পরিচালনা কেন্দ্র নিউক্লিয়াস। এই নিউক্লিয়াসটির গড়ণ বেশ জটীল; তার প্রধান উপাদান হল ক্রোমোসম; মনে করা হয়ে থাকে এই ক্রোমোসমের সংখ্য ও তন্মধ্যস্থ জিন সংখ্যার দ্বারাই প্রজাতি নিরূপিত হয়। তবে একই সংখ্যায় ক্রেমোসম সমৃদ্ধ বিভিন্ন প্রাণীও রয়েছে, তবে তাদের জিন সংখ্যা সমান নয়। প্রজাতি ভেদে ক্রেমোসম সংখ্যা দুই হতে ১৬০০ পর্যোন্ত হতে পারে; সাধারনত ক্রোমোসমের দৈর্ঘ ৩.৫ থেকে ৩০ মাইক্রন, প্রস্থ ০.২-২.০ মাইক্রন পর্যোন্ত হতে পারে। দৈর্ঘ-প্রস্থ উভয়েই আবার কম বেশীও হতে পারে। বিজ্ঞান এ পর্যোন্ত সামান্য কিছু প্রাণীর ক্রোমোসম সংখ্যা হিসেব করতে পেরেছে। তবে ক্রোমোসমের গঠন প্রনালী বড়ই চমৎকার, এর দেহে রয়েছে ক্রোমোনেমা বা ক্রোমাটিড যা সূতাকৃতি ও লম্বালম্বি ভাবে থাকে; এক বা একাদিক ক্রোমানেমা বা ক্রোমাটিড দিয়ে গঠিত হয় এক এটি ক্রোমোসম। ক্রোমোসমের স্বভাবিক গড়ণের মধ্যে কোথাও কুঞ্চন পরিলক্ষিত হয়।এই কুঞ্চনকে সেন্ট্রোমিয়ার বলে। কখনো কখনো সেকেণ্ডারী কুঞ্চনও দেখাযায়। সম্ভবত এই কুঞ্চিত অঞ্চলে ডি এন এ অণু কুণ্ডলিত থাকে। আমরা জানি মানুষের ক্রোমোসম দ্বি-সূত্রক; আর প্রতিটি সূতার মধ্যে একটি করে ক্রোমোসম থাকে; মানুষের দেহ কোষে ২৩ জোড়া অর্থাৎ ৪৬ টি ক্রোমোসম রয়েছে; প্রতিটি ক্রোমোসমে দু’টি সূতা থাকায় মোট সূতার সংখ্যা ৯২ টি ফলে মোট ডি এন এ সংখ্যা কম করে হলেও ৯২ টি। তবে বিজ্ঞান বলছে এই সংখ্যা এখানেই স্থির নয়;কারণ বিজ্ঞান আরেকটি অবস্থানে ডি এন এ অনু খুঁজে পেয়েছে যার নাম মইটোকন্ড্রিয়া। এক একটি মাইটোকন্ড্রিয়ায় নুনতম একটি করে ডি এন এ থাকে। এখন প্রশ্ন হল এই মাটোকন্ড্রিয়ার অবস্থান কোথায়। দেহ কোষের স্রষ্টার এও এক রহস্যময় ব্যবস্থা। আমরা জানি ডি এন এই হচ্ছে প্রাণী দেহ গড়ে উঠার মৌলিক নিয়ন্ত্রক। দেহ গঠণের সকল কলাকৌশল ও প্রাণীর বহমান বংশ ধারা ও একটা সজীব প্রাণীর জীবন ব্যাবস্থা সবই লিখা থাকে ডি এন এর পাতায়। এই ডি এন এ গুলোর সুরক্ষিত অবস্থান হল ক্রোমোসম। তবে মাইটো কন্ড্রিয়ায় ডিন এ কেন? কি তার কাজ, এগুলো আমরা ভিন্ন পরিসরে জানবো। তবে এই মাইটোকন্ড্রিয়ার অবস্থান কিন্তু নিউক্লিয়াসে নয়, সইটো প্লাজমে; আবার সব কোষেও মাইটোকন্ড্রিয়া থাকেনা; তবে মাইটোকন্ড্রিয়ার ডি এন এ ক্রোমোসমের ডি এন এর মত হবহু এক নয়। বিশেষ করে যে সকল কোষ পরিশ্রমের কাজ করে অর্থাৎ বেশী শক্তির জোগান দিতে হয় তাদের মধ্যে সাইটোপ্লজমে মাইটোকন্ড্রিয়া থাকে,যেমন পেশী কলার কোষ। মাইটোকনড্রিয়ায় অল্প সংখ্যক ডি এ এ থাকে। এই ডি এন এ তে জিন সংখ্যা সাধারন্তঃ ৩৭ টি হয়; এর মধ্যে ১৩ টি কাজ করে প্রোটিণ তৈরীতে আর বাকিগুলো কাজ করে ট্রান্সফার আর এন এ ও রাইবোসোমাল আর এন এ তৈরীতে। ফলে কোষস্থিত মোট ডি এন এর হিসেব বেশ জটীল। তবে সাধারন কোষে অন্ততপক্ষে ৯২ টি ও জনন কোষে তার অর্ধেক অর্থাৎ ৪৬ টি ডি এন এ থাকে।

এক একটি কোষের ডি এন এ তে কম করে হলেও 6,000,000,000 গিুলো ক্ষারক জোড় থাকে। বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন যে, এই জোড় গুলোকে যদি পর পর সাজানো যায় তবে চাঁদের দূরত্বের অর্ধেক পথ হয়ে দাঁড়াবে। একটি মানব দেহে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন কোষ থাকতে পারে, তখন এই দূরত্বটা কতটুকু হবে একবার ভেবে দেখুন।

জিন হল প্রাণীর বংশ রক্ষার কর্যোকর একক; একাদিক জিন একত্রিত হয়ে ডি এন এ তৈরী করে এবং জীবদেহের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রোটিন তৈরী করে। মানব দেহের জিন গুলো বিভিন্ন দৈর্ঘের হয়ে থাকে; আর তা নির্ভর করে তাদের মধ্যে ক্ষরক জোড়ের সংখ্যার উপর। ক্ষারক জোড়ের সংখ্যা কয়েকশ’ থেকে ২ মিলিয়ন পর্যোন্ত হতে পারে। প্রতিটি মানুষ প্রতিটি জিনের দুইটি করে কপি ধারণ করে , এক সেট তার মাতৃ জিন ও অপর সেট তার পিতৃ জিন। সকল মানুষের মধ্যে অধিকাংম জিনই এক রকম তবে সামান্য সংখ্যক (মোট জিনের প্রায় ১%) জিন ভিন্নরূপ হয়ে থাকে। এই পার্থক্যই মানুষের দৈহিক কাঠামোতে ভিন্নতা এনেছে।

আমরা এই আলোচনা থেকে একটা বিষয় পরিস্কার বুঝতে পারলাম যে,মাতৃ ডিম্বাণু আর পিতৃ শুক্রাণুর সম্মিলনে উৎপন্ন হয় বংশধরের ভ্রূণ; অর্থাৎ দুইটি অর্ধ কোষ মিলিত হয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ দহ কোষ উৎপন্ন হয়।আর এই কোষে বিদ্যমান থাকে মা ও বাবার বৈশিষ্ট। লক্ষ্য করুন একটি মাত্র কোষ বহুবিভাজনের মাধ্যামে তৈরী করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রাণী দেহ, যার মধ্যে থাকে নানা অঙ্গ পত্যঙ্গ। বিভিন্ন অঙ্গ তৈরী হয় বিভিন্ন কোষদ্বারা এবং তাদের কর্যোপ্রণালীও ভিন্ন। এখন প্রশ্ন হল কিভাবে গড়ে উঠে একটি পূর্ণঙ্গ দেহ? কোন রকম বিশৃঙ্খলা ছাড়াই এত সুন্দর দেহটি তৈরী নিয়ে আজকের বিজ্ঞানও খুব স্বচ্ছ ধারনা দিতে পারছেনা; বলছে, প্রকৃত পক্ষেএ এক বিশ্বয়কর ব্যপার।তবে পরীক্ষা নীরিক্ষায় যতটুকু বুঝা যায় তাতে এই সুষম গঠন প্রণালী কোষস্থিত ডি এন এর মধেই লেখা থাকে অর্থৎ জন্মাবার কালে ভ্রূণটির ৪৬ টি ক্রোমোসমের মধ্যে অবস্থিত ৯২ টি ডি এন এর মধ্যে লিখা থাকে। আর এই ৯২ টি ডি এন এ’র মধ্যে থাকে বেশকিছু জিন যা নিয়ন্ত্রন করে বংশ ধারা। আর এই জিনগুলোর মধ্যে থাকে লক্ষ লক্ষ ক্ষারক জোড় যারা নির্দেশনা মত কাজ করে গড়ে তোলে একটি সুঠাম দ্হে। কোন সুস্থ মস্তিস্ক কি ভাবতে পারে যে প্রকৃতিতে আপনা আপনি গড়ে উঠতে পারে এমন ব্যবস্থা।

সূধী পাঠক,বিজ্ঞান বলছে প্রাণী কোষের এই জিনই মানুষের বংশধার রক্ষা করে; অর্থাৎ কালের পরিবর্তনে মানুষের সন্তান মানুষ হয়েই জন্মাবে; অনুরূপভাবে সকল প্রাণী স্বকীয়তা বজায় রেখে তার বংশধর তৈরী করে। আমরা দেখেছি প্রতিটি জনন কোষে ২৩ টি করে ক্রোমোসম থাকে; উভয় জনন কোষের ক্রোমোসোমগুলে জোড় বেঁধে ২৩ জোড়া হয়। বিষ্ময়কর ব্যপার হল জোড় বাঁধার সময় কে তাদেরকে সমজাতীয়দের মধ্যে পরিচয় করিয়ে দেয়? শুধু তাই নয় পিতৃ মাতৃ বৈশিষ্ট গুলো সঠিকভাবে ধরে রাখে আবার মিলিত বৈশিষ্টের পরিস্ফূটন ঘটায়। আবার এও দেখা যায় যে এই ক্রোমোসমগুলো পূর্বপুরুষের বৈশিষ্টগুলো পর্যোন্ত ধারণ করে রাখে। তবে কতদূর ধারন করতে পারে তা পরিস্কার ভাবে বলা যায়না। আমরা ধরে নিলাম ভ্রূণ কোষটিতে ডি এন এ গুলো না হয় অক্ষুন্ন অবস্থায় পাশাপাশি থাকে কিন্তু এই কোষটি যেখন বিভাজিত হয়ে নতুন কোষ উৎপন্ন করে তখন ডি এন এ গুলো ভাঙাগড়ার সময়ে কে তাদের সঠিক সংযুক্তি গুলি নিয়ন্ত্রন করে, কারণ সেখানেতো রয়েছে মাত্র চারটি ক্ষারক;ভাঙা গড়ার মধ্যে তাদের সমন্বয়টি কি ভাবেই বা রক্ষিত হয়। বিজ্ঞানের সামনে এ এক বিরাট ছ্যালেঞ্জ। মহান স্রষ্টা এই রহস্য কবে ও কি ভাবে আমাদেরকে জানাবেন তা তিঁনিই জানেন। সম্ভবতঃ কোষের মধ্যস্থিত সমন্বযকে লক্ষ্য করেই মহা আল্লাহ বলেছেন,

৮২:৭ যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুবিন্যস্ত করেছেন এবং সুষম করেছেন। সূরা আল ইনফিতার

সূধী পাঠক একবার ভেবে দেখুন এই রহস্যময়তা কি আমাদের জন্যে নিদর্শণ নয়? নিদর্শণ কি আকাশ ভেঙে আসবে, নাকি ধ্বংসের মধ্য দিয়ে আসবে? কালের প্রবাহে প্রতি নিয়তই নিদর্শণ আসছে, আমরা শুধু খঁজে বের করা ও তাকিয়ে দেখার অপেক্ষা।

সেজন্যেই মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে সূরা হা’মীম এর ৫৩ নং আয়াতে বলছেন,

سَنُرِيهِمْ آيَاتِنَا فِي الْآفَاقِ وَفِي أَنفُسِهِمْ حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُ الْحَقُّ أَوَلَمْ يَكْفِ بِرَبِّكَ أَنَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ

৪১:৫৩ এখন আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী প্রদর্শন করাব দৃষ্টি সীমানার মধ্যে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে; ফলে তাদের কাছে ফুটে উঠবে যে, উহাই সত্য। এটা কি যথেষ্ট নয় যে,আপনার পালনকর্তা সর্ববিষয়ের সাক্ষী?

সূধী পাঠক আমরা কি সেই নিদর্শণ একনও দেকতে পাইনি?

আবদুল আজিজ খন্দকার।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান