Tag Archives: scienceinquran

বাসমালাহর অলৌকিকতা – The miracle in `Basmalah’ – পর্ব ১

সূধী পাঠক,পবিত্র কোরআনের প্রথম আয়াত যাকে সংক্ষেপে ‘বিসমিল্লাহ্ বা বাসমালাহ’  বলা হয়, মহান আল্লাহ্র এক অপূর্ব রচনা। অতি সাধারণ একটি আয়াত, যেখানে তাঁর নামের সাথে অতি সহজ দু’টি বিশেষণ যোগ করা হয়েছে। এখানে চারটি আরবী শব্দের সমন্বংয় ঘটানে হয়েছে।এই ছোট্ট আয়াতটি বলাচলে শুধুমাত্র এই আয়াতটিই পবিত্র কোরআনের অলৌকিকতার শিরোমণি হতে পারে; সম্ভবতঃ তাই নইলে মহান আল্লাহ কেন এই আয়াতটি পবিত্র কোরআনের শীরে বসিয়ে রেখেছেন! যাই হোক আমরা একে একে দেখি কিভাবে এই আয়াত শীরমণি হতে পারে!

আমরা জানি পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহ্ এক বিষ্ময়কর সজ্জায় সাজিয়েছেন, সেখানে রয়েছে নানা ঐতিহাসিক ঘটনা, সৃষ্টি কৌশলে নানা বৈজ্ঞানীক ধারণা, রয়েছে মহাজাগতি সৃষ্টির পরিচয়,আরও রয়েছে একজন মানুষকে সঠিক পথে চলার দিক নির্দেশণা। এই সকল বিষয়কে মহান আল্লাহ্ তাঁর এই রচনাবলীকে সাজিয়েছেন এক অলৌক বিন্নাশে। সেই ধারাবাহিকতায় বাসমালাহ্ স্থান পেয়েছে পবিত্র কোরআনে আয়াত সজ্জার প্রথম স্থানে। এই সজ্জায় মহান আল্লাহএকে দিয়েছেন এক বিষ্ময়কর গাণিতিক সমন্বয়। আমরা এও জানি যে, পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ এক সুকঠিণ গাণিতিক বুহ্য তৈরী করেছেন যা সহজেই দেো যায় ও  হিসেব করা যায় কিন্তু ভেঙে ভিতরে প্রবশ করা যায়না। এই সমন্বয় শুধু মাত্র ‌বাসমালা’র মধ্যেই  নয় বলতে গেলে পবিত্র কোরআনের প্রতিটি হরফের মধেই রয়েছে, আরা সে কারণেই কোন পণ্ডিত বা গুণী ব্যাক্তির পক্ষে পবিত্র কোরআনের একটি হরফও পরিবর্তন বা পরিবর্ধন সম্বব হয়নি এবং হবেওনা কোন দিন। আমরা এ পর্যায়ে বাসমালাহ্’র মধ্যে এই সমন্বয়ের কিছু নমুনা দেখি।

আমরা  লক্ষ্য করলে দেখতে পাব পবিত্র কোরআনে বাসমালাহ্র  ব্যবহারিক অবস্থান বড় বিষ্ময়কর; কোতাওবা আয়াত রূপে কোওবা অলঙ্কারিক ভাবে। সম্পূর্ণ আয়াত হিসেবে একমাত্র সূরা ফাতিহায় ব্যবহৃত হয়েছে আর স্থান পেয়েছে পবিত্র কেরআনের শিরস্থানে। এ ছাড়া আর কেথাও স্বযং সম্পূর্ণ আয়াত রূপে বসেনি; এ ছাড়া প্রায় প্রতিটা সূরার উপরেই অলঙ্কারিক ভাবে বসেছে কিন্তু ৯ নং সূরা তওবার উপরে কোন অলঙ্কারিক অবস্থান নেই। এই না থাকাটা নিয়ে কোরআন গবেষকগণ তেরটি শতাব্দী ধরে নানা জল্পনা কল্পনা করেছেন, অনেকে অনেকে মন্তব্য করেছেন, কিন্তু প্রকৃত কারণ কেউ যুক্তি দিয়ে বুঝাতে পারেননি; আবার অনেকে এটিকে মহান আল্লাহর গোপন বিষয় বলে বলে থাকেন; অবশ্য মহান আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে তাঁর নবীকে জানিয়েছেন যে, গোপন বিষয় যা কিছু আছ তিঁনি তা পবিত্র কোআনে জানিয়ে দিয়েছেন। তাহলে বিষয়টা দাঁড়াল এই যে, আমাদেরকে তা পবিত্র কোরআন থেকে খুঁজে নিতে হবে; এমনই এক ধারণার বশবর্তী হয়ে মানুষ বহুকাল আগে থেকেই সেই গোপনীয়তার অন্বেষণে গবেষণা শরু করেছে; অবশেষে বিংশশতাব্দীর শেষের দিকে এসে মহান আল্লাহ যখন তাঁর পবিত্র গ্রন্থের প্রতিরক্ষা কোড মানুষের জ্ঞানের সীমানায় এনে দিলেন তখন গবেষণার মাধামে খুঁজে পাওয়া গেল সেই হারানো বা খুঁজে নাপাওয়া বাসমালাকে। শুধু তাই নয় দেখাগেল এই বাসমালাটি আমাদেরকে চিন্তিত করে তোলার জন্যে হারিয়ে যায়নি, এটি পবিত্র কোরআনে প্রতিরক্ষা বুহ্যের এক শক্ত খুটি।  আমরা ক্রমে ক্রমে দেখবো এই খুঁটি কিভাবে প্রতিরক্ষার কাজে নিয়োজিত।  এটি পবিত্র কোরআনের গাণিতিক সমন্বয়ে এর প্রকট ভূমিকা রয়েছে যার ফলে পবিত্র কোরআনের কিছু ঐতিহাসিক বিতর্কের যৌক্তিক সমাধান দিয়েছে।

আমরা ক্রমান্বয়ে দেখবো কিভাবে হারানো বাসমালাহ তার লুকানো অবস্থানে থেকে পবিত্র কোরআনের অলৌকিকতা প্রমানে সহযোগিতা করেছে। আমরা জানি বাসমালাহ এর মধ্যে ১৯ হরফ রয়েছে এবং সূরা তওবা ছাড়া সকল সূরার প্রারম্ভে নম্বর বিহীন ভাবে ১১২ স্থানে সমেত মোট ব্যাবহৃত ১১৩ বার । আমরা ধরে নিতে পারি ১৯ বিত্তিক কোরানিক কোড এই বাসমালার উপর ভিত্তি করে পবিত্র কোরআনকে দিয়েছে বিষ্ময়কর সুরক্ষা। সূরা তওবায় এটি না  থাকায় ১১৪টি সূরার মধ্যে ১১৩ স্থানে দেখা যায়।

১. সূরা নমলের দ্বিতীয় বাসমালাহ্ হিসেবে আনলে বাসমালাহ্র’ সংখ্যা দাড়াঁয় ১১৪ যা কোরআন কোড ১৯ দিয়ে বিভাজ্য।       ১১৪=১৯ X ৬

২. ৯ নং সূরা তওবা যেখানে বাসমালা অনপুস্থিত থেকে ২৭ নং সূরা নমল (যেখানে দ্বিত্ব বাসমালা রয়েছে) পর্যোন্ত মোট সূরা সংখ্যা ১৯ টি।

৩.  ৯ নং সূরা তওবা তেকে ২৭ নং সূরা নমল পযেৃান্ত সূরা সংখ্যাগুলো যোগ করলে যে সংখ্যা পাওয়া যায় তা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।

9+10+11+12+13…… ….+25+26+27 =342,

৯+১০+১১+১২+১৩+১৪+……….+২৬+২৭=৩৪২;   ৩৪২=১৯ X ১৮;

সূধী পাঠক, হয়তোবা বলতে পারেন যে ৩৪২ সংখ্যাটি ১৯ দ্বার বিভাজ্যতার মধ্যে কোন অলৌকিকতা নেই,কারন এটি একটি গাণিতিক প্রক্রিয়া; অর্থাৎ যে কোন ১৯টি ক্রম সংখ্যার যোগফল ১৯ দ্বার বিভাজ্য হয়,এখন প্রশ্ন হল তাহলে মহান  আল্লাহ্ হারানো বাসমালাহ্ ও দ্বিত্ব বাসমালাহর এই অবস্থান কেন দিলেন এই অবস্থান পবিত্র কোরআনের যে কোন স্থানেই হতে পারতো। আমরা স্রষ্টা নই, আমরা সৃষ্টি; কিন্তু মহান স্রষ্টা সর্বজ্ঞ, তাঁর সৃষ্টিতে কোন ত্রুটি নেই; সবকিছুর পিছনেই সঠিক হিসেব রয়েছে। আমরা জানি দ্বিত্ব বাসমালাহ্ টি রয়েছে সূরা নমলে ৩০ নং আয়াতে। অতএব হিসেব করলে দেখাযাচ্ছে সূরা নমলে প্রথম বাসমালাহ্ সহ দ্বিতীয় বাসমালাহ্ পর্যোন্ত মোট শব্দ সংখ্যা ৩৪২ টি যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। বিষয়টা কি অলৌকিকতার দাবী রাখেনা?

৪. ২৭ নং সূরার সূরা সংখ্যা ও দ্বিতীয় বাসমালাহ্ সম্পৃক্ত আয়াত সংখ্যার যোগফল ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।

২৭+৩০=৫৭= ১৯ X ৩;

৫.পবিত্র কোরআনে কোরআনিক কোড ১৯ সংখ্যাটির উল্লেখ সূরা মুদাছ্ছির এর ৩০ নং আয়াতে।

৭. সূরা তওবার শুরু থেকে সূরা নমলের ৩০ নং আয়াত পর্যোন্ত আয়াতগুলোর মধ্যে ‘আল্লাহ্’ শব্দটি উল্যেখ আছে এমন আয়াত সংখ্যঅ ৫১৩টি যা ১৯ দিয়ে বিভাজ্য।

৫১৩=১৯ X ২৭;

লক্ষ্য করে দেখুন ভাগফলটি আরেক চমক, সূরা নমলের সূরা সংখ্যা যেখানে রয়েছে হারানো বাসমালাহ্ টি। (হারানো বাসমালা নিয়ে আমরা কিছু বিষ্ময়কর সমন্ব দেখবো পরবর্তী প্রবন্ধে )

সূধী পাঠক, একটা ছোট্ট আয়াত, মাত্র চারটি শব্দ; স্বাভাবিক কারণেই মনে ধারণা জন্মাতে পারে, এর মধ্যে আর কি মাহাত্ম থাকতে পারে! মানুষের কৌতুহলের যেমন শেষ নে্ই তেমনি মহান আল্লাহর বর্ণিত বিষয়ে জানারও শেষ নেই। যে চারটি শব্দকে মহান আল্লাহ তাঁর পবিত্র গ্রন্থের শিরে বসিয়েছেন তার রহস্য কি এত অল্পতেই শেষ হতে পারে! আসুন, আমরা এবার দেখি এই চারটি শব্দের অক্ষরগুলোর বিণ্যাসে কি সমন্বয়তা রয়েছে।

بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

এখানে চারটি শব্দের মধ্যে প্রথমটি ছাড়া বাকী তিনটি শব্দ মহান আল্লাহর নাম আর প্রথমটি এই নামগুলোকে নির্দেশ করার জন্যে বসেছে। লক্ষ্য করুন, এই নির্দেশিকা জ্ঞাপনকারী শব্দটি না থাকলেও মহান আল্লাহর  নাম তিনটি কিন্তু সুপ্রকাশ্য; তথাপি তিঁনি এই শব্দটিকে এখানে জুঁড়ে দিয়েছেন; নিশ্চই কৌতুহল জাগে, কেন এমনটা করলেন! তার সামান্য কারণ আমরা ইতিমধ্যে জেনে গেছি যে, বাসমালাহ’র  মধ্যে ১৯ টি অক্ষর আছে, আর এই সংখ্যা পবিত্র কোরাআনের ভিত্তি কোড। বাসমালাহর মর্মবাণী  হল ‘শরু করছি আল্লাহর নামে যিঁনি করুণাময় ও দয়ালূ। বিষয়টাকে নিজের মত করে বললে দাঁড়ায় ‘করুণাময় আল্লাহর  নামে শুরু করছি যিঁনি অতি দয়ালু; অর্থাৎ শব্দের স্থান পরিবর্তন করে বলা হয়েছে মাত্র। এতে ভাবার্তের এমন কোন পরিবর্তন আসেনি। আমরা ধীরে ধীরে দেখব এই পরিবর্র্তন যদি আরবী শব্দের মধ্যে আনা হয় তবে কোন সমস্যা হয় কি না। ব্যাকরণিক সমস্যা বাদ দিলে ভাবধারায় এমন কোন পরিবতর্নন দেখা যায়না। এখানে বলা যায় যে,পড়ার ছন্দ ঠিক রাখা ছাড়া আল্লাহ শব্দটিকে অপর দু’টি শব্দের পরে বসালে তাৎপর্যে তেমন কোন পরিবর্তন হয়না।

সূধী পাঠক, সমাস্যা না হলেও আমরা শেচ্চাচারী হয়ে এমন কোন পরিবর্তন করতে পারিনা, তার কারণ, পবিত্র এই আয়াতটির গাণিতিক সমন্বয় সম্পূর্ণ ভেঙে পরবে, আসুন,আমরা দেখি সেই সমন্বয় কি! আমরা এখন বাসমালাহ্’র চারটি শব্দের গঠণ কাঠামো দেখি,

১. প্রথম শব্দ       بِسْمِ এর মধ্যে রয়েছে  ৩টি অক্ষর,

২. দ্বিতীয় শব্দ    اللّهِ   এর মদ্যে রয়েছে  ৪ টি অক্ষর,

৩. তৃতীয শব্দে   الرَّحْمـَنِ  এর মধ্যে রয়েছে ৬ টি অক্ষর,

৪. চতুর্থ শব্দে    الرَّحِيمِ  এর মধ্যে রয়েছে ৬টি অক্ষর।

মোট ১৯ টি অক্সর; এখন প্রতিটা শব্দের অক্ষর সংখ্যাগুলোকে আরবী রীতিতে বসালে আমরা যে সংখ্যাটি পাই তা ৭ দিয়ে বিভাজ্য।

৬৬৪৩ = ৯৪৯ X ৭

লক্ষ করলে দেখা যাবে যে, শব্দের অবস্থান পরিবর্তন করলে এই বিভাজ্যতা ঠিক থাকবেনা, ভেঙে যাবে গানিতিক সমন্বয়। কোন তার্কিক বন্ধু হয়তো বলতেও পারেন যে, একই অক্ষর সংখ্যার অন্য কোন শব্দ বসিয়ে এই সমন্বয় রক্ষা করা যায়।  কিন্তু না! মহান প্রভু সে সুযুগ রাখেননি এমনটা যেন না হতে পারে সে ব্যবস্থাও তিনি করে রেখেছেন। এই শব্দগুলোর সাথে বিভিন্ন সূরা ও আয়াতের এমন সব সমন্বয় রয়েছে যা দেখলে বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে যেতে হয়; আসুন আমরা তার কিছু নমুনা দেখতে প্রথমে শব্দগুলোর অভ্যান্তরীণ সম্পর্ক দেখি;

১. বাসমালাহ র মধ্যে আল্লাহ্ শব্দের অক্ষর গুলোর ব্যবহার-

আল্লাহ্ শব্দের অক্ষরগুলো এমনভাবে বসিয়েছেন যে পবিত্র কোরআনের অলৌকিকতা প্রমাণের এক সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা। আমরা জানি আল্লাহ্ শব্দের মধ্যে মৌলিক ৩ টি অক্ষর, একটি অক্ষরের দ্বিত্বতার কারণে শব্দটিতে ৪ অক্ষর (আলিফ, লাম,লাম,হা)  রয়েছে।

বাসমালাহর  ১ম শব্দে আল্লাহ শব্দের কোন অক্ষর নে অর্থাৎ ০ টি

বাসমালহর ২য় শব্ধে —   —   — অক্ষর রয়েছে              ৪ টি

—  —      ৩ য় —                 —–  —                 ২ টি

—  —     ৪ র্থ শব্দে  রয়েছে                                 ২ টি

আরবী রীতিতে অঙ্কগুলোকে সাজালে যে সংখ্যাটি পাওয়া যায় তা ৭ দিয়ে বিভাজ্য।

২২৪০ = ৭ X ৩২০

আমরা এ পর্যোন্ত  দুটি শব্দের সমন্বয় দেখলাম,সেখানে আমরা অঙ্কগুলো আরবী রীতিতে বসিয়েছি, এবার আমরা অবশিষ্ট শব্দ দু’টির সমন্বয় হিসেব করবো তন্মধ্যে  ৩য় শব্দটির অক্ষর সংখ্যাগুলো ঠিক উল্টো রীতিতে সাজিয়ে হিসেব করতে হবে। আররাহমান শব্দটিতে মোট ৬টি অক্ষর রয়েছে আমরা এখন দেখবো বাসমালহর মধ্যে এই অক্ষর গুলো কতবার করে রয়েছে;

১ম  শব্দে আররাহমান শব্দের অক্ষর রয়েছে ১ টি

২য়  শব্দে —                                ৩ টি

৩য় শব্দে —                                 ৬ টি

৪র্থ শব্দে —                                 ৫ টি

এই অঙ্কগুলোকে আরবী রতিতে বসালে বিভাজ্যতা বিনষ্ট হয় কিন্তু উল্টো ভাবে বসালে বিভাজ্যতা রক্ষা হয়

১৩৬৫ = ১৯৫ X ৭

অনুরূপবাবে হিসেব করলে চতুর্থ শব্দটির যে ব্যবহার সংখ্যা পাওয়া যায় তাদেরকে  আরবী রীতিতে বসাতে হবে, এইভাবে বসালে যে সংখ্যাটি পাওয়া যায় তা ৭ দিয়ে বিভাজ্য।

৬৫৩১ = ৯৩৩ X৭

আরও অনেক বিষ্ময় আমাদের জন্যে অপক্ষা করে আছে, এই যেমন ১ম শব্দে মোট অক্ষর ৩ টি; আবার শেষ শব্দে মোট অক্সর ৬ টি; এই অঙ্ক দুটিকে আরবী রীতিতে বসালে হয়

৬৩= ৯ X ৭

পবিত্র কোরআন জুড়ে রয়েছে এই বিষ্ময়; আলোচ্য এই শব্দ দুটির ব্যবহার সংখ্যাও বিষ্ময়কর ভাবে সমন্বিত। যেমন, ১ম শব্দটি সমগ্র কোরআন জুড়ে মোট ২২ বার ব্যবহৃতহয়েছে, আর শেষ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১১৫ বার; এই সংখ্যা দুটি আরবী রীতিতে বসালে প্রাপ্ত সংখ্যাটি ৭ দিয়ে বিভাজ্য।

১১৫২২ = ১৬৪৬ X৭

আমরা এই সমন্বয় থেকে অনুমান করতে পারি যে, মহান আল্লাহ কোরআনে ব্যবহৃত শব্দগুলো নানা ভাবে সমন্বিত যা ক্রমশঃ আমাদের দৃষ্টিতে মহান আল্লার নিদর্শন স্বরূপ ধরা পরছে আর আমাদের মনের কুয়াশা দূরীভূত হয়ে পবিত্র কোরআনের অলৌকিকতা আমাদের চোখের সামনে পরিস্কার হয়ে উঠছে।

সূধী পাঠক, এই বিষ্ময়. এই অলৌকিকতা এখানেই সীমাবদ্ধ নয়, বাসমালার সাথে রয়েছে সমগ্র কোরআনের সংশ্লিষ্টতা। যেমন, কোরআনের প্রথম আয়াত বাসমালাহ, শেষ আয়াত সূরা নাসের শেষ আয়াত; এই দুটি আয়াতের যে নিগূঢ় সম্পর্ক রয়েছে তা দেখলেই বুঝতে পারবেন যে এ কোরআন লেখা যেমন কোন মানবীয় স্বত্ত্বার পক্ষে সম্ভব নয় তেমনি এর সজ্জা কাঠামোও মহান আল্লাহর পক্ষেই সম্ভব। আমরা দেখি কি এই সম্পর্ক;

বাসমালাহর সূরা সংখ্যা ১, আয়াত সংখ্যা ১, শব্দ সংখ্যা ৪; আবার শেষ আয়াতের সূরা সংখ্যা ১১৪, আয়াত সংখ্যা ৬, শব্দ সংখ্যা ৪; এই সংখ্যাগুলোকে আরবী রীতিতে বসালে যে সংখ্যা পাওয়া যায় তা ৭ দিয়ে বিবাজ্য;

৪৬১১৪৪১১ = ৬৫৮৭৭৭৩ X ৭

এই হিসেবের সাথে আয়াত দু’টির অক্ষর সংখ্যা বসালেও প্রাপ্ত সংখ্যাটি ৭ দিয়ে বিভাজ্য;

১৩৪৬১১৪১৯৪১১ =  ১৯২৩০২০২৭৭৩ X ৭

 

আমরা জানি পবিত্র কোরআনের প্রথম আয়াতটিতে পুনঃরাবৃতি সহ মোট ১৯ টি অক্ষর দিয়ে গঠিত; পুনরাবৃতি বাদ দিলে অক্ষর সংখ্যা দাড়াঁয় মোট ১০টি। বাসমালায় এই অক্ষরগুলোর ব্যাবহার সংখ্যা হিসেব করি,

ب  س م ا ل ه   ر ح   ـن  ي

১.  ‘বা’  ب  বসেছে ১ বার

২.  ‘সিন’ س  —  ১ বার

৩.  ‘মীম’   م       ৩ বার

৪. ‘অলিফ’  ا —    ৩ বার

৫.  ‘লাম’  ل —     ৪ বার

৬.  ‘হাঁ’ ه   —      ১ বার

৭.  ‘ রা ’ ر   —     ২ বার

৮.  ‘হা’  ح   —    ২ বার

৯.  ‘নুন’ ـن    —    ১ বার

১০. ‘ইয়া’ ي    —  ১ বার

পূনরাবৃতি বাদ দিয়ে ব্যবহার সংখ্যার ক্রম অনুসারে আরবী রীতিতে সাজালে ১০ অঙ্কের যে দানবীয় সংখাটি পাওয়া যায় তাকে ৭ দিয়ে ভাগ করলে মিলে যায়।

১১১১১২২৩৩৪ = ১৫৮৭৩১৭৬২ X ৭

এবার লক্ষ্য করুন পবিত্র কোরআনের শেষ আয়াতটি-

مِنَ الْجِنَّةِ وَ النَّاسِ

১১৪:৬ জ্বিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে।

আমরা প্রথম আয়াতটির ন্যায় এই আয়াতের অক্ষরগুলোর ব্যবহার সংখ্য হিসেব করে পুনরাবৃতি বাদ দিয়ে মানের ক্রম অনুসারে বসালে  আট অঙ্কের যে সংখ্যাটি পাওয়া যায় তা ৭ দিয়ে বিবাজ্য;

১১১১১২৩৮ = ১৫৮৭৩১৯ X ৭

লক্ষ্য করুন কি চিত্তাকর্ষক সমন্বয়, প্রথম আয়াতের মত এই আয়াতেও চারটি শব্দ, অক্ষর সংখ্যা ভিন্ন; তথাপি ৭ এর বিভাজ্যতা রক্ষা করেছে;

যেমন-   ১ ম শব্দে অক্ষর সংখ্যা  ২

২য়   —  —   —        ৫

৩য়   —   —   —       ১

৪ র্থ  —   —    —     ৫

অঙ্কগুলোকে আরবী রীতিতে সাজালে প্রাপ্ত সংখ্যাটি ৭ দিয়ে বিভাজ্য;

৫১৫২ =৭৩৬ X ৭

সূধী পাঠক, এ পর্যোন্ত যে টুকু আলোচনা করলাম, মহান আল্লাহর দেওয়া এই পবিত্র আয়াতের অলৌকিকতার একে বারেই সামান্য অংশ, আদ্যাবদি সমন্বয়ের অনেক কিছুই বাকী রয়েছে আরও গবেষণা চলছে ।

তর্কের সুবাদে হয়তো বলতে পারেন, কোন জ্ঞানী ব্যাক্তি  চেষ্টা করলে  কোননা কোন সমন্বয়তো করতেই পারেন; হাঁ ! তা পারেন, তবে এই সমন্বয় পেবিত্র কোরআনের মত হবেনা, পবিত্র কোরআনের  এই সমন্বয় চতুর্দিকে শিকর মেলে আছে, আমরা সীমিত পরিসরে যৎ সমান্যই দেখেছি, এই সমন্বয় শুধুমাত্র পবিত্র কোরআনের অলৌকিকতার প্রমানই দেয়নি, পবিত্র কোরআনের অলৌকিক সজ্জার পরিচয়ও তুলে ধরেছে। অনেক গবেষকই বলে থাকেন যে, পবিত্র কোরআনের বর্তমান রূপ বা সজ্জার কাঠামো হযরত ওসমান (রাঃ) দিয়েছেন। ওলামাগণ প্রায় সকলেই এমন ধারণা পোষণ করেন। কিন্তু আমরা উপরে বাসমালার যে গাণিতিক সমন্বয় দেখলাম তাতে কি মনে করা যায় যে, বাসমালা সহ সূরার অবস্থান, আয়াত সংখ্যা, আয়াতে শব্দ সংখ্যা সর্বোপড়ি অক্ষরের বিণ্যাস কোন মানবীয় স্বত্ত্বার পক্ষে সম্ভব? যদি বলা হয় সম্ভব, তবে কিছু প্রশ্নের অবতারনা হয়; তা হল

১. মহান আল্লাহ্, হেরার গুহায় নযিলকৃত আয়াত (৯৬:১) পবিত্র কোরআনের সর্বপ্রথম স্থান না দিয়ে বাসমালাকে কেন প্রথমে বসালেন?

২. নাযিলকৃত শেষ আয়াতটি কেন শেষে স্থান না দিয়ে সূরা নাস দিয়ে পবিত্র কোরআনের গঠণ আকৃতি পূর্ণ করা হল?

৩.পবিত্র কোরআনে বাসমালাহ কেন এত বিচিত্র ভাবে সাজানো হল?

আরও অনেক প্রশ্ন এসে ভির করে।আমরা উপরের আলোচনায় বাসমালাহ তথা পবিত্র কোরআনের প্রথম আয়াতের সাথে শেষ আয়াতের গাণিতিক সমন্বয়  দেখেছি।  নিজের চিত্তকে প্রশ্ন করে দেখুন এই বিষ্ময়কর  সম্পর্ক কি কোন মানুষ সৃষ্টি করতে পারে?

ইতিহাসবিদ ও কোরআন গবেষকগেণের অধিকাংশের মতেই সূরা মায়েদার ৩নং আয়াতটি সর্বশেষ নাযিলকৃত আয়াত; ফলে সাধারন হিসেব মতে এই আয়াতটি কোরআন কাঠামোয় সর্বশেষে স্থান পাওয়া উচিত;

حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالْدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللّهِ بِهِ وَالْمُنْخَنِقَةُ وَالْمَوْقُوذَةُ وَالْمُتَرَدِّيَةُ وَالنَّطِيحَةُ وَمَا أَكَلَ السَّبُعُ إِلاَّ مَا ذَكَّيْتُمْ وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَأَن تَسْتَقْسِمُواْ بِالأَزْلاَمِ ذَلِكُمْ فِسْقٌ الْيَوْمَ يَئِسَ الَّذِينَ كَفَرُواْ مِن دِينِكُمْ فَلاَ تَخْشَوْهُمْ وَاخْشَوْنِ الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا فَمَنِ اضْطُرَّ فِي مَخْمَصَةٍ غَيْرَ مُتَجَانِفٍ لِّإِثْمٍ فَإِنَّ اللّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

৫:৩ তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শুকরের মাংস, যেসব জন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গকৃত হয়, যা কন্ঠরোধে মারা যায়, যা আঘাত লেগে মারা যায়, যা উচ্চ স্থান থেকে পতনের ফলে মারা যা, যা শিং এর আঘাতে মারা যায় এবং যাকে হিংস্র জন্তু ভক্ষণ করেছে, কিন্তু যাকে তোমরা যবেহ করেছ। যে জন্তু যজ্ঞবেদীতে যবেহ করা হয় এবং যা ভাগ্য নির্ধারক শর দ্বারা বন্টন করা হয়। এসব গোনাহর কাজ। আজ কাফেররা তোমাদের দ্বীন থেকে নিরাশ হয়ে গেছে। অতএব তাদেরকে ভয় করো না বরং আমাকে ভয় কর। আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। অতএব যে ব্যাক্তি তীব্র ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ে; কিন্তু কোন গোনাহর প্রতি প্রবণতা না থাকে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ক্ষমাশীল।

যদি সূরা মায়েদার ৩নং আয়াতটি শেষ অবস্থানে থাকতো তাহলে কি বর্তমান সমন্বয় পাওয়া যেত। বাসমালাহর সাথে সূরা ফাতেহার সবগুলো আয়াতেরই  যে গাণিতিক নিটোল সম্পর্ক পাওয়া যাচ্ছে তা অন্য আয়াতের সাথে হবেনা তাই মহান আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনের প্রতিরক্ষা বুহ্য রচনার লক্ষেই এমনটা করেছেন; এই সজ্জা তাঁরই   পরিকল্পনায় করা ;  কোন উপায়েই এমনটা মনে করা যায়না যে এই হিসেব কোন মানবীয় স্বত্ত্বা কতৃক প্রণীত।পবিত্র কোরআনে অবতীর্ণ কথা আয়াতে সংযোজন বিয়োজন, সূরার অবস্থান,সূরায় সূরায় আয়ত সংখ্যা সবই মহান আল্লাহ্র পরিকল্পনা (প্রবন্ধ যোড়-বিজোড় দ্রষ্টব্য) মত করা হয়েছে,তাতে কোন সন্দেহ নেই। আজকের দিনে আবিষ্কৃত গাণিতিক সমন্বয় তা প্রমান করেছে। ইতিহাস যা কিছুই বলুকনা কেন এই সমন্বয় একমাত্র মহান আল্লাহ্র পক্ষেই সম্ভব।

সূধী পাঠক, আমাদের লক্ষ্য কোন বিতর্ক সৃষ্টি করা নয়, বা ইতিহাস শুদ্ধ করারও কোন পরিকল্পণা আমদের নেই; আমাদের উদ্দেশ্য শুধু মাত্র পবিত্র কোরআনের বাণী তথা কোরআনকে অলৌকিকতার শীর্ষে স্থান দেওয়া। কারণ অনেক গূণী ব্যাক্তি বলে থাকেন কোরআন বুদ্ধিমানদের সমন্বয়ে নবী মোহাম্মদ (সাঃ) রচনা করেছেন; আমরা তাই বিষয়টাকে পরিস্কার করে তুলে ধরতে চাই, ১৪০০ বছর পূর্বেকার পৃতিবীতো দূরের কথা, আজকের বিজ্ঞানীগণও পবিত্র এই আয়াত এমন গাণিতিক সমন্বয়ের মধ্যে তৈরী করতে পারবেননা। মহান আল্লাহ্ চাহেনতো আমরা পরবর্তী প্রবন্ধে হারানো বাসমালালায় যে অলৌকিকতা লুকিয়ে রয়েছে তা খুঁজে দেকবো।

 

আবদুল আজিজ

১২.১২.২০১৬